Hesperian Health Guides
ভিটামিন ও আকরিক সম্পূরক
হেসপেরিয়ান স্বাস্থ্যউইকি > নতুন যেখানে ডাক্তার নেই > ভাল খাবার ভাল স্বাস্থ্য তৈরী করে > ভিটামিন ও আকরিক সম্পূরক
পরিচ্ছেদসমূহ
মিশ্র (বা বহু) ভিটামিন
পুষ্টিকর খাবারই ভিটামিনের সবথেকে ভাল উৎস। কিন্তু যখন পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার পাওয়া যায় না বা গর্ভাবস্থায় যখন নারীদের পুষ্টি গ্রহণের চাহিদা থাকে অনেক বেশী তখন মিশ্র ভিটামিন সম্পূরক ব্যবহার করতে হবে।
ভিটামিন এবং আকরিক সম্পূরক বিভিন্ন আকারে আসে, কিন্তু বড়িগুলো সাধারণতঃ স্বল্পমূল্যের হয়। মিশ্র ভিটামিনের ইঞ্জেকশন অপ্রয়োজনীয়, অর্থের অপচয়, এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যথা ও সংক্রামণ ঘটাতে পারে। বলবর্ধক ও অমরত্ব সুধাতেও প্রায়শই সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ভিটামিন থাকে না এবং এগুলো সাধারণতঃ স্বল্প যে পরিমাণ উপকার করে তার তুলনায় অতিরিক্ত উচ্চমূল্যের।
অনেক মিশ্র ভিটামিনের বড়ি প্রতিদিন ১ টি করে ব্যবহার করা হয়, কিন্তু নির্দেশনার জন্য মোড়ক গায়ে লেখা পড়ুন।
ভিটামিন এ, রেটিনল
ভিটামিন এ রাতকানা রোগ ও জেরোপথালমিয়া প্রতিরোধ করে ।
যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন এ পেতে, আমাদের প্রচুর পরিমাণে হলুদ ফল বা সবজি, গাঢ় সবুজ শাক-সবজি, এবং ডিম, মাছ, ও যকৃতের মতো খাবার খাওয়া প্রয়োজন। যে সমস্ত এলাকায় রাত কানা রোগ ও জেরোপথালমিয়া সচরাচর দেখা যায় এবং এই খাবারগুলো যথেষ্ট পরিমাণে খাওয়া সবসময় সম্ভব হয় না সেখানে শিশুদেরকে প্রতি ৬ মাস পর পর ভিটামিন এ খাওয়ান।
সুপারিশকৃত পরিমাণের চেয়ে বেশী ব্যবহার করবেন না। ক্যাপসুল, বড়ি, বা তেল থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন এ বিপজ্জনক হতে পারে। বালিকা বা নারী যাদের গর্ভবতী হবার সম্ভাবনা আছে তাদের বা গর্ভবস্থার প্রথম ৩ মাসের মধ্যে কোন নারীকে প্রাপ্তবয়স্কদের নিয়মিত মাত্রা ২০০,০০০ ইউনিট দেবেন না কারণ তা গর্ভের শিশুর ক্ষতি করতে পারে। গর্ভবতী নারীদের জন্য ভিটামিন এ বড় একটি মাত্রায় না দিয়ে ছোট ছোট অনেকগুলো মাত্রায় দেয়া হয়।
ক্যাপসুল বা বড়ি গিলে খান। কিন্তু বাড়ন্ত শিশুদের জন্য বড়ি গুড়ো করে অল্প খানিকটা বুকের দুধের সাথে মিশান। বা একটি ক্যাপসুল কেটে এর ভিতর থেকে তরল পদার্থগুলো চেপে বের করে শিশুর মুখে দিয়ে দিন।
শিশুদের মধ্যে ভিটামিন এ-এর অভাব রোধ করতে
শিশুদের মধ্যে ভিটামিন এ-এর অভাব রোধ করতে
৬ মাস থেকে ১ বছর: এক বার ১০০,০০০ ইউনিট মুখে খাওয়ান।১ বছরের বেশী: এক বার ২০০,০০০ ইউনিট মুখে খাওয়ান। প্রতি ৬ মাস পর পর পুনরাবৃত্তি করুন।
রাতকানা রোগের চিকিৎসা করতে
যদি একজনের ইতোমধ্যেই দেখার সমস্যা থাকে বা রাতকানা রোগের অন্যান্য সমস্যা দেখা যায়, তবে ৩ মাত্রা দেয়া হয়। প্রথম মাত্রাটি সাথে সাথে দেয়া হয়, ২য় মাত্রাটি দেয়া হয় ১ দিন পরে এবং ৩য় মাত্রাটি দেয়া হয় কমপক্ষে ২ সপ্তাহ পরে।
৩টি মাত্রার প্রতিটি মাত্রার জন্য:
৬ মাসের নীচে: প্রতি মাত্রায় ৫০,০০০ ইউনিট মুখে খাওয়ান।৬ মাস থেকে ১ বছর: প্রতি মাত্রায় ১০০,০০০ মুখে ইউনিট খাওয়ান।
হামযুক্ত শিশুদের জন্য
ভিটামিন এ হামের দু'টো সাধারণ জটিলতা - নিমোনিয়া ও অন্ধত্ব রোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
৬ মাসের নীচে: দু'দিনের জন্য দিনে একবার মুখে ৫০,০০০ ইউনিট খাওয়ান।১ বছরের উপর: দু'দিনের জন্য দিনে একবার মুখে ২০০,০০০ ইউনিট খাওয়ান।
শিশুটি যদি ইতোমধ্যেই ভিটামিন এ-এর একটি মাত্রা বিগত ৬ মাসে গ্রহণ করে থাকে তবে তাকে এই পথ্যটি ১ দিনের জন্য দিন। হামযুক্ত কেউ যদি তীব্র পুষ্টিহীনতায় ভোগে বা ইতোমধ্যেই তাদের দৃষ্টিশক্তি হারাতে শুরু করেছে তবে ২ সপ্তাহ পর তাদেরকে ভিটামিন এ-এর আরও একটি মাত্রা দিন।
ভিটামিন বি৬, পাইরিডক্সিন
আইসোনাইজিড দ্বারা চিকিৎসা করা যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তির কোন কোন সময় ভিটামিন বি৬ এর ঘাটতি হতে পারে। ভিটামিন বি৬-এর ঘাটতির লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে: হাত বা পায়ে ব্যথা বা টনটন করে, পেশীতে টান পড়া, বিচলিত ভাব, ঘুমের সমস্যা।
ব্যক্তিটি যেদিন আইসোনাইজিড সেবন করবে তার প্রতি দিন তাকে ভিটামিন বি৬ দিন।
'বি৬-এর অভাব রোধ করতেবড় শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক: প্রতিদিন ২৫ মিগ্রা দিন।
বি৬-এর অভাব রোধ করতে
২ মাস থেকে বড় শিশুদের জন্য: দিনে তিনবার ১০ থেকে ২০মিগ্রা করে দিন যতদিন ঘাটতির চিহ্ন দেখা যায়।
প্রাপ্তবয়স্ক: দিনে তিনবার ৫০মিগ্রা করে দিন যতদিন ঘাটতির চিহ্ন দেখা যায়।
আয়োডিন
আয়োডিনযুক্ত লবন এবং সামুদ্রিক খাবার আয়োডিন পাবার সবথেকে ভাল উপায়। যেখানে এগুলো পাওয়া অসম্ভব এবং যেখানে গলগণ্ড বা হাইপোথাইরয়ডইজম (ক্রেটিনিজম) আছে সেখানে আয়োডিনের সম্পূরক দিতে পারেন।
৬ বছর থেকে প্রাপ্তবয়স্ক: বছরে একবার ৪০০ মিগ্রা দিন।
গর্ভবতী নারীদের জন্য, তাদেরকে গলগণ্ড থেকে এবং তাদের শিশুদেরকে প্রতিবন্ধিতা থেকে রক্ষা করতে: গর্ভাবস্থায় একবার ৪০০ মিগ্রা বড়ি খাওয়ান। গর্ভাবস্থার যত প্রথমাবস্থায় সম্ভব তত ভাল, কিন্তু যে কোন সময়ই দেয়া যায়।
৬ বছর থেকে প্রাপ্তবয়স্ক: বছরে একবার ০.৫ থেকে ১ মিলি (৪৮০ মিগ্রা) দিন।
গর্ভবতী নারী: গর্ভাবস্থার যত প্রথমাবস্থায় সম্ভব একবার ১ মিলি খাওয়ান। জন্ম দেবার এক বছর পর আবার দিন।
আয়রন, ফেরাস সালফেট, ফেরাস গ্লুকোনেট
রক্ত স্বল্পতার বেশীরভাগ ধরনেরই চিকিৎসা বা প্রতিরোধে ফেরাস সালফেট উপকারী। মুখে ফেরাস সালফেট খাওয়ার মাধ্যমে চিকিৎসায় কমপক্ষে তিন মাস সময় লাগে।
আয়রন ভিটামিন সি-এর সাথে খেলে ভাল কাজ করে (হয় ফলফলাদি এবং সবজি খাওয়ার মাধ্যমে বা ভিটামিন সি বড়ি খাওয়ার মাধ্যমে)।
আয়রন মাঝে মধ্যে পেটে গোলমাল ঘটায়, এবং এটি খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করাই সবথেকে ভাল। এছাড়াও এটি কোষ্ঠকাঠিন্য ঘটায় বিশেষভাবে বয়ষ্ক ব্যক্তিদের মধ্যে, এবং একটি মলের রংকে কালো করে ফেলতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্যের বিষয়ে পরামর্শ দেখুন।
তরল আয়রন সম্পূরক পান করলে পরে দাতের রং কালো হয়ে যায়। একটি নলের মাধ্যমে এটি পান করুন এবং তারপর দাঁত মাজুন।
মাত্রাটি যে সঠিক তা নিশ্চিত হোন। অতিরিক্ত ফেরাস সালফেট বিষাক্ত। তীব্র পুষ্টিহীনতায় ভোগা ব্যক্তিকে আয়রন খাওয়াবেন না। তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
বিভিন্ন আকারের আয়রনে এই আকরিকের ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণ দেয়া থাকে। উদাহরণস্বরূপ, একটি ৩০০ মিগ্রার ফেরাস সালফেট বড়িতে প্রায় ৬০ মিগ্রা আয়রন থাকে। কিন্তু একটি ৩২৫ মিগ্রার বড়িতে ৩৬ মিগ্রা আয়রন থাকে। তাই আয়রনের আসল পরিমাণ জানতে আপনার বড়ি, সিরাপ, গর্ভবতী ও বুকের দুধদানকারী একজন নারীর রক্তসল্পতা রোধ করতে
বা অন্যান্য আয়রন সম্পূরকের মোড়কের লেখা পড়ুন।
বয়স অনুসারে ফেরাস সালফেটের মাত্রা | |||
বয়স শ্রেণী | প্রতি মাত্রা কত খানি | কতোটি ৩০০ মিগ্রার বড়ি | মোট কতোখানি আয়রন |
দুই বছরের নীচে | ১২৫ মিগ্রা ফেরাস সালফেট | আয়রন সিরাপ, বা একটি ৩০০ মিগ্রার ফেরাস সালফেট বড়িকে ১/৪ ভাগ করে গুড়া করে বুকের দুধের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করুন। | ২৫ মিগ্রার আয়রন দেবার মত যথেষ্ট খাওয়ান | ২ থেকে ১২ বছর | ৩০০ মিগ্রা ফেরাস সালফেট ফেরাস সালফেটের | ১টি ৩০০ মিগ্রার বড়ি | ৬০ মিগ্রার আয়রন দেবার মত যথেষ্ট খাওয়ান | </tr>
১২ বছর থেকে প্রাপ্তবয়স্ক | ৬০০ মিগ্রা ফেরাস সালফেট | ২টি ৩০০ মিগ্রার বড়ি ফেরাস সালফেটের | ১২০ মিগ্রার আয়রন দেবার মত যথেষ্ট খাওয়ান |
দস্তা
দস্তা একজন ডাইরিয়াযুক্ত ব্যক্তিকে দ্রুত ভাল হয়ে ওঠায় সাহায্য করে। এটিকে জলপূর্ণতার দ্রবণের সাথে করে দেয়া উচিত
৬ মাসের বেশী: ১০ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত দিনে একবার ২০ মিগ্রা দিন