Hesperian Health Guides
পরিচ্ছেদসমূহ
কিভাবে কলেরা রোধ করা যায়
যত্নশীল পয়ঃব্যবস্থা, পান করা বা রান্নার আগে জলের যত্নশীল ব্যবহার ও প্রক্রিয়াজাত করা এবং যত্নশীলভাবে খাবার নড়াচড়া করার মাধ্যামে কলেরা রোধ করা যায়।
- জলের উৎস থেকে কমপক্ষে ৩০মিটার দূরে জরুরী পয়ঃব্যবস্থার স্থাপনা তৈরী করুন। নিশ্চিত করুন যেন মানুষ পায়খানা ব্যবহার করার পর যত্নশীলভাবে নিজেকে ধৌত করতে পারে।
- পায়খানা ব্যবহারের পর সবসময়েই হাত ধৌত করুন।
- খাবার প্রস্তুত করার আগে সবসময়েই হাত ধৌত করুন।
- ডাইরিয়া ও বমির মতো দেহনিসৃত তরল পদার্থের মধ্যে কলেরার জীবাণু বাঁচতে পারে। অসুস্থ্য ব্যক্তিদের যত্ন নেয়ার সময়, দস্তানা পড়ুন বা আপনার হাতের উপর প্লাষ্টিকের থলি ব্যবহার করুন এবং নিজেকে ঘন ঘন ধৌত করুন।
জল | খাবার |
|
|
|
|
একটি জরুরী পরিখা পায়খানা তৈরী করা
জরুরী অবস্থায়, একটি স্থায়ী পায়খানা নির্মাণ হতে হতে একটি সাধারণ পরিখা খনন করা যেতে পারে যেটি মানুষের বিষ্ঠা বর্জনের একটি সাময়িক সমাধান হতে পারে। এটিকে আড়াআড়িভাবে ০.৩ মিটার হতে হবে - যাতে ব্যবহারকারীরা তাদের পা দু’পাশে দিয়ে উবু হয়ে বসতে পারে - এবং এর গভীরতা যেন ০.৫ মিটার হয় এবং প্রয়োজন মতো এটিকে লম্বা করুন। চারজন ব্যবহারকারীর জন্য এক মিটারই যথেষ্ট। পরিখাটিকে কূয়া বা অন্যান্য জলের উৎস থেকে কমপক্ষে ৩০ মিটার দূরত্বে হতে হবে, এবং সবথেকে কাছের ঘরটি থেকে কমপক্ষে ৬মিটার দূরে অবস্থিত হতে হবে। এটির অবশ্যাই জলের উৎস থেকে উপরের দিকে অবস্থিত হওয়া বা এটিকে জলাময় মাটিতে খনন করা উচিত নয়। পরিখার নীচের দিকটি কখনোই ভূগর্ভস্থ্য জলের উপরিভাগ স্পর্শ করা উচিত নয়। প্রতিবার ব্যবহারের পর পরিখার মধ্যে থাকা বর্জ্যের উপর মাটি ফেলে ঢেকে দিতে হবে। কলেরা আক্রান্ত এলাকাতে প্রতিদিন পরিখার মধ্যে এক স্তর চুন ফেলতে হবে। পায়খানার নকশার উপর আরও তথ্য জানতে, পরিবেশ স্বাস্থ্য বিষয়ে জনগোষ্ঠীর জন্য একটি সহায়িকা। দেখুন।
মৃত্যু ও সমাহিত করা: জলের উৎস থেকে কমপক্ষে ৩০ মিটার দূরে দেহগুলো সমাধিস্থ করা উচিত। আপনি যদি সমাহিত করার জন্য কোন একটি দেহ ধৌত করেন, তবে আপনার শোক যেন আপনার নিজেকে ভালভাবে ধোয়ার বিষয়টি ভুলিয়ে না দেয়।
কিভাবে কলেরা চেনা যায়
কলেরা হলো একটি তীব্র আকারের ডাইরিয়ার ধরন যা জলের মধ্যে থাকা একটি ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা সৃষ্টি হয়। কলেরা জরুরী অবস্থার সময়ে খুব দ্রুতই ছড়াতে পারে এবং অনেক মৃত্যুর কারণ ঘটাতে পারে। কলেরার লক্ষণ হলো:
প্রচুর পরিমাণে ডাইরিয়ার মতো ‘ভাত ভিজানো জল’
বমি হওয়া
পায়ে খিঁচুনী
দুর্বলতা
ডাইরিয়া ও বমি থেকে খুব দ্রুতই তীব্র জলশূন্যতা ও পক্ষাঘাতের আক্রমণ হতে পারে। চিকিৎসা না করালে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মৃত্যু ঘটতে পারে। কলেরা চিহ্নিত ও রোধ করায় জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করতে সকলেরই শেখা উচিত কিভাবে:
জল পরিশোধন করতে হয়
স্বাস্থ্যকর পয়ঃব্যবস্থার অনুশীলন করা যায়
নিরাপদে খাবার প্রস্তুত করতে হয়
মুখে খাবার জলপূর্ণতার দ্রবণ তৈরী করতে হয়
কলেরা রোধ করতে এক জনগোষ্ঠী থেকে আর এক জনগোষ্ঠীতে আতঙ্ক ছড়িয়ে যাওয়া রোধ করতে তথ্যের মুক্ত প্রবাহ অত্যাবশ্যকীয়। কলেরা কী এবং তা কিভাবে রোধ করতে হয় তা জানার মাধ্যমেই শুধুমাত্র সকলে নিরাপদ হতে পারবে।
কিভাবে কলেরার চিকিৎসা করা হয়
কলেরার জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা হলো মুখে খাবার মাধ্যমে জলপূর্ণতা। খুবই গুরুতর কয়েকটি ক্ষেত্র ছাড়া এ্যন্টিবায়োটিক কোন সাহায্যই করবে না। কোন ব্যক্তির যদি জলের মতো ডাইরিয়া থাকে বা ডাইরিয়া ও বমি উভয়ই থাকে তবে জলশূন্যতার লক্ষণের জন্য অপেক্ষা করবেন না। দ্রুত ব্যবস্থা নিন।
প্রচুর পরিমাণে পানীয় পান করতে দিন যেমন পাতলা সিরিয়ালের পায়েস, স্যুপ, জল বা জলপূর্ণতার দ্রবণ।
খাবার দেয়া অব্যাহত রাখুন। যখনই অসুস্থ্য শিশু বা পূর্ণবয়ষ্ক ব্যক্তি খাবার খেতে পারার অবস্থায় আসবে তখনই তাকে ঘনঘন তার পছন্দের খাবার খাওয়ান। কোলের শিশুদেরকে অন্যান্য পানীয় পান করানোর আগে ও ঘনঘন বুকের দুধ খাওয়ান।
জলপূর্ণতার পানীয়জলশূন্যতা রোধ করতে বা তার চিকিৎসা করতে সাহায্য করে। এটি কলেরা বা ডাইরিয়া নিরাময় করে না, কিন্তু এটি হয়তো রোগটির নিজে নিজেই চলে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় দেবে।
কিভাবে জলপূর্ণতার দ্রবণ তৈরী করতে হয়
নীচে ২ ভাবে জলপূর্ণতার দ্রবণ তৈরী করার উপায় দেয়া হলো। আপনি যদি পারেন তবে আধা কাপ ফলের রস, নারকেলের জল, বা পাকা কলা ভর্তা করে এই দুই দ্রবণের যেকোনটিতে মিশাতে পারেন। এগুলোতে পটাশিয়াম নামের একটি আকরিক থাকে, যা একজন অসুস্থ্য ব্যক্তিকে আরও বেশী করে খাবার ও পানীয় গ্রহণ করতে সাহায্য করে।
একটি শিশুকে দিনে ও রাতে প্রতি ৫ মিনিট পর পর এই দ্রবণের কয়েক চুমুক করে পান করান যতক্ষণ না পর্যন্ত সে স্বাভাবিকভাবে মূত্রত্যাগ করে। একজন বড় ব্যক্তির দিনে ৩ লিটার বা তারও বেশী প্রয়োজন হবে। একটি ছোট শিশুর সাধারণতঃ দিনে ১ লিটার প্রয়োজন হয়, বা প্রতিবার তরল পায়খানার জন্য ১ গ্লাস করে প্রয়োজন হবে। শিশুকে দ্রবণটি দেয়া অব্যহত রাখুন, এবং অল্প অল্প করে খাওয়ান। ব্যক্তিটি যদি বমি করেও, পানীয়ের সবটুকুই বমির সাথে বের হয়ে আসবে না।
গুড়ো সিরিয়াল ও লবন দিয়ে তৈরী করা
গুড়ো চাল সবথেকে ভাল। কিন্তু আপনি মিহি করে গুড়ো করা ভূট্টা, আটা, বজরা, বা সিদ্ধ ও ভর্তা করা আলু ব্যবহার করতে পারেন।
৫ থেকে ৭ মিনিট ধরে ফুটান যাতে তা তরল জাউ বা জলজলে পায়েসে পরিণত হয়। দ্রুত দ্রবণটিকে ঠাণ্ডা করুন এবং তা অসুস্থ্য ব্যক্তিটিকে দিতে শুরু করুন। ।
চিনি ও লবন দিয়ে তৈরী করা।
আপনি অপরিশোধিত, বাদামী বা সাদা চিনি, বা গুড় ব্যবহার করতে পারেন।
এবং তারপর ৮ চা চামচ সমান করে চিনি মিশান।
ভাল করে মিশ্রিত করুন।
কিভাবে জলকে পান ও রান্না করার জন্য নিরাপদ করা যায়
ভুপৃষ্ঠের জল ও নল চোঁয়ানো, খোলা চৌবাচ্চা, ও কূয়ার জল হয়তো কলেরা ও অন্যান্য জীবাণু দ্বারা দূষিত হতে পারে। এই জল পান করার আগে সাবধানতার সাথে পরিশোধিত করতে হবে!
যখন পানীয় জল ভূপৃষ্ঠ থেকে আসে বা অন্যান্য জল যেগুলো জীবাণু দ্বারা দূষিত হতে পারে, সেগুলো নির্বীজিত করার ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে: ফুটানো, ব্লিচ ব্যবহার করা, জামির বা লেবু যুক্ত করা, এবং সূর্যালোক ব্যবহার করা। যেভাবেই এটিকে পরিশোধিত করা হোক না কেন এটিকে প্রথমে থিতু হতে দিতে হবে এবং ছাঁকতে হবে, নতুবা পরিশোধন করলে তা কোন কাজেই আসবে না।
- জলকে থিতু হতে দিন যাতে কঠিন পদার্থগুলো নীচে জমা হয় এবং জলটি মোটামুটি পরিষ্কার হয়।
- পরিষ্কার কাপড়ের তৈরী বা একটি বালি ও কয়লার ছাঁকনির মধ্যে দিয়ে জল ঢালুন।
একটি কাপড়ের ছাঁকনি ব্যবহার করতে : পরিষ্কার কাপড়কে চারবার ভাজ করুন এবং এটিকে একটি পরিষ্কার কলশি বা পাত্রের মুখের উপরে টেনে বাঁধুন। এবার এই কাপড়ের মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে জল ঢালুন। কাপড়টি ব্যবহার করার পর এতে লেগে থাকা জীবাণুগুলোকে মারার জন্য এটিকে ধুয়ে রোদে শুকাতে দিন, বা ব্লিচ ব্যবহার করে এটিকে নির্বীজিত করুন।
ফুটানো
- জলটিকে কমপক্ষে ১ মিনিটির জন্য দ্রুত ফুটান।
- জলটি তারপর ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য একটি পরিষ্কার পাত্রে রাখুন।
ব্লিচ ব্যবহার করা
- সকল জীবাণু মারতে অল্প পরিমাণ জলের জন্য (১ কোয়ার্ট বা ১ লিটার), ২ ফোঁটা গৃহস্থালীর ব্লিচ (৫% ক্লোরিন) ব্যবহার করুন।
- বেশী পরিমাণের জন্য (৫ গ্যালন বা ২০ লিটার) আধা চা চামচ সমপরিমাণ গ্রহস্থালীর ব্লিচ ব্যবহার করুন।
- জলের সাথে ভাল করে মিশিয়ে এটিকে কমপক্ষে দুই ঘন্টা (সারারাত হলে সবচেয়ে ভাল হয়) নড়াচড়া করে রেখে দিন।
- পরিশোধিত জল একটি পরিষ্কার পাত্রে সংরক্ষণ করুন।
জল | ৫% ক্লোরিন ব্লিচ | ||
১ লিটার বা ১ কোয়ার্টের জন্য | ২ ফোঁটা | ||
১ গ্যালন বা ৪ লিটারের জন্য | ৮ ফোঁটা | ||
৫ গ্যালন বা ২০ লিটারের জন্য | আধা চা চামচ | ||
২০০ লিটার ব্যারেলের জন্য | ৫ চা চামচ |
জামির বা লেবু ব্যবহার করুন | |
(এই পদ্ধতিতে সকল জীবাণু মারা যাবে না, কিন্তু আদৌ কোন পরিশোধন না করার থেকে এটি অনেক ভাল, এবং কলেরার অনেক ঘটনাই এটি প্রতিরোধ করতে পারে।)
| |
সূর্যালোক ব্যবহার করুন।
বিষুবরেখার কাছের দেশগুলোতে যেখানে সূর্যের তাপ বেশী সেখানে সূর্যালোক (সৌর নির্বীজিতকরণ বা সোডিস) সবথেকে ভাল কাজ করে। একটি পরিষ্কার প্লাষ্টিকের বোতল বা একটি প্লাষ্টিকের থলির অর্ধেক পরিমাণ পূর্ণ করুন, তারপর এটিকে ২০ সেকেন্ড ঝাঁকান। এর ফলে বাতাসের বুদবুদ যুক্ত হয় যা জলকে দ্রুত নির্বীজিত করে। তারপর বোতলটিকে উপর পর্যন্ত পূর্ণ করুন। বোতলটিকে একটি গরম ও রৌদ্রযুক্ত এবং মানুষ ও প্রাণী যেখানে বোতলটিকে ধরাধরি করতে পারবে না এমন স্থানে রাখুন, যেমন একটি ঘরের ছাদ। বোতলটিকে কমপক্ষে ৬ ঘন্টা পূর্ণ সূর্যালোকে রেখে দিন, বা মেঘলা আবহাওয়ায় এটিকে ২ দিন একটানা রেখে দিন। | |
৩। জলের পাত্রগুলো পরিষ্কার রাখুন | |
নিশ্চিত হোন যে জল রাখার পাত্র পরিষ্কার থাকে! জলের পাত্রে কোন ময়লা পাত্র, হাত বা অন্য কোন কিছু রাখবেন না। ব্যবহার করার জন্য পরিষ্কার কাপে বা গ্লাসে বোতল থেকে জল ঢালুন। |