Hesperian Health Guides

লাল চোখ ও ব্যথাযুক্ত চোখ

এই অধ্যায়ে

 একটি চোখ ফুলে ওঠা ও বন্ধ হয়ে যাওয়া একজন নারী

বিভিন্ন সমস্যার কারণে লাল, ব্যথাযুক্ত চোখের সৃষ্টি হয়। সমস্যা কী ও সেবিষয়ে কী করা যাবে তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করার সময়, ব্যক্তিটিকে জিজ্ঞাসা করুন যে চোখে কোন আঘাত লেগেছিল কিনা বা চোখের মধ্যে কিছু গিয়েছিল বলে সে অনুভব করেছে কিনা।

লাল হওয়া ও ব্যথার ধরন সম্ভাব্য কারণ
সাধারণতঃ দু'চোখেই কিন্তু একটি চোখে শুরু হতে পারে
মৃদু জ্বালা করা
সাধারণতঃ বাইরের কিনারে সবথেকে বেশী লাল থাকে
যদি ঘন সাদা বা হলুদ কিছু বের হয় তবে তা সম্ভবত একটি ব্যাক্টেরিয়াজনিত সংক্রামণ যাকে চোখ ওঠা বলা হয়।
ট্রাকোমা
হাম শিশুদের যত্ন নেয়া
একটি বা দু'টি চোখে
লাল হওয়া ও ব্যথা হয়তো তীব্র হতে পারে
কোন ধারলো কিছু বা আঘাত লাগার ফলে চোখ জখম হওয়া

রাসায়নিক দ্রব্য লেগে পুড়ে যাওয়া বা ক্ষতিকারক তরল চোখে যাওয়া

সাধারণতঃ শুধু এক চোখে
চোখের ভিতরে রক্তক্ষরণ, কনীনিকাকে (রঙিন অংশ) ক্ষতিগ্রস্ত করে
প্রায় সময়ই জখম হবার কারণে চোখের রঙিন অংশে রক্তক্ষরণ.
এটি একটি জরুরী অবস্থা
সাধারণতঃ শুধু এক চোখে
লাল হওয়া ও ব্যথা—প্রথমে এতোটা তীব্র হয় না কিন্তু আরও খারাপ হতে পারে
চোখে ধূলিকণা যাওয়া
চোখের উপরিভাগে আঁচর
সাধারণতঃ শুধু এক চোখে
ব্যথা প্রায়ই তীব্র হয়
কনীনিকার কাছাকাছি সবথেকে বেশী লাল
কর্নিয়ায় আলসার
কনীনিকার প্রদাহ
এ্যাকিউট গ্লুকোমা
এর সবগুলোই জরুরী অবস্থা
সাধারণতঃ শুধু এক চোখে
চোখের পাতার উপর গোটা বা ফুলে ওঠাসহ লাল হয়ে যাওয়া (ব্যথা থাকতে বা নাও থাকতে পারে)
চোখের পাপড়ির চারপাশে বা চোখের পাতার নীচে সংক্রামণ
সাধারণতঃ শুধু এক চোখে
চোখের সাদা অংশের উপর উজ্জ্বল লাল ছোপ
সম্ভবত একটি

ছোট রক্তনালী ফেটে গেছে, জরুরী অবস্থা নয়

সাধারণতঃ উভয় চোখ
অস্বস্তি কিন্তু কোন ব্যথা নয়
লাল হওয়া এবং চুলকানী, ভিজা চোখ এবং হাঁচি হয়, বছরের নির্দিষ্ট কিছু ঋতুতে অবস্থা খারাপ হয়
হেয় জ্বর, একে এ্যালার্জিজনিত চোখ ওঠাও বলা হয়
সাধারণতঃ উভয় চোখ
লাল হয় কিন্তু কিছু বের হয় না এবং কোন ব্যথাও নেই
ফুঁসকুড়ি ওঠে বা জ্বর হয়
একটি ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট চোখ ওঠা।
আপনার এলাকায় জিকা ভাইরাস থাকলে লাল চোখ লক্ষণগুলোর একটি হতে পারে।


যদি লাল হওয়া দেখা যায় তবে চোখ জল জল কিনা বা কোন কিছু বের হচ্ছে কিনা (পূঁয বা রস) তা পরীক্ষা করে দেখুন:

  • ঘন রস বের হওয়া চোখ ওঠার লক্ষণ হতে পারে ('গোলাপী চোখ' বা 'লাল চোখ'), এটি একটি ব্যাক্টেরিয়াজনিত সংক্রামণ, বিশেষ করে চোখ যদি খুবই লাল থাকে।
  • জল জল চোখ, সাথে সামান্য লালচে ভাব, নাকের কাছাকাছি চোখের কোণায় চুলকানি ভাব দেখা যায়।
  • জল জল চোখ, ঠাণ্ডা লাগা বা ফ্লু হবার পর সামান্য লালচে ভাব, হয়তো কোন ভাইরাসের দ্বারা এটি হয়েছে। এর জন্য বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন নেই এবং ঔষধও সাহায্য করবে না।
  • জল জল চোখ, সাথে সামান্য লালচে ভাব এবং জ্বর, কাশি ও নাক থেকে জল ঝরে, ফুঁসকুড়ি ওঠার অনেক আগেই হামের লক্ষণ হতে পারে।

চোখ ওঠা ('গোলাপী চোখ', 'লাল চোখ')

চোখ ওঠা যে কোন সময়েই হতে পারে, কিন্তু এটি শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণতঃ সচরাচর দেখা যায়।

চিহ্ন
 চোখ লাল এবং কোণা থেকে পূঁয বের হয়
  • চোখ গোলাপী বা লাল দেখায়
  • চোখে চুলকানী হতে পারে বা জ্বালা করতে পারে
  • এক চোখে শুরু হয়ে দু'চোখেই ছড়াতে পারে
  • রাতের বেলা হয়তো পুরু রস জমে গিয়ে চোখের পাপড়িগুলোকে একসাথে লাগিয়ে দিতে পারে
চিকিৎসা

বেশীরভাগ চোখ ওঠাই একটি ভাইরাসের দ্বারা ঘটে থাকে এবং কোন বিশেষ চিকিৎসা ছাড়াই তা কয়েক দিনের মধ্যে চলে যায়।

যদি নিঃসৃত হলুদ বা সাদা বস্তু পুরু হয় তবে এর কারণ হয়তো একটি ব্যক্টেরিয়া যাকে জীবাণুনাশক চোখের মলম বা ড্রপ দ্বারা চিকিৎসা করা যায়। চোখটি ভাল মনে হলেও, চিকিৎসাটি পুরো ৭দিনের জন্যেই ব্যবহার করুন যাতে সংক্রামণটি আবার ফিরে না আসে।

চোখের জীবাণুনাশক চিকিৎসা প্রয়োগ করার আগে, ধীরে ধীরে প্রতিটি চোখ আলাদা করে ভিজা কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করুন। প্রতিটি চোখ পরিষ্কার করা ও ঔষধ লাগানোর পর ভিজা কাপড়টি পরিবর্তন করুন এবং আপনার হাত ধুয়ে ফেলুন যাতে এক চোখ থেকে অন্য চোখে, বা আপনার চোখে বা অন্যান্য ব্যক্তিদের চোখে সংক্রামণ ছড়ানো এড়াতে পারেন।

প্রতিরোধ

চোখ ওঠা খুব সহজেই একজন থেকে অন্য জনে ছড়ায়। আপনার নিজের বা অন্য ব্যক্তির চোখ স্পর্শ করার পর বার বার হাত ধুতে ভুলবেন না। চোখ ওঠা একটি শিশুকে অন্যরা ব্যবহার করবে এমন তোয়ালে বা বিছানার সামগ্রী ব্যবহার করতে দেবেন না। শিশুটিকে তার চোখ ভাল হয়ে না ওঠা পর্যন্ত অন্যান্য শিশুদের থেকে আলাদা করে রাখুন।

সদ্যজাত শিশুদের চোখ ওঠা

শিশুর চোখে সংক্রামণ বিলম্ব না করেই চিকিৎসা করা প্রয়োজন

চিহ্ন
  • লাল, ফোলা চোখ
  • চোখে পূঁয
  • চোখের পাতাগুলো একত্রে লেগে থাকে, বিশেষ করে জেগে উঠলে
 ফোলা পুরু রস বের হওয়া চোখসহ একটি শিশু

লাল, ফোলা চোখের পাতা এবং পূঁযযুক্ত একটি সদ্যজাত শিশুর হয়তো গনোরিয়া বা ক্ল্যামিডিয়ার সংক্রামণ হয়েছে যা তার জন্মের সময়ে তার মধ্যে সংক্রামিত হয়েছে। শিশুটির ২ থেকে ৪ দিন বয়সের সময়ে তার চোখ দু'টো যদি ফোলা থাকে তবে এটি খুব সম্ভবত গনোরিয়া। শিশুর চোখের ক্ষতি এড়াতে ততক্ষণাৎ এর চিকিৎসা করুন। শিশুটির ৫থেকে ১২ দিন বয়সের সময় যদি তার চোখ ফোলা থাকে তবে এটি খুব সম্ভবত ক্ল্যামিডিয়া। যৌনকর্মের সময়ে ছড়ানো এই সংক্রামণগুলো অনেক পুরুষ ও নারীদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে কিন্তু প্রায়ই এগুলো অসুস্থ্যতার কোন লক্ষণ দেখায় না। সকল গর্ভবতী নারীদেরকে এই সংক্রামণের পরীক্ষা করে চিকিৎসা করা উচিত যাতে জন্মের সময় শিশুর ‍মধ্যে এই রোগ ছড়ানো রোধ করা যায়।

চোখকে স্থায়ী ক্ষতি এবং অন্ধত্বের হাত থেকে রক্ষা করতে জীবাণুনাশক চোখের মলম ব্যবহার করুন। ঠিক কী ধরনের সংক্রামণ তাদের আছে তা জানতে শিশু ও মাকে পরীক্ষা করুন। উভয়কেই শুধুমাত্র চোখের মলম না বরং এ্যন্টিবায়োটিক দ্বারা আরো চিকিৎসা করতে হবে।

সমস্যা রোধ করতে সদ্যজাত শিশুর চোখের যত্ন
একটি নতুন তূলার সোয়াব ব্যবহার করে জন্মের পরপরই শিশুর চোখ পরিষ্কার করুন। তারপর চোখের সংক্রামণ রোধ করতে সদ্যজাত শিশুর দু'চোখেই জীবাণুনাশক চোখের মলম লাগান। ১% ট্ট্রোসাইক্লিন বা ০.৫% থেকে ১% এরিথ্রোমাইসিন মলম। প্রতিটি চোখেই মলমটি পাতলা এক সারিতে লাগিয়ে যান, একবার মাত্র। জন্মের ২ ঘন্টার মধ্যে ততক্ষণাৎ তা করুন ।

একটি শিশুর চোখে যদি সবসময় জল জল ভাব থাকে বিশেষ করে শিশুটি না কাঁদলেও তার চোখ যদি অশ্রসজল থাকে এবং তা মুখ বেয়ে নীচে পড়তে থাকে, তাহলে চোখ থেকে অশ্রু বের করে দেয়ার জন্য যে ছোট ছোট নলগুলো রয়েছে সেগুলো আটকে গেছে। এই সমস্যা প্রায় সময়েই নিজে নিজে চলে যায়, কিন্তু নলগুলো খুলে দেবার জন্য কিভাবে আপনি ধীরে ধীরে নাকের পাশে শিশুর মুখ মালিশ করবেন (ক্রিগলার বা ল্যাক্রিমাল থলির মালিশ) তা একজন স্বাস্থ্য কর্মী আপনাকে দেখিয়ে দিতে পারে।

হে জ্বর (এ্যালার্জিজাতিয় চোখ ওঠা) এবং চোখ জ্বালা করনো এ্যালার্জি

ধূলা, রেণু, বা বাতাসে থাকা অন্যান্য কণা চোখে লালচে দাগ, চুলকানি, জল জল ভাবসহ হাঁচির সৃষ্টি করতে পারে। যখন দেহ একই রকমের চিহ্ন দ্বারা এই জিনিসের বিপক্ষে প্রতিক্রিয়া করে, তখন সেগুলোকে এ্যালার্জি বলা হয়। এটি যদি বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে হয়, তবে ব্যক্তিটির হয়তে গাছ ও লতাগুল্ম থেকে নির্গত হওয়া রেণুতে এ্যালার্জি আছে (যাকে হে জ্বরও বলা হয়)। এটি যদি সব সময়ে হয়, তবে তার কারণ হতে পারে ধূলা, ছত্রাক, রাসায়নিক দ্রব্য, বা প্রাণী। এ্যালার্জি উভয় চোখেই জ্বালা ধরায়।

চিকিৎসা

আপনি যদি জানেন চোখের এই প্রতিক্রিয়ার কারণ কী, তবে সবথেকে ভাল চিকিৎসা হচ্ছে সমস্যার উৎসকে এড়িয়ে যাওয়া বা অপসরণ করা। উদাহরণস্বরূপ:

  • ঘুমানোর জায়গা এবং বিছানাপত্র ধূলামুক্ত রাখুন। যদি কোন প্রাণী এ্যালার্জির কারণ ঘটায় তবে প্রাণীটি এবং যেখানে প্রাণীটি ঘুমায় সেই জায়গা এড়িয়ে চলুন।
  • রাতে জানালা বন্ধ করে রাখুন বা ঢেকে রাখুন।
  • বাইরে কাজ করা বা হাঁটার সময় একটি ধূলার মুখোশ বা একটি কাপড় দিয়ে মুখ ও নাক ঢেকে রাখুন যাতে আপনার রেণু বা ধূলা নিঃশ্বাসের মাধ্যমে নেয়া রোধ করতে পারেন।


যেকোন কিছু যা আপনার চোখের কাছে, যেমন চোখের মেকআপ, বা আপনি গন্ধ শুকতে পারেন এমন কিছু, যেমন গন্ধযুক্ত সাবান দ্বারা ধোয়া কাপড় এ্যালার্জির সৃষ্টি করতে পারে যা চোখের ক্ষতি করতে পারে। আপনি যদি চোখে জ্বালা ধরানো জিনিসটি ব্যবহার করা বন্ধ করতে পারেন তবে এ্যালার্জি আপনাকে কম বিরক্ত করবে।

আপনার চোখকে একটি ভিজা ভাজ করা কাপড় (ঠাণ্ডা জল সবথেকে ভাল কাজ করে) দিয়ে ঢেকে এর চুলকানি প্রশমিত করুন। যদি এন্টিহিস্টামিন চোখের ড্রপসহজলভ্য হয়, তবে যখন হে জ্বর তুঙ্গে তখন এগুলো ভাল বোধ করতে সাহায্য করবে।

কর্নিয়ার উপর আলসার (চোখের উপরিভাগে ক্ষত)

চিহ্ন
মণির উপরের অংশে দাগসহ চোখ

যখন চোখের সবথেকে স্পর্শকাতর অংশটি সংক্রামণ বা আঁচড়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন একটি বেদনাযুক্ত কর্নিয়ার আলসার দেখা দিতে পারে। আপনার চোখ ঘষবেন না, ঘষলে এর শুধু অবনতিই হবে।

ব্যক্তির দৃষ্টিশক্তি প্রায়শই কমে যায় এবং তাদের তীব্র ব্যথা থাকে। তাদের চোখ থেকে পুরু বা জলীয় রস বের হতে পারে।

চোখটি লাল থাকে এবং আপনি যদি উজ্জ্বল আলোয় কর্নিয়ার দিকে তাকান তবে আপনি হয়তো একটি ধূসড়-সাদা ছোপ দেখতে পাবেন। এটি হয়তো চোখের বাকি অংশ থেকে কম উজ্জ্বল দেখাবে।

চিকিৎসা

এটি একটি জরুরী অবস্থা। কর্নিয়ার উপর আলসারটি যদি ভালভাবে পরিচর্যা করা না হয় তবে এর ফলে অন্ধত্বের সৃষ্টি হবে। চিকিৎসা সহায়তা গ্রহণ করুন। একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে যাবার পথে প্রতি ঘন্টায় জীবাণুনাশক চোখের মলম বা ড্রপ প্রয়োগ করুন (পৃষ্ঠা ৩২।

কনীনিকার প্রদাহ (কনীনিকায় প্রদাহ)

সাধারণ চোখ কনীনিকার প্রদাহযুক্ত চোখ
 একটি সাধারণ চোখ এবং
অন্য আর একটি চোখে কনীনিকা ফুলে গেছে এবং চোখের মণির অংশবিশেষ ফোলা রয়েছে
চোখের মনি ছোট, প্রায়শই অনিয়মিত
কনীনিকার চারপাশে লাল
ব্যথা

কনীনিকার জ্বালা করাকে বলা হয় কনীনিকার প্রদাহ। এর কারণ সাধারণতঃ জানা যায়নি।

চিহ্ন
  • সাধারণতঃ মাত্র এক চোখে
  • চোখে গভীর দপদপ করা ব্যথা
  • চোখের মনি (চোখের কালো কেন্দ্রটি) হয়তো গোলাকার না হয়ে অনিয়মিত কোন আকারের হতে পারে
  • কনীনিকার নিকটে চোখের সাদা অংশে লালচে ভাব
  • উজ্জ্বল আলোতে চোখে আরও বেশী ব্যথা লাগে
  • দৃষ্টি সাধারণতঃ অস্পষ্ট হয়
চিকিৎসা

কনীনিকার প্রদাহ একটি সঙ্কটজনক সমস্যা এবং বেদনাদায়ক। ১থেকে ২ দিনের মধ্যেই চিকিৎসা সহায়তা গ্রহণ করুন।

জীবাণুনাশকগুলো কোন উপকার করে না।

একজন অভিজ্ঞ স্বাস্থ্য কর্মী হয়তে চোখের মণির আকার বড় করার জন্য চোখের ড্রপ, এবং প্রদাহ কমানোর জন্য অন্যান্য চোখের ড্রপ ব্যবহার করতে পারে।

ট্রাকোমা— একটি দীর্ঘমেয়াদী চোখ ওঠা

ট্রাকোমা এমন একটি চোখের সংক্রামণ যা হাত, মাছি, সংক্রামিত চোখ স্পর্শ করা কাপড়ের মাধ্যমে এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে বাহিত হতে পারে। ট্রাকোমা শিশু ও তাদের মায়েদের মধ্যে সচরাচর দেখা যায়। একজন ব্যক্তি যদি অনেক বার সংক্রামিত হয়, তবে বেশ কয়েক বছর পর এর কারণে চোখের পাপড়িগুলো ভিতরের দিকে ভাজ হয়ে যেতে পারে এবং চোখের উপরিভাবে আঁচড় লাগাতে পারে, যার ফলে ব্যথার সৃষ্টি হয় এবং দৃষ্টিহানি হয়। যেহেতু এটি খর্খরে অনুভূত হয়, তাই একে অনেক সময় 'চোখের মধ্যে চুল' বলা হয়।

ট্রাকোমা বর্তমানে আর সচরাচর দেখা যায় না কিন্তু কোন কোন দেশে এটি এখনো একটি সঙ্কটজনক সমস্যা, বিশেষ করে উপ-সাহারিয় আফ্রিকায়। এটি সবথেকে বেশী ক্ষতি করে দারিদ্রে বসবাস করা ব্যক্তিদের যারা ঘনবসতির মধ্যে বাস করে, এবং যেখানে প্রচুর মাছি আছে আর জলের অভাব আছে। ট্রাকোমা রোধে জল ও স্বাস্থ্য প্রণালী উন্নত করা গুরুত্বপূর্ণ।

চিহ্ন
 চোখের পাতার ভিতরে ছোট ছোট গোটায় ভরে আছে
চোখের পাপড়ি ভিতরের দিকে ভাঁজ হয়ে যাওয়াসহ চোখের পাতার ভিতরের অংশে ক্ষতচিহ্ন
  • ট্রাকোমা সাধারণতঃ বাড়ন্ত শিশুদের মধ্যে হালকা চোখ ওঠার চিহ্ন দিয়ে শুরু হয় যা প্রথমে সহজে লক্ষণীয় হয় না।
  • বাড়ন্ত শিশুদের মধ্যে বার বার সংক্রামণের ফলে চোখের উপরের পাতার ভিতরে ছোট ছোট ‍সাদা-ধূসর রং হয়ে ফুলে যায়। এগুলো দেখার জন্য, চোখের পাতা উল্টান
  • বছরের পর বছর বার বার সংক্রামণ হওয়ার পর এই ফোলা অংশগুলো বা গোটাগুলো চোখের পাতার নীচে সাদা ক্ষতচিহ্নর আকার ধারণ করে। ক্ষতচিহ্নগুলো চোখের পাপড়িগুলোকে ভিতরের দিকে ভাঁজ করে ফেলে এবং সেগুলো চোখের পরিষ্কার অংশে আঁচড় কাটে, যার ফলে চোখে ব্যথা হয় এবং দৃষ্টি হানি ঘটে।
চিকিৎসা

ট্রাকোমার সবথেকে ভাল চিকিৎসা হচ্ছে এ্যাজিথ্রোমাইসিন নামের ঔষধটির এক মাত্রা মুখে খাওয়া। যদি এ্যাজিথ্রোমাইসিন না পাওয়া যায়, তবে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত চোখের ভিতরে দিনে ২বার ১% ট্ট্রোসাইক্লিন চোখের মলম লাগালেও কাজ হবে।

অগ্রসর পর্যায়ের ট্রাকোমায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য একটি সাধারণ অস্ত্রোপচার ভিতরের দিকে ভাঁজ হয়ে যাওয়া পাপড়িগুলোকে আবারও বাইরের দিকে ভাঁজ হওয়া অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে পারবে। যদি অস্ত্রোপচার করার সুযোগ না থাকে তবে একজন প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্য-কর্মী হয়তো সমস্যাসৃষ্টিকারী পাপড়িগুলোকে তুলে ফেলতে পারবে।

প্রতিরোধ

ট্রাকোমার প্রাথমিক পর্যায়ে এবং সম্পূর্ণ চিকিৎসা এটি অন্য লোকের মধ্যে বাহিত হওয়া রোধ করে। প্রতিদিন শিশুদের মুখ ধুয়ে দিন এবং কারো চোখ স্পর্শ করার পর আপনার হাত দুটোও ধুয়ে নিন। তোয়ালে, জামাকাপড়, বিছানাপত্র নিয়মিত ধুয়ে নিশ্চিত করুন যেন ২ জন ব্যক্তি কখনোই একই বালিশ বা তাদের মুখ মোছার জন্য একই কাপড় ব্যবহার না করে।

খাবার ঢাকা, শৌচাগার ঢেকে রাখা, এবং ঘরের থেকে দূরে জৈব সার তৈরী করার মাধ্যমে মাছি দূরে রাখুন। অধ্যায়: জল ও স্বাস্থ্য প্রণালী: সুস্বাস্থ্যে থাকার চাবিকাঠি দেখুন।

আপনার এলাকায় যদি এরকম অনেক আক্রান্ত ব্যক্তি থাকে তবে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ হয়তো এলাকার সকলকে এ্যাজিথ্রোমাইসিন দিয়ে ট্রাকোমারে বিস্তার রোধ করতে পারে।

NWTND eye Page 18-3.png

ট্রাকোমা মাছি, আঙ্গুল, এবং কাপড়ের মাধ্যমে ছড়ায়।


এই পাতাটি হালনাগাদ করা হয়েছে: ২৪ এপ্রিল ২০২৪