Hesperian Health Guides

টীকা অসুস্থ্যতা রোধ করে

এই অধ্যায়ে

রোধ করা না হলে মানুষকে অসুস্থ্য করে তুলতে পারে বা এমনকি মৃত্যুও ঘটাতে পারে এমন অনেক অসুস্থ্যতা রোধ করা যায় টীকার মাধ্যমে, যাকে প্রতিষেধকও বলা হয়। টীকা দেহের যে অংশ সংক্রামণ ও রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে সেই রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে যাতে দেহ সুস্বাস্থ্য ফিরে পায়। দেহের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা যদি প্রস্তুত ও শক্তিশালী থাকে এটি খুব দ্রুতই হুমকি সনাক্ত করতে পারে এবং ইতোমধ্যেই জানে কিভাবে সেগুলোর সাথে লড়াই করতে হবে। টীকা আপনার অসুস্থ্যতাগুলো হওয়ার কারণ নয়।

তিনজন বয়স্ক ব্যক্তি একটি ক্লিনিকে বাচ্চা কোলে নিয়ে বসে আছে, উপরে লেখা 'স্বাস্থ্যবান শিশু=স্বাস্থ্যবান সুখী পরিবার, আজ টীকা দিন'

টীকা কিভাবে কাজ করে? একটি টীকা তৈরী করা হয় মৃদু ক্ষমতাসম্পন্ন বা অকার্যকর জীবাণূ দ্বারা এবং এর উপস্থিতি দেহকে জানিয়ে দেয় যে ব্যক্তিকে অসুস্থ্য করে তোলার আগে ভবিষ্যতে কিভাবে একই রকমের জীবাণূ রোধ করতে হবে। অসুস্থ্যতাগুলোর বিরুদ্ধে সফলভাবে লড়াই করতে নির্দিষ্ট 'এ্যন্টিবডি' তৈরী করার মাধ্যমে দেহ এই প্রতিরক্ষা তৈরী করে। এই এ্যন্টিবডিগুলো আপনাকে এবং আপনার চারপাশে বসবাসকারী সকলকে অসুস্থ্যতা সৃষ্টিকারী জীবাণূর বিরুদ্ধে রক্ষা করে।

শিশুরা তাদের প্রয়োজনীয় কিছু এ্যন্টিবডি নিয়ে জন্মায় যা সরাসরি তারা তাদের মায়েদের কাছ থেকে পায়। মায়েরা শিশুদেরকে বুকের দুধ খাওয়ানোর ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হয়। শিশু বড় হতে থাকলে টীকা শিশুর দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গঠন করে। ঠিক যেমন পুষ্টি শিশুর দেহের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে তেমন টীকা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

প্রতিষেধক সত্যিই কাজ করে। কোন কোন অসুস্থ্যতা যেমন গুটি বসন্ত যা বিগত দিনে অনেক ব্যক্তিকেই মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে বা প্রতিবন্ধী করেছে তা এখন আর নেই, আর তাই টীকারও আর প্রয়োজন নেই। প্রতিষেধক দ্বারা নিশানা করা অন্যান্য অসুস্থ্যতাগুলোও এখন আর তেমন দেখা যায় না। সকল নবজাতক ও শিশুদের এবং সেই সাথে প্রয়োজন মতো প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিষেধক দেয়ার মাধ্যমে অনেক অসুস্থ্যতার বিস্তৃত হওয়া বা ফিরে আসা রোধ করা যায়।

বিভিন্ন টীকার নাম লেখা ছাতার নীচে একদল বয়স্ক ব্যক্তি ও শিশু। উপরে লেখা আছে: হেপাটাইটিস বি, টিউবারকুলোসিস, হাম, জার্মান হাম, হুপিং কাশি, ডিপথেরিয়া, টিটেনাস।
একতায় বল! যখন বেশীরভাগ মানুষই টীকাপ্রাপ্ত হয় তখন অসুস্থ্যতা প্রতিরোধে তাদের ক্ষমতা যারা এখনও ছোট বা এতো অসুস্থ্য যে টীকা নিতে পারছে না তাদেরকে রক্ষা করে। এটিকে বলা হয় কঠিন প্রতিষেধক।

যে ব্যক্তি টীকা নেয় তাকে টীকাটি রক্ষা করে, এবং অন্যান্যদেরকেও রক্ষা করে যখন যথেষ্ট সংখ্যক ব্যক্তি টীকা নেয়। তাই যখন কোন রোগ টীকা না নেয়া কোন ব্যক্তিকে আর খুঁজে না পায় তখন তা ছড়াতেও পারে না। সময়ের আবর্তে যত বেশী লোকের টীকা নেয়া থাকবে ততই রোগের সংখ্যা কম যাবে।

টীকা ও কেন আমাদের এগুলো প্রয়োজন সে সম্পর্কে জানুন

টীকা অনেক বিপজ্জনক রোগ থেকে শিশুদেরকে রক্ষা করে, যার মধ্যে আছে হুপিং কাশি, টিটেনাস, নিউমোনিয়া, হাম, হেপাটাইটিস বি, টিউবারকুলোসিস, এবং রোটাভাইরাসের সংক্রামণের ফলে সৃষ্ট ডায়রিয়া। এইচপিভির (এক ধরনের ভাইরাস) বিরুদ্ধে টীকা কোন কোন ক্যান্সার রোধ করে। আপনার সন্তানদের যদি টীকা দেয়া হয়ে থাকে, তবে তারা সঙ্কটজনক অসুস্থ্যতা থেকে রক্ষা পাবে।

বাচ্চাসহ একজন অল্প বয়স্ক নারী একজন বয়স্কা নারীর সাথে কথা বলছে।
আমি এখানে কারও পোলিও হবার কথা শুনি নাই।
আমি যখন ছোট ছিলাম তখন এটি একটি সঙ্কটজনক সমস্যা ছিল। এখন পোলিও আর নেই কারণ সকলকেই প্রতিষেধক দেয়া হয়। এবং সেগুলো কাজ করে!

নবজাতক এবং শিশুদের জন্য টীকা সাধারণতঃ বিনামূল্যে দেয়া হয়, এবং প্রতিটি দেশেই তা কখন দেয়া হবে তার একটি নির্দিষ্ট সময়সূচী আছে। নবজাতক ও শিশুরা ভালভাবে বেড়ে উঠছে কিনা তা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য কর্মীরা তাদেরকে পরিদর্শন করার সময়সূচী তৈরী করে, এবং তাদের সুস্বাস্থ্যে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় টীকা দেয়ার ব্যবস্থা করে।

একটি নির্দিষ্ট রোগের বিরুদ্ধে আমাদের দেহের বলশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে অনেক টীকাই একাধিক বার দিতে হতে পারে। ব্যক্তিটি প্রথম পর্যায় বা প্রথম ক্রমের একই টীকা, উদারহণস্বরূপ, ৬ মাসে ৩টি ইঞ্জেকশান নেবার পর তাকে হয়তো পরে আবারও একটি কার্যকারিতা বৃদ্ধিকারী মাত্রার টীকা নিতে হতে পারে। যখন টীকার প্রভাব শেষ হয়ে যায় তখন কার্যকারিতা বৃদ্ধিকারী মাত্রাটি কিভাবে অসুস্থ্যতার সাথে লড়াই করতে হয় তা দেহকে মনে করিয়ে দেয়।

NWTND bag question.png
টীকা দেবার সময়সূচী যখন নির্দিষ্ট করা হয়ছে সে সময়টায় আমার সন্তান অসুস্থ্য থাকলে কী হবে?
NWTND bag arrow.png
কারো ঠাণ্ডা লাগলে বা মৃদু অসুস্থ্যতা থাকলেও তাকে টীকা দেয়া যায়। যদি একজন ব্যক্তির সঙ্কটজনক স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে তবে টীকা দেয়া বিলম্বিত করতে হবে কিনা তা স্বাস্থ্য কর্মীটি পরিবারকে জানাবে। যখন পরিবারের অন্যান্যদেরকে আর এলাকার জনগণকে টীকা দেয়া হয় তখন তা যারা টীকা নিতে পারে না তাদেরকে অসুস্থ্যতার হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে।
NWTND vacc Page 3-1.png
NWTND bag question.png
টীকা কী নিরাপদ?
NWTND bag arrow.png
টীকা নিরাপদ। এগুলো অসুস্থ্যতা ছড়ায় না। কোন কোন টীকা হয়তো ব্যথা বা মৃদু জ্বরের সৃষ্ট করতে পারে, কিন্তু তা দ্রুতই চলে যাবে। আপনি যদি গুজব শোনেন যে টীকা অনিরাপদ, তবে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাবার জন্য বিশ্বস্ত স্বাস্থ্য কর্রীর সাথে কথা বলুন।
NWTND vacc Page 3-2.png
NWTND bag question.png
টীকা কী শুধুমাত্র শিশুদের জন্য?
NWTND bag arrow.png
সকল শিশুদেরই টীকা নেয়া প্রয়োজন কিন্তু টীকা নেয়ার প্রয়োজনীয়তা শিশুকাল শেষ হবার পরই শেষ হয়ে যায় না। কোন কোন অসুস্থ্যতার জন্য বড় শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের সুরক্ষিত থাকার জন্য অতিরিক্ত ইঞ্জেকশান নেবার প্রয়োজন আছে যেগুলোকে 'কার্যকারিতা বৃদ্ধিকারী মাত্রা' বলা হয়। এর কারণ হলো সময়ের আবর্তে কোন কোন টীকার কার্যকারিতা শেষ হয়ে যায়। গর্ভবতী নারীদেরকেও মা ও শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষা করতে টীকা দেয়া হয়। বয়স্ক ব্যক্তি বা সঙ্কটজনক অসুস্থ্যতাযুক্ত ব্যক্তি হয়তো টীকা নেয়ার মাধ্যমে ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো অসুস্থ্যতার বিরুদ্ধে নিজেকে রক্ষা করায় উপকার পাবে যেহেতু তাদের দেহ এরোগটিকে ভালভাবে রোধ করতে পারে না।
NWTND vacc Page 3-3.png
NWTND bag question.png
আমার প্রথম সন্তানের সময়ের তুলনায় টীকার সংখ্যা ও ধরন পরিবর্তন হয়ছে। কেন?
NWTND bag arrow.png
কোন কোন রোগের ক্ষেত্রে একাধিক ঔষধপ্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান প্রতিষেধক তৈরী করেছে যা নিরাপদ ও ভাল কাজ করে। এগুলোর হয়তো ভিন্ন ভিন্ন সময়সূচী থাকতে পারে। তাই যদি দুই দেশ ভিন্ন টীকার মার্কা ব্যবহার করে, বা একই দেশ একটি পরিবর্তন করে অন্যটি ব্যবহার করে তবে ইঞ্জেকশান নেবার সময়সূচীরও পরিবর্তন হতে পারে। অন্যান্য পরিবর্তনও দেখা যায় যখন একটি নতুন টীকা আবিষ্কার করা হয় বা পুরোনোটির আর কোন প্রয়োজনীয়তা থাকে না।
NWTND vacc Page 3-4.png



এই পাতাটি হালনাগাদ করা হয়েছে: ২৫ এপ্রিল ২০২৪