Hesperian Health Guides

চোখের ক্ষতি করতে পারে এমন অসুস্থ্যতা

এই অধ্যায়ে

সারা দেহকে ক্ষতিগ্রস্ত করা কোন কোন সংক্রামণ বা অসুস্থ্যতা চোখেরও ক্ষতি করতে পারে। যখন কারও চোখের সমস্যা থাকে তখন এর কারণটি অন্য আর একটি অসুস্থ্যতা কিনা তা বিবেচনা করা বিচক্ষণতার কাজ হবে।

যক্ষ্মা চোখকে সংক্রামিত করতে পারে এবং চোখ লাল হয়ে যেতে পারে বা জীর্ণদৃষ্টি দেখা দিতে পারে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই যক্ষ্মার চিহ্ন প্রথমে ফুসফুসে বা দেহের অন্যান্য অংশে দেখা দিতে পারে।

এইচআইভি এবং এইড্স: এআরটি নামের এইচআইভি ঔষধের চিকিৎসা দ্বারা এইচআইভিযুক্ত মানুষের চোখের সমস্যা এবং দৃষ্টিহানি হওয়া প্রতিরোধ করা যায়। পরীক্ষা করুন যাতে আপনার প্রয়োজন হলে আপনি চিকিৎসা শুরু করতে পারেন।

হারপিস (ঠাণ্ডা ঘা) মাঝেমধ্যে চোখে ছড়িয়ে বেদনাযুক্ত কর্নিয়ার আলসারের সৃষ্টি করে, দৃষ্টি ঝাপসা করে এবং এর ফলে চোখে সবসময় জল থাকে। ভাইরাসনাশক ঔষধগুলো সাহায্যকারী। স্টেরয়ড চোখের ড্রপ ব্যবহার করবেন না—এগুলো সমস্যাটিকে আরও খারাপ করে তুলবে।

যকৃতে সমস্যা: ন্যাবা, চোখের সাদা অংশটি হলুদ হয়ে যায় (বা হালকা রংয়ের ব্যক্তির ত্বক হলুদ হয়ে যায়) তখন তা হেপাটাইটিসের চিহ্ন হতে পারে ।

ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ

ডায়াবেটিসযুক্ত লোকেদের হয়তো দৃষ্টির সমস্যা হতে পারে। রোগটি অগ্রসর হতে থাকলে, ডায়াবেটিস তাদের চোখের ক্ষতি করতে পারে (এটি একটি সঙ্কটাপূর্ণ অবস্থা যাকে ডায়াবেটিসজনিত রেটিনাক্ষয় বলা হয়)। চিকিৎসা না করালে অন্ধত্ব দেখা দিতে পারে। ঝাপসা দৃষ্টি হয়তো রক্তে চিনির মাত্রা বেশী নির্দেশ করার প্রাথমিক লক্ষণ এবং ব্যক্তিটির হয়তো ডায়বেটিস থাকতে পারে। যদি ঝাপসা দৃষ্টিযুক্ত কেউ খুবই তৃষ্ণার্তও হয় এবং যথেষ্ট পরিমাণে মুত্রত্যাগ না করে, তবে তাদের ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা বেশী। স্বল্পমূলের পরীক্ষা তাদেরকে নিশ্চিতভাবে জানতে সাহায্য করবে।

ডায়াবেটিসযুক্ত ব্যক্তিদেরকে তাদের রক্তে চিনির মাত্রা কমিয়ে আনার জন্য চিকিৎসা পেতে সাহায্য করুন এবং ডায়াবেটিস থেকে সৃষ্টি ক্ষতির পরীক্ষা করতে তাদেরকে বছরে অন্তত একবার চোখের ডাক্তার দেখাতে উৎসাহিত করুন। শুরুতেই যদি পাওয়া যায় তবে ডায়াবেটিস থেকে সৃষ্ট চোখের সমস্যা চিকিৎসা করা যায়।

উচ্চ রক্তচাপ চোখের ভিতরে রক্তনালীগুলোকে নষ্ট করে চোখ ও দৃষ্টির ক্ষতি করতে পারে। স্বাস্থ্য পরিচর্যার পরীক্ষা করার সময় রক্তচাপ অতিরিক্ত উঁচু কিনা তা জানার সবথেকে ভাল উপায় হচ্ছে তা পরীক্ষা করা। উচ্চ রক্তচাপ রোধ ও এর চিকিৎসা করলে চোখ রক্ষা করতে সাহায্য হবে।

রিভার ব্লাইণ্ডনেস (অঙ্কোসারসিয়াসিস)

এই কালো মাছিটির পিঠে এটির মতো একটি কুঁজ আছে কিন্তু আসলে এর আকার ঠিক এটির মতো ছোট।
NWTND eye Page 26-1.png
 একটি খুবই ছোট মাছির কুঁজযুক্ত পিঠ

চোখ ও ত্বকের এই রোগটি এখন তেমন সচরাচর দেখা যায় না। তবু এটি এখনও আফ্রিকার কিছু অংশে, ইয়েমেনে, আর দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন অঞ্চলের অল্প কয়েকটি দেশে দেখা যায়। রিভার ব্লাইণ্ডনেস কালো মাছি বাহিত ক্ষুদ্র কৃমির কারণে সৃষ্টি হয়। সংক্রামিত একটি মাছি যখন কোন ব্যক্তিকে কামড়ায় তখন এই কৃমি মানুষের মধ্যে প্রবেশ করে।

চিহ্ন
  • ত্বকে চুলকানি হয় আর ফুঁসকুড়ি ওঠে
  • ২ থেকে ৩ সেমি গোটা হয় যা আপনি আপনার ত্বকের নীচে অনুভব করতে পারবেন


চিকিৎসা ছাড়া ত্বক সাধারণতঃ কুচকে ও ঢিলা হয়ে যায়। সাদা দাগ এবং ছোপ হয়তো সামনে পায়ের নীচের দিকে দেখা যেতে পারে।

এই অসুস্থ্যতার কারণে চোখের সমস্যা হতে পারে এবং কখনও কখনও অন্ধত্বও দেখা দিতে পারে। প্রথমে হয়তে চোখ লাল হতে পারে এবং তা জলে ভিজা থাকতে পারে, তারপর হয়তো কনীনিকার প্রদাহের চিহ্ন দেখা দিতে পারে।

চিকিৎসা

আইভারমেকটিন নামের ঔষধ দ্বারা রিভার ব্লাইণ্ডনেসের চিকিৎসা করা হয়। যেখানে এলাকাভিত্তিক প্রচারণার অংশ হিসেবে আইভারমেকটিন প্রতি ৬মাসে বা বছরে ১ বার দেয়া হয় সেখানে কম সংখ্যক লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়ে এবং তা হয়তো ঐ অঞ্চল থেকেই অপসারিত হয়ে যাবে।

প্রতিরোধ
  • এই কালো মাছিগুলো দ্রুত-প্রবাহিত জলের মধ্যে বংশবৃদ্ধি করে। জলধারা এবং নদীর কিনার থেকে ঝোপ-ঝাড়গুলোকে কেটে পরিষ্কার করলে এদের সংখ্যা কমাতে সাহায্য করবে।
  • বাইরে ঘুমানো এড়িয়ে চলুন, বিশেষ করে দিনের বেলায় যখন মাছিরা সবথেকে বেশী কামড়ায়।
  • যে সমস্ত কার্যক্রম কালো মাছির সংখ্যা হ্রাস করার জন্য কাজ করছে এবং নতুন আক্রান্তের ঘটনার রোধ করতে যে সমস্ত স্বাস্থ্য কর্মী পুরো এলাকাতে আইভারমেকটিন বিলি করছে তাদের সাথে সহযোগিতা করুন।


প্রাথমিক অবস্থাতেই চিকিৎসা করলে অন্ধত্ব এবং এই রোগের বিস্তার রোধ করা যায়।


এই পাতাটি হালনাগাদ করা হয়েছে: ১৯ এপ্রিল ২০২৪