Hesperian Health Guides
চোখে ও দেখায় সমস্যা: ঔষধ
চোখের ড্রপ বা মলম লাগানোর আগে ও পরে ভাল করে হাত ধুয়ে নিন কারণ অনেক চোখের সংক্রামণ সহজেই একজন ব্যক্তির মুখমণ্ডল স্পর্শ করার পর আপনার নিজের চোখ স্পর্শ করার মাধ্যমে ছড়াতে পারে। চোখের ড্রপের বোতলটির ঢাকনা সাধারণতঃ দৃঢ়ভাবে আটকানো থাকে। ব্যক্তিটিকে এই আটকানো অংশটি ভেঙ্গে বোতলের ঢাকনা ঘুরিয়ে খুলে কিভাবে ১ ফোঁটা চেপে বের করতে হবে তা শিখিয়ে দিন।
কার্যকর হবার জন্য, চোখের ড্রপ ও মলমকে অবশ্যই চোখের পাতার ভিতরে—বাইরে নয়—যেতে হবে। মলম চোখের ভিতরে দীর্ঘ সময় থাকে এবং রাতে ভাল কাজ করে যদিও এটি কিছু সময়ের জন্য দৃষ্টি ঝাপসা করে দেয় তাই চোখের ড্রপ দিনের বেলায় ব্যবহার করাই সুবিধাজনক।
জীবাণু ছড়ানো এড়াতে লক্ষ্য রাখুন টিউব বা ড্রপারটি যেন চোখ স্পর্শ না করে। |
চোখের মলম ব্যবহার করতে, ধীরে ধীরে নীচের চোখের পাতা টেনে ধরুন এবং চোখের ভিতরের কোণা থেকে শুরু করে বাইরের কোণা পর্যন্ত চিকন করে মলম চেপে বের করুন।
চোখের ড্রপ ব্যবহার করতে, চোখের নীচের পাতা টেনে ধরে একটি ছোট থলির মতো তৈরী করে তাতে ধীরে ধীরে ১ থেকে ২ ফোঁটা ফেলুন। ধীরে ধীরে আপনার চোখ বন্ধ করুন কিন্তু চোখ টিপ দেবেন না। ফোঁটাগুলোর বেশীরভাগই চোখের উপরের অংশের ছড়িয়ে পড়বে।
পরিচ্ছেদসমূহ
সাধারণ জাতিয় চোখের ড্রপ
জীবাণুনাশকসহ চোখের ড্রপ জীবাণু দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্রামণের চিকিৎসা করতে ব্যবহার করতে হয়। চোখের জীবাণুনাশক মলম হিসেবেও পাওয়া যায়। একটি ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট চোখের জ্বালা করা বা লাল চোখ ভাল করতে জীবাণুনাশক চোখের ড্রপ বা মলম কোন সাহায্য করবে না।
এ্যন্টিহিস্টামিনসহ চোখের ড্রপ এ্যালার্জির কারণে সৃষ্ট জল জল, লাল, এবং চুলকানো চোখ নিরাময় করে। চুলকানো চোখে স্বস্তি আনতে ঠাণ্ডা ভাপ সাহায্য করতে পারে এবং এতে কোন অর্থ খরচ হয় না।
তৈলাক্তকরণের জন্য চোখের ড্রপ, যাকে “কৃত্রিম অশ্রু” বা “প্রাকৃতিক অশ্রু” বলা হয় তা যে চোখে শুষ্ক অনুভূত হয় সে চোখের জন্য ব্যবহার করা হয়। এগুলো দিনে ও রাতে ঘুমাতে যাবার ঠিক আগে প্রায় চার বার পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। বন্ধ চোখে দিনে ১ থেকে ২ বার ৫ থেকে ১০ মিনিটের জন্য গরম ভাপ দিলে আপনার চোখের নিজস্ব আদ্রতা তৈরীতে সাহায্য করতে পারে।
নেটামাইসিনযুক্ত চোখের ড্রপ স্বাস্থ্যকর্মীরা কর্নিয়ার আলসার হয়ে থাকলে তাতে ছত্রাকের সংক্রামণ রোধ করতে মাঝে মাঝে ব্যবহার করে থাকে।
ট্ট্রোহাইড্রোজোলিন বা নাফজোলিনযুক্ত চোখের ড্রপ চিকন চিকন রক্ত নালীগুলোকে সংকুচিত করে বলে চোখগুলো লাল দেখায়। যেহেতু এগুলো লাল চোখের কারণকে নিরাময় করতে পারেনা তাই এগুলো ব্যবহার করা মানে অর্থের অপচয়।
স্টেরয়ডযুক্ত চোখের ড্রপ (যেমন প্রেডনিসোলন বা ডেক্সামেথাসোন) অস্ত্রোপচারের পর বা অন্যান্য রোগের কারণে সৃষ্ট চোখের প্রদাহ হ্রাস করে। সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে স্টেরয়ডযুক্ত চোখের ড্রপ চোখের সঙ্কটজনক ক্ষতি করতে পারে বা হয়তো অন্য আর একটি সমস্যাকে আড়াল করতে পারে যার জন্য অন্য চিকিৎসার প্রয়োজন। কোন কোন ড্রপে জীবাণুনাশক এবং স্টেরয়ড মিশ্রিত থাকে (প্রায়শই নামের সাথে 'ডেক্স' বা 'প্রেড' যুক্ত থাকে)। স্টেরয়ডযুক্ত চোখের ড্রপ শুধুমাত্র একজন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন স্বাস্থ্য কর্মী দ্বারা নির্দিষ্টভাবে সুপারিশকৃত হলেই ব্যবহার করুন।
জীবাণুনাশক চোখের চিকিৎসা
জীবাণুনাশক চোখের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এগুলো যে চোখে ব্যবহারের জন্য নিরাপদ তা নির্দেশ করতে এর লেবেলে 'চোখ' বা 'চোখ সংক্রান্ত' কথাটি লেখা থাকবে। জীবাণুনাশক ত্বকের মলম চোখে ব্যবহার করবেন না।
জীবাণুনাশক চোখের মলম এবং জীবাণুনাশক চোখের ড্রপ জীবাণু দ্বারা সৃষ্ট সংক্রামণ এবং কর্নিয়ার আলসারের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। জন্মের সময়ে বাহিত হওয়া সংক্রামণ থেকে একটি সদ্যজাত শিশুর চোখকে রক্ষা করতে এরিথ্রোমাইসিন বা ট্ট্রোসাইক্লিন চোখের মলম জন্মের সময় ব্যবহার করা হয়।
জীবাণুনাশক সাধারণ চোখের চিকিৎসাগুলোর মধ্যে আছে:
- ১% ট্ট্রোসাইক্লিন চোখের মলম
- ০.৫% বা ১% এরিথ্রোমাইসিন চোখের মলম
- ০.৩ সিপ্রোফ্লোক্সাসিন চোখের ড্রপ বা মলম
- ০.৩ ওফ্লোক্সাসিন চোখের ড্রপ
- ০.৩ জেনটামাইসিন চোখের ড্রপ
- ১০% সালফাসেটামাইড চোখের ড্রপ
- ০.৫% ক্লোরামফেনিকাল চোখের ড্রপ
একটি চোখের ড্রপ বা একটি চোখের মলমকে কাজ করার জন্য এগুলোকে অবশ্যই চোখের পাতার বাইরে না—ভিতরে লাগাতে হবে। আপনি যে লোকটিকে সাহায্য করছেন তাকে কিভাবে এগুলো ব্যবহার করতে হয় তা দেখান।
জীবাণু দ্বারা সৃষ্ট চোখ ওঠার (লাল চোখ) জন্য
জীবাণুনাশক চোখের মলম ও জীবাণুনাশক চোখের ড্রপ দিনে ৪বার করে ৭ দিনের জন্য দু'চোখে লাগান। চোখগুলোকে ভাল মনে হলেও পুরো সাত দিনের জন্য জীবাণুনাশক ব্যবহার করুন যাতে সংক্রামণ আবার ফেরত না আসে। কোন কোন সময় ঔষধ কাজ করতে ২দিন সময় নেয়।
কর্নিয়ার উপর আলসার
প্রতি ঘন্টায় জীবাণুনাশক চোখের ড্রপ লাগান এবং ব্যক্তিকে সাহায্যের জন্য পাঠান। ২৪ ঘন্টার জন্য ড্রপগুলো প্রতি ঘন্টায় ব্যবহার করা হয়, যদি উন্নতি হয় তবে ড্রপগুলো দিনে ৪বার করে ৭দিন ব্যবহার করা হয়। চোখটি যদি ২ দিনের মধ্যে আরও ভাল না হয় তবে আরও উন্নত সাহায্যের প্রয়োজন হবে। কর্নিয়ার আলসারের জন্য স্টেরয়ডযুক্ত কোন ড্রপ বা মলম ব্যবহার করবেন না।
ট্রাকোমার জন্য
যদি এ্যজিথ্রোমাইসিন বড়ি পাওয়া না যায়, তবে ট্ট্রোসাইক্লিন চোখের মলম ব্যবহার করা যায়। দু'চোখের জন্য দিনে ২ বার ৬ সপ্তাহের জন্য ১% টেট্রাসাইক্লিন জীবাণুনাশক চোখের মলম ব্যবহার করুন।
চোখের সমস্যা রোধে সদ্যজাত শিশুদের জন্য
জন্মের সময় বাহিত হতে পারে এমন সংক্রামণ থেকে সদ্যজাত শিশুর চোখ রক্ষা করতে জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হয়। জন্মের পর পরই একটি কাপড় ও জল দিয়ে ধীরে ধীরে চোখের পাতা মোছার পর প্রতিটি সদ্যজাত শিশুর দু'চোখেই প্রথম দু'ঘন্টার মধ্যে এই জীবাণুনাশক মলমগুলোর একটি ব্যবহার করুন:
১% ট্ট্রোসিইক্লিন বা ০.৫% থেকে ১% এরিথ্রোমাইসিন: প্রতিটি চোখে চিকন করে জন্মের ২ঘন্টার মধ্যে শুধুমাত্র ১ বার মলম লাগান।
কোন মলম না থাকলে:
২.৫% প্রভিডান-আয়োডিন-এর দ্রবণ ব্যবহার করুন
নীচের চোখের পাতা টেনে ধরে ওই খাঁজের মধ্যে ১ ফোঁটা ফেলুন। লক্ষ্য রাখবেন যেন ড্রপারটি চোখ স্পর্শ না করে।
এ্যাজিথ্রোমাইসিন
এ্যাজিথ্রোমাইসিন একটি জীবাণুনাশক যা ট্রাকোমাসহ অনেক সংক্রামণের চিকিৎসা করে, যার জন্য শুধুমাত্র ১টি মাত্রাই প্রয়োজন হয়। যেখানে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ট্রাকোমা নির্মূল করার প্রচারণা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সেখানে ট্রাকোমার বর্তমান সংক্রামণ নিরাময় করতে এবং একই সাথে নতুন সংক্রামণ রোধ করতে পুরো এলাকাবাসীর জন্য হয়তো এ্যাজিথ্রোমাইসিন দেয়া হতে পারে।
ট্রাকোমার জন্য
৬ মাস বা তার থেকে বড় শিশু, ৪০ কেজি পর্যন্ত। ওজন অনুযায়ী মাত্রার জন্য: প্রতি কেজিতে কমপক্ষে ২০ মিগ্রা করে মাত্র ১ মাত্রা মুখে খেতে দিন, কিন্তু ১০০০ মিগ্রা (১ গ্রাম) এর বেশী দেবেন না।ভিটামিন এ, রেটিনল
ভিটামিন এ রাতকানা রোগ ও জেরোপথালমিয়া প্রতিরোধ করে ।
যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন এ পেতে, আমাদের প্রচুর পরিমাণে হলুদ ফল বা সবজি, গাঢ় সবুজ শাক-সবজি, এবং ডিম, মাছ, ও যকৃতের মতো খাবার খাওয়া প্রয়োজন। যে সমস্ত এলাকায় রাত কানা রোগ ও জেরোপথালমিয়া সচরাচর দেখা যায় এবং এই খাবারগুলো যথেষ্ট পরিমাণে খাওয়া সবসময় সম্ভব হয় না সেখানে শিশুদেরকে প্রতি ৬ মাস পর পর ভিটামিন এ খাওয়ান।
সুপারিশকৃত পরিমাণের চেয়ে বেশী ব্যবহার করবেন না। ক্যাপসুল, বড়ি, বা তেল থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন এ বিপজ্জনক হতে পারে। বালিকা বা নারী যাদের গর্ভবতী হবার সম্ভাবনা আছে তাদের বা গর্ভবস্থার প্রথম ৩ মাসের মধ্যে কোন নারীকে প্রাপ্তবয়স্কদের নিয়মিত মাত্রা ২০০,০০০ ইউনিট দেবেন না কারণ তা গর্ভের শিশুর ক্ষতি করতে পারে। গর্ভবতী নারীদের জন্য ভিটামিন এ বড় একটি মাত্রায় না দিয়ে ছোট ছোট অনেকগুলো মাত্রায় দেয়া হয়।
ক্যাপসুল বা বড়ি গিলে খান। কিন্তু বাড়ন্ত শিশুদের জন্য বড়ি গুড়ো করে অল্প খানিকটা বুকের দুধের সাথে মিশান। বা একটি ক্যাপসুল কেটে এর ভিতর থেকে তরল পদার্থগুলো চেপে বের করে শিশুর মুখে দিয়ে দিন।
শিশুদের মধ্যে ভিটামিন এ-এর অভাব রোধ করতে
শিশুদের মধ্যে ভিটামিন এ-এর অভাব রোধ করতে
৬ মাস থেকে ১ বছর: এক বার ১০০,০০০ ইউনিট মুখে খাওয়ান।১ বছরের বেশী: এক বার ২০০,০০০ ইউনিট মুখে খাওয়ান। প্রতি ৬ মাস পর পর পুনরাবৃত্তি করুন।
রাতকানা রোগের চিকিৎসা করতে
যদি একজনের ইতোমধ্যেই দেখার সমস্যা থাকে বা রাতকানা রোগের অন্যান্য সমস্যা দেখা যায়, তবে ৩ মাত্রা দেয়া হয়। প্রথম মাত্রাটি সাথে সাথে দেয়া হয়, ২য় মাত্রাটি দেয়া হয় ১ দিন পরে এবং ৩য় মাত্রাটি দেয়া হয় কমপক্ষে ২ সপ্তাহ পরে।
৩টি মাত্রার প্রতিটি মাত্রার জন্য:
৬ মাসের নীচে: প্রতি মাত্রায় ৫০,০০০ ইউনিট মুখে খাওয়ান।৬ মাস থেকে ১ বছর: প্রতি মাত্রায় ১০০,০০০ মুখে ইউনিট খাওয়ান।
হামযুক্ত শিশুদের জন্য
ভিটামিন এ হামের দু'টো সাধারণ জটিলতা - নিমোনিয়া ও অন্ধত্ব রোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
৬ মাসের নীচে: দু'দিনের জন্য দিনে একবার মুখে ৫০,০০০ ইউনিট খাওয়ান।১ বছরের উপর: দু'দিনের জন্য দিনে একবার মুখে ২০০,০০০ ইউনিট খাওয়ান।
শিশুটি যদি ইতোমধ্যেই ভিটামিন এ-এর একটি মাত্রা বিগত ৬ মাসে গ্রহণ করে থাকে তবে তাকে এই পথ্যটি ১ দিনের জন্য দিন। হামযুক্ত কেউ যদি তীব্র পুষ্টিহীনতায় ভোগে বা ইতোমধ্যেই তাদের দৃষ্টিশক্তি হারাতে শুরু করেছে তবে ২ সপ্তাহ পর তাদেরকে ভিটামিন এ-এর আরও একটি মাত্রা দিন।