Hesperian Health Guides
হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপ: ঔষধ
প্রতিটি ব্যক্তির ক্ষেত্রে উচ্চ রক্ত চাপের ঔষধ সামান্য ভিন্নভাবে কাজ করে এবং প্রতিটি ব্যক্তির হৃৎপিণ্ডের সমস্যা ভিন্ন হতে পারে। স্বাস্থ্য কর্মীরা যখন উচ্চ রক্ত চাপ ও অন্যান্য হৃৎপিণ্ডের সমস্যার চিকিৎসা করে তারা সাধারণতঃ একটু নীচু মাত্রায় শুরু করে। সেই ব্যক্তির জন্য তা কিরকম কাজ করে এবং রক্ত চাপ যথেষ্ট নীচে নামে কিনা তার উপর নির্ভর করে ঔষধটির মাত্রা একটু বাড়িয়ে বা একটি কমিয়ে তার সমন্বয় করা হয়। অন্য আর একটি ঔষধ হয়তো প্রথমটির সাথে যোগ করা হতে পারে বা প্রথমটির পরিবর্তে ব্যবহৃত হতে পারে। রক্ত চাপ যদি স্বাভাবিক স্তরে থাকে তবে তার মানে হতে পারে যে আপনি আপনার পরিস্থিতির জন্য ঔষধটির সঠিক মাত্রা ও ধরন ব্যবহার করছেন এবং একে বলা হয় আপনি আপনার রক্ত চাপকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। চিকিৎসা শুরু করার সময়ে প্রতি কয়েক সপ্তাহ পর পর আপনার রক্ত চাপ পরীক্ষা করুন।
স্বাস্থ্য কর্মীরা এই ঔষধের কারণে সৃষ্ট কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকলে তা পরীবিক্ষণ করে, এবং সহজে কোথায় ঔষধ পাওয়া যাবে এবং তা ব্যয়সাধ্য কিনা বা বিনামূল্যে পাওয়া যায় কিনা তাও জানে। ব্যক্তিটি যদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা এর মূল্যের কারণে ঔষধ নেয়া বন্ধ করে দেয় তবে স্বাস্থ্য কর্মী এর সমাধানে কাজ করতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের উচ্চ রক্ত চাপের চিকিৎসায় সাধারণ ঔষধগুলোর মধ্যে আছে:
- হাইডোক্লোরোথিয়াজাইড (এইচসিটিজেড) বা অন্য মূত্রবর্ধক ('জলের বড়ি')
- এ্যমলোডিপিন বা অন্য ক্যালসিয়াম চ্যানেল রোধক (এগুলোর নামগুলো প্রায়শই -ডিপিন দিয়ে শেষ হয়)
- ক্যাপটোপ্রিল, এনালাপ্রিল, বা অন্যান্য এসিই রোধক (এগুলোর নাম প্রায়শই -প্রিল দিয়ে শেষ হয়)
- লোসারটেন বা অন্যান্য এআরবি (এগুলোর নাম প্রায়শই -সারটেন দিয়ে শেষ হয়)
- এ্যটেনোলোল বা অন্যান্য বেটা রোধক (এগুলোর নাম প্রায়শই -লোল দিয়ে শেষ হয়)। উচ্চ রক্ত চাপের চিকিৎসা করতে যখন বেটা রোধক ব্যবহার করা হয় তখন সেগুলো অন্যান্য ঔষধের সাথে যৌথ ভাবে ব্যবহার করা হয়।
এমন ঔষধও আছে যেগুলো হৃদরোগের দু'টি ঔষধকে একটি বড়ির মধ্যে একত্রিত করা হয়েছে। এগুলো হয়তো আলাদা আলাদা করে কেনার থেকে অনেক বেশী উচ্চ মূল্যের হবে, কিন্তু হয়তো বেশী সুবিধাজনক হবে।
কোন কোন ঔষধ একত্রিত করা যায় তা অভিজ্ঞতাসম্পন্ন স্বাস্থ্য কর্মীর কাছ থেকে জানুন। উচ্চ রক্ত চাপের সাথে অন্য আর একটি পরিস্থিতি যেমন কনজেষ্টিভ হার্ট ফেইলিয়ার, উচ্চ কোলেষ্টেরল, ডায়াবেটিস, বা বৃক্কের সমস্যায় ভুগছে এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রতিটি ঔষধ শুরু করার সবথেকে ভাল মাত্রা কতোটুকু তা জানুন।
৬০ বছরের বেশী বয়সী ব্যক্তি যদি প্রথমবারের মতো উচ্চ রক্ত চাপের ঔষধ গ্রহণ করে থাকে তবে সবথেকে নীচু মাত্রা দিয়ে শুরু করুন।
যদি ঔষধে কাজ করছে বলে মনে না হয়, তবে বৃক্কের রোগ হয়েছে কিনা, সঠিক মাত্রায় ঔষধ নেয়ায় সমস্যা কিনা, অন্যান্য কী ঔষধ বা মাদক তারা নেয়, বা থাইরয়েডের সমস্যা আছে কিনা তা জানুন।
পরিচ্ছেদসমূহ
মূত্রবর্ধক ('জলের বড়ি')
হাইডোক্লোরোথিয়াজাইড (এইচসিটিজেড), ক্লোরথালিডোন, স্পাইরোনোল্যাকটোন, বেনড্রোফ্লামেনথাজাইড ট্রাইআমটেরিন, এবং ফুরোসেমাইড হলো মূত্রবর্ধক।
মূত্রবর্ধক ঔষধ ব্যক্তিটিকে আরও বেশী করে মূত্রত্যাগ করার মাধ্যমে শরীরের অতিরিক্ত তরল পদার্থ এবং সোডিয়াম বের করে দিতে বৃক্ককে সাহায্য করে। দেহের মধ্যে কম তরল পদার্থ থাকলে রক্ত চাপ কমে যায়। কোন কোন মূত্রবর্ধক রক্ত নালীগুলোকে আরও প্রশস্ত করে রক্ত চাপ কমায়।
মূত্রবর্ধকগুলো কখনো কখনো কন্জেষ্টিভ হার্ট ফেইলিয়ারের কারণে অস্বাভাবিক স্ফীতির (ইডিমা) চিকিৎসা করতে ব্যবহার করা হয় যদি এটি কিভাবে দেহের উপর প্রভাব ফেলছে তা স্বাস্থ্য কর্মী পরীক্ষাগারে পরীক্ষার ফলফলের সাহায্যে পরীবিক্ষণ করতে পারে।
মাথা ঘুরানো, ঘন ঘন মূত্র ত্যাগ, মাথাব্যথা, পিপাসা অনুভব করা, পেশী সংকোচন, এবং পেট খারাপ হওয়া। বেশীরভাগ লোকই রাতের বেলা ঘন ঘন মূত্রত্যাগ এড়াতে দিনের বেলাতেই মূত্রবর্ধক ব্যবহার করে।
গর্ভবতী নারীদের মূত্রবর্ধক ব্যবহার করা উচিত নয় যদি না অন্য ঔষধ তাদের রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে।
বিপদ চিহ্ন: প্রচুর ফুসকুড়ি, শ্বাস নেয়ায় সমস্যা, গেলায় সমস্যা, এবং তীব্র সন্ধি পীড়া, বিশেষ করে পায়ে। দ্রুত সাহায্য নিন।
মূত্রবর্ধক যেমন এইচসিটিজেড, ক্লোরথালিডোন, এবং ফিউরোসেমাইড দেহ থেকে পটাসিয়াম বের করে দেয়। তাই পটাসিয়ামের অভাব পূরণ করতে প্রায়ই কাঁচকলা, কলা, কমলা, লেবু বা আভোকাডো খান। রক্ত পরীক্ষায় যদি পটাসিয়ামের স্তর নীচু দেখায় তবে কোন কোন ব্যক্তির পটাসিয়ামের বড়ি প্রয়োজন হতে পারে। স্পাইরোনোল্যাকটোন এবং ট্রাইয়ামটেরিন পটাসিয়াম দেহেই ধরে রাখে। পটাসিয়ামের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে এগুলো কোন কোন সময় অন্যান্য মূত্রবর্ধকের সাথে ব্যবহার করা হয় কিন্তু বেশ সতর্কতার প্রয়োজন হবে যদি এসিই রোধক বা এআরবি-এর সাথে ব্যবহার করা হয়।
মূত্রবর্ধকগুলো দেহ থেকে ম্যাগনেসিয়ামও বের করে দেয়। তাই ম্যাগনেসিয়ামের অভাব পূরণ করতে সবুজ শাকসব্জি, দধি, এবং স্কোয়াশের বীচি খান।
মূত্রবর্ধক ব্যবহার শুরু করার কয়েক সপ্তাহ পর পটাসিয়ামের মাত্রা এবং বৃক্কের কর্মক্ষমতা পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে দেখতে হবে, এবং তারপর প্রতি ৬ থেকে ১২ মাস পরপর পরীক্ষা করতে হবে যদি আপনি হাইড্রোক্লেরোথিয়াজাইড নিতে থাকেন, এবং এর থেকেও ঘন ঘন পরীক্ষা করতে হবে যদি আপনি ফিউরোসেমাইড নিতে থাকেন। ফিউরোসেমাইড একটি শক্তিশালী মূত্রবর্ধক এবং ব্যক্তিটিকে খুব ভাল ভাবে পরীবিক্ষণ করতে হবে।
হাইড্রোক্লেরোথিয়াজাইড (এইচসিটিজেড)
হাইড্রোক্লেরোথিয়াজাইড ২৫ মিগ্রা এবং ৫০ মিগ্রার বড়ি আকারে পাওয়া যায়।
উচ্চ রক্ত চাপের জন্য
কয়েক সপ্তাহ পর প্রয়োজনে মাত্রা বাড়িয়ে প্রতিদিন ২৫ মিগ্রা করা যেতে পারে যদি রক্ত চাপ নীচু মাত্রার ঔষধে নিয়ন্ত্রিত না হয়।
এক দিনে ২৫ মিগ্রার বেশী গ্রহণ করবেন না। বেশী নিলে তা আপনার রক্ত চাপ কমাবে না, বরং শুধু এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলোই বাড়াবে।
ক্যালসিয়াম চ্যানেল রোধক
এ্যম্লোডিপিন, নিফেডিপিন, ডিল্টিয়াজেম, এবং ভেরাপামিল হলো ক্যালসিয়াম চ্যানেল রোধক।
ক্যালসিয়াম চ্যানেল রোধক ক্যালসিয়ামকে রক্ত নালী ও হৃৎপিণ্ডের মধ্যে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখে। এর ফলে রক্ত নালীগুলো শিথিল থাকে ও রক্ত চাপ কমতে সাহায্য করে।
এগুলো বুকের ব্যথার (এ্যানজিনা) জন্য ব্যবহার করা হয়।
ডায়াবেটিসযুক্ত ব্যক্তিরা ক্যালসিয়াম চ্যানেল রোধক ব্যবহার করতে পারে।
আম্লোডিপিন এবং নিফেডিপিন গোড়ালী স্ফীতি সৃষ্টি করতে পারে। নোনতা খাবার এড়িয়ে, শরীর চর্চা করে, এবং বসার সময় পা দু'টোকে উঁচু জায়গায় উঠিয়ে রেখে স্ফীতি রোধ করুন। স্ফীতি যদি অব্যহত থাকে তবে আপনাকে হয়তো ঔষধটি পরিবর্তন করতে হতে পারে।
সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন সামান্য মাথা ব্যথা, ঘুম ঘুম ভাব, বা পেট খারাপ কখনো কখনো ঔষধ শুরু করার ১ বা ২ সপ্তাহ পর চলে যায়। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অব্যহত থাকলে আপনার স্বাস্থ্য কর্মীর সাথে কথা বলে ঔষধ পরিবর্তন করুন।
সকল ক্যালসিয়াম চ্যানেল রোধক গর্ভাবস্থায় ব্যবহার করা যাবে না।
নির্দিষ্ট ধরনের কন্জেষ্টিভ হার্ট ফেইলিয়ার এবং আরও কয়েকটি হৃৎপিণ্ডের অবস্থার ক্ষেত্রে ক্যালসিয়াম চ্যানেল রোধক ব্যবহার করা উচিত না।
যারা ক্যালসিয়াম চ্যানেল রোধক নিচ্ছে এবং সাথে স্ট্যাটিনস ও নিচ্ছে তাদের স্ট্যাটিনসের মাত্রা কম করে নেয়া উচিত।
বিপদের লক্ষণ: গায়ে প্রচুর ফুসকুড়ি, বুকে ব্যথা, চেতনা হারানো, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, মুখমণ্ডল, মুখ, বাহু, বা পায়ের যে কোন অংশে স্ফীতি। ততক্ষণাৎ সাহায্য গ্রহণ করুন।
এ্যম্লোডিপিন ৫ মিগ্রা এবং ১০ মিগ্রার বড়ি আকারে পাওয়া যায়।
উচ্চ রক্ত চাপের জন্য
কয়েক সপ্তাহ পর, রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে এসেছে কিনা তা পরিমাপ করে দেখুন। প্রয়োজনে মাত্রা ১০মিগ্রা পর্যন্ত বাড়ানো যাবে।
দিনে ১০ মিগ্রার বেশী নেবেন না।
এসিই রোধক এবং এআরবি
এ্যন্জিওটেনসিন-রুপান্তরকারী এন্জাইম (এসিই) রোধক এবং এ্যন্জিওটেনসিন রিসেপ্টর রোধক দু'ধরনের ঔষধ যেগুলো প্রায় একইভাবে কাজ করে। উচ্চ রক্ত চাপ কমানো, কন্জেষ্টিভ হার্ট ফেইলিয়ার, বা অন্যান্য ধরনের হৃদরোগের জন্য, এবং ডায়াবেটিসযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য তাদের বৃক্ককে রক্ষা করায় সাহায্য করতে উভয় ধরনকেই ব্যবহার করা হয়।
রক্তের মধ্যে যে উপাদানটি রক্ত নালীগুলোকে অনমনীয় এবং চিকন করে এসিই রোধক এবং এআরবি সেগুলোকে রোধ করে। রক্ত নালীগুলো যখন শিথিল ও প্রশস্ত হয় তখন রক্ত চাপ নীচে নেমে যায়।
ক্যাপ্টোপ্রিল, এনালাপ্রিল, লিসিনোপ্রিল হলো এসিই রোধক। লোসারটেন হলো একটি এআরবি।
এসিই রোধক শুষ্ক কাশির সৃষ্টি করতে পারে। আপনার যদি শুষ্ক কাশি দেখা দেয় তবে তার পরিবর্তে একটি এআরবি, যেমন লোসারটেন ব্যবহার করুন, যেটি কাশির সৃষ্টি করে না।
অন্যান্য সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: ফুসকুড়ি, মাথা ঘুরানো, ক্লান্ত অনুভব করা, মাথা ব্যথা, ঘুমাতে সমস্যা, বা দ্রুত হৃদস্পন্দন।
কোন গর্ভবতী নারী বা যে নারী গর্ভবতী হতে যাচ্ছে তাদেরকে এটি দেবেন না। এসিই রোধক এবং এআরবি গর্ভে থাকা একটি শিশুর জন্য বিপজ্জনক।
বৃক্কের সঙ্কটজনক রোগযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন।
এসিই রোধক বা এআরবি নিতে থাকাকালীন ইবুপ্রোফেন এবং অন্যান্য প্রদাহ-নাশক ঔষধ ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন।
বিপদের চিহ্ন: বুকে ব্যথা, শ্বাস নেয়ায় সমস্যা, গেলায় সমস্যা, মুখমণ্ডল, মুখ, বাহু, বা পায়ের যে কোন অংশে স্ফীতি। ততক্ষণাৎ সাহায্য গ্রহণ করুন।
এসিই রোধক এবং এআরবি পটাসিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি করে। এসিই রোধক ব্যবহার শুরু করার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বৃক্কের স্বাস্থ্য ও পটাসিয়ামের মাত্রা পরিমাপ করতে রক্ত পরীক্ষা করা উচিত। এমনকি ব্যক্তিটি সামন্য পরিমাণেও বৃক্কের রোগ থাকলে এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আর যদি ব্যক্তিটি সাথে স্পাইরোনোল্যাকটিক বা ট্রাইয়ামটেরিন-এর যে কোন একটি মূত্রবর্ধক ব্যবহার করে তবে প্রচুর সাবধানতা অবলম্বন করুন এবং রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে পটাসিয়ামের মাত্রা পরীবিক্ষণ করুন।
ক্যাপ্টোপ্রিল
ক্যাপ্টোপ্রিল ২৫মিগ্রা ও ৫০মিগ্রার বড়ি আকারে পাওয়া যায়।
উচ্চ রক্ত চাপের জন্য
প্রাপ্ত বয়স্ক: ক্যাপ্টোপ্রিল অন্য কোন হৃৎপিণ্ডের ঔষধ সাথে ছাড়াই এককভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে, এবং তার শুরুর মাত্রা হলো প্রতিদিন ২৫ মিগ্রা, দু'ভাগে ভাগ করে দিনে ২বার (প্রতিবার ১২.৫ মিগ্রা) করে দিতে হবে।কয়েক সপ্তাহ পর, রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে এসেছে কিনা তার পরিমাপ করুন। প্রয়োজনে মাত্রা বাড়ানো যেতে পারে। পরের মাত্রাটি হলো প্রতিদিন ৫০ মিগ্রা, দু'ভাগে ভাগ করে দিনে দু'বার (প্রতিবার ২৫ মিগ্রা)। প্রয়োজনে মাত্রা বাড়ানো যেতে পারে। পরের মাত্রাটি হলো প্রতিদিন ১০০ মিগ্রা, দু'ভাগে ভাগ করে দিনে দু'বার (প্রতিবার ৫০ মিগ্রা) করে দিতে হবে।
মূত্রবর্ধকের সাথে যদি ক্যাপ্টোপ্রিল ব্যবহার করা হয় বা ব্যক্তিটির বয়স যদি ৬০ বা তার বেশী হয়, তবে শুরুর মাত্রা হবে প্রতিদিন ১২.৫ মিগ্রা, দু'ভাগে ভাগ করে দিনে ২বার দিতে হবে (প্রতিবার ৬.২৫ মিগ্রা করে)।
এক দিনে সর্বমোট ১০০ মিগ্রার বেশী ব্যবহার করবেন না।
এনালাপ্রিল
এনালাপ্রিল ২.৫ মিগ্রা, ৫ মিগ্রা, ১০ মিগ্রা এবং ২০ মিগ্রার বড়ি আকারে পাওয়া যায়।
উচ্চ রক্ত চাপের জন্য
প্রাপ্ত বয়স্ক: এনালাপ্রিল যদি হৃৎপিণ্ডের অন্যান্য ঔষধের সাথে ছাড়া এককভাবে ব্যবহার করা হয় তবে এর স্বাভাবিক শুরুর মাত্রা ৫ মিগ্রা।কয়েক সপ্তাহ পর, রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে এসেছে কিনা জানতে তার পরিমাপ করুন। প্রয়োজনে মাত্রা বাড়ানো যেতে পারে। প্রতিদিন ১০মিগ্রা থেকে ২০মিগ্রা মাত্রায় বেশীরভাগ লোকই স্বাচ্ছন্দ অনুভব করে। মাত্রা যদি ১০মিগ্রার বেশী হয় তবে বড়িটিকে দু'ভাগ করে দিনে দু'বার করে ব্যবহার করলে ভাল কাজ করে।
যদি মূত্রবর্ধকের সাথে এনালাপ্রিল ব্যবহার করা হয়ে থাকে, বা ব্যক্তিটির বয়স যদি ৬০ বছরের উপরে হয় বা বৃক্কের সামান্য রোগ থাকে তবে প্রতিদিন ২.৫মিগ্রা করে শুরু করুন।
দিনে ৪০ মিগ্রার বেশী করে ব্যবহার করবেন না।
লোসারটেন
লোসারটেন ২৫ মিগ্রা, ৫০ মিগ্রা, ১০০ মিগ্রার বড়ি আকারে পাওয়া যায়।
উচ্চ রক্ত চাপের জন্য
প্রাপ্ত বয়স্ক: লোসারটেন অন্য কোন হৃৎপিণ্ডের ঔষধ সাথে ছাড়াই এককভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে, এবং তার শুরুর মাত্রা হলো প্রতিদিন ৫০ মিগ্রা, হয় দিনে একবার বা দু'ভাগে ভাগ করে দিনে ২বার (প্রতিবার ২৫ মিগ্রা) করে নেয়া যায়।কয়েক সপ্তাহ পর, রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে এসেছে কিনা তার পরিমাপ করুন। প্রয়োজনে দিনে ১০০মিগ্রা পর্যন্ত মাত্রা বাড়ানো যেতে পারে, হয় দিনে একবার করে বা দু'ভাগে ভাগ করে দিনে দু'বার (প্রতিবার ৫০ মিগ্রা) করে নেয়া যায়।
যদি মূত্রবর্ধকের সাথে লোসারটেন ব্যবহার করা হয়ে থাকে তবে শুরু করার মাত্রা হলো দিনে একবার প্রতিদিন ২৫মিগ্রা করে।
দিনে ১০০মিগ্রার বেশী করে নেবেন না।
বেটা রোধক
বেটা রোধকগুলো হৃদস্পন্দনকে ধীর করে তোলে যাতে হৃৎপিণ্ড কম বলশক্তি ব্যবহার করে রক্ত পাঠাতে পারে, ফলে রক্ত চাপ কমে যায়। প্রতিদিন যদি নেয়া হয় তবে বেটা রোধক উচ্চ রক্ত চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং বুকের ব্যথায় (এ্যানজিনা) সাহায্য করতে পারে। উচ্চ রক্ত চাপ কমাতে নেয়া বেটা রোধক সাধারণতঃ মূত্রবর্ধকের সাথে বা অন্যান্য ঔষধের সাথে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কোন কোন বেটা রোধক কন্জেষ্টিভ হার্ট ফেইলিয়ারের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এ্যটেনোলোল, মেটোপ্রোলোল, বিসপ্রোলোল, এবং কার্ভেডিলোল হলো বেটা রোধক।
ক্লান্ত অনুভব করা, পেটে গণ্ডগোল, মাথা ব্যথা, মাথা ঘুরানো, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডাইরিয়া, বেহুঁশ হবার অনুভূতি। এগুলো যদি মৃদু হয় তবে কখনো কখনো ঔষধ ব্যবহার শুরু করার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চলে যাবে।
সকল বেটা রোধক ঔষধ গর্ভাবস্থায় ব্যবহার করা যেতে পারে।
ডায়াবেটিসযুক্ত ব্যক্তিদের সতর্কতার সাথে বেটা রোধক ব্যবহার করা উচিত যদি তাদের রক্তে চিনির মাত্রা কম থাকার ঘটনা ঘটে থাকে।
বেটা রোধক এ্যাজমা অবস্থা আরও খারাপ করে তুলতে পারে, তাই এ্যাজমাযুক্ত ব্যক্তিদের এগুলো সর্তকতার সাথে ব্যবহার করতে হবে।
বেটা রোধক নাড়ীর স্পন্দন কমিয়ে ফেলতে পারে। নাড়ীর স্পন্দন যদি প্রতি মিনিটে ৬০এর নীচে হয় তবে এর মাত্রা কমিয়ে দিন।
বিপদ চিহ্ন: বুকে ব্যথা, শ্বাস নেয়ায় সমস্যা, ধীর হৃদস্পন্দন, হাত, পায়ের পাতা বা পা ফুলে ওঠা।
এই ঔষধগুলো নীচু মাত্রায় শুরু করে ক্রমশ প্রতি ১ বা ২ সপ্তাহ পর পর বাড়ানো উচিত। আপনি যদি এই ঔষধগুলোর যে কোনটি বর্তমানে উচ্চ মাত্রায় ব্যবহার করে থাকেন এবং এগুলোর ব্যবহার বন্ধ করা প্রয়োজন তবে এগুলো খুব ধীরে ধীরে কয়েক সপ্তাহ ধরে কমানো উচিত।
এ্যটেনোলোল
এ্যটেনোলোল ২৫মিগ্রা এবং ৫০মিগ্রার বড়ি আকারে পাওয়া যায়
উচ্চ রক্ত চাপের জন্য
প্রাপ্ত বয়স্ক: সাধারণ শুরু করার মাত্রা হলো দিনে ২৫মিগ্রা একবারকয়েকে সপ্তাহ পর রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রেণে আছে কিনা তার পরিমাপ করুন। প্রয়োজনে আরও ২৫মিগ্রা যুক্ত করে দিনে মোট ৫০মিগ্রা পর্যন্ত বাড়ানো যায়। আবারও রক্ত চাপ পরিমাপ করুন এবং প্রয়োজনে ২ সপ্তাহ পর আবারও এর মাত্রা বৃদ্ধি করুন (৭৫মিগ্রা পর্যন্ত প্রতিদিন একবার), এবং আবারও চার সপ্তাহ পর একবার (১০০মিগ্রা পর্যন্ত প্রতিদিন একবার)।
দিনে ১০০মিগ্রার বেশী নেবেন না।
মেটোপ্রোলোল টার্ট্রেট
মেট্রোপ্রোলোল টার্ট্রেট একটি স্বল্পস্থায়ী কার্যক্ষম ঔষধ যা দিনে ২বার নেয়া হয়। এটি দীর্ঘস্থায়ী কার্যক্ষম মেটোপ্রোলোল সাক্সিনেট থেকে ভিন্ন ঔষধ। মেট্রোপ্রোলোল সাধারণতঃ ৫০মিগ্রা এবং ১০০মিগ্রার বড়ি আকারে পাওয়া যায়।
উচ্চ রক্ত চাপের জন্য
কয়েকে সপ্তাহ পর রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রেণে আছে কিনা তার পরিমাপ করুন। প্রয়োজনে বর্তমান পরিমাণের সাথে দিনে আরও ৫০মিগ্রা যুক্ত করুন। আবারও রক্ত চাপ পরিমাপ করুন এবং প্রয়োজনে ২ সপ্তাহ পর আবারও এর মাত্রা একই পরিমাণে বৃদ্ধি করুন। সাধারণ মাত্রা প্রতিদিন ২০০মিগ্রা থেকে ৪০০মিগ্রা, দু'ভাগে ভাগ করে প্রতিদিন ২বার করে নেয়া যায় (প্রতিবার ১০০মিগ্রা থেকে ২০০মিগ্রা)।
এক দিনে ৪০০ মিগ্রার বেশী নেবেন না।
স্ট্যাটিন
সিমভাস্ট্যাটিন, লোভাস্ট্যাটিন, এ্যটোরভাস্ট্যাটিন এবং প্রাভাস্ট্যটিন হলো স্ট্যাটিন।
স্ট্যাটিনগুলো একজন ব্যক্তির যকৃতকে দিয়ে কম পরিমাণে কোলেষ্টেরল তৈরী করায়। অতিরিক্ত কোলেষ্টেরল রক্ত সঞ্চালন সীমিত করে এবং হৃৎপিণ্ডের জন্য রক্ত সঞ্চালন করা কঠিন করে তোলে।
একবার ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়েছে এরকম ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে হার্ট এ্যাটাক এবং স্ট্রোক রোধ করতে স্ট্যাটিন ব্যবহার করা হয়। ডায়াবেটিস, বা হার্ট এ্যাটাক বা স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে এমন অন্য স্বাস্থ্য সমস্যাযুক্ত ব্যক্তির হৃৎপিণ্ডের জরুরী অবস্থা রোধ করতে এগুলো ব্যবহার করা হয়।
যে সমস্ত ব্যক্তিদের এই সঙ্কটজনক সমস্যাগুলো আছে তাদের জন্য স্ট্যাটিন খুব সাহায্যকারী। এগুলো কোলেষ্টেরলের অস্বাস্থ্যকর মাত্রা কমাতেও ব্যবহার করা হয়।
যাদের হার্ট এ্যাটাক হবার ঝুঁকি খুব বেশী তাদের ক্ষেত্রে মাঝারি প্রবলতার স্ট্যাটিন (যেমন সিমভাস্ট্যাটিন) এবং শক্তিশালী উঁচু প্রবলতার স্ট্যাটিন (যেমন এ্যটোরভাস্ট্যাটিন) ব্যবহার করা হয়।
স্ট্যাটিন ঔষধগুলো পেশীর বেদনা সৃষ্টি করতে পারে। তাই বেদনা যদি মৃদু হয় এবং সারা দেহে না হয় তবে এর মাত্রা কমিয়ে অস্বস্তির মাত্রা সীমিত করা যায়। কিন্তু পেশীর ব্যথা যদি তীব্র হয় বা সারা দেহে অনুভূত হয় (ঠিক ফ্লু হবার মতো) তবে স্ট্যাটিন নেয়া বন্ধ করুন এবং একজন স্বাস্থ্য কর্মী দেখান।
সামান্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া যেমন মাথা ব্যথা, পেট খারাপ বা কোষ্ঠকাঠিন্য প্রায়ই দেখা যায় এবং দেহে ঔষধে অভ্যস্ত হয়ে গেলে এগুলো প্রায়ই চলে যায়।
গর্ভাবস্থায় স্ট্যাটিন ব্যবহার করা উচিত নয় এবং এগুলো সাধারণতঃ যে নারী গর্ভধারণ করতে যাচ্ছে তাদেরকে দেয়াও হয় না।
কোন কোন স্ট্যাটিন অন্যান্য ঔষধের সাথে মেশানো উচিত নয়। কখনো কখনো ঔষধ মেশালে একটি বা উভয় ঔষধেরই মাত্রা পরিবর্তীত হয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, যারা এ্যম্লোডিপিন নিচ্ছে তারা ২০মিগ্রার বেশী সিমভাস্ট্যাটিন নিতে পারবে না। আপনি যে সব ঔষধ এখন গ্রহণ করছেন সে সম্পর্কে আপনার স্বাস্থ্য কর্মীকে জানান যাতে সে ঔষধগুলোর পারস্পারিক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে যাচাই করতে পারে।
বিপদের লক্ষণ: তীব্র পেশীর বেদনা বা সারা শরীরকে প্রভাবিত করে এমন পেশীর ব্যথা। স্ট্যাটিন নেয়া বন্ধ করুন এবং একজন স্বাস্থ্য কর্মীকে দেখান।
স্ট্যাটিনস সাধারণতঃ মাঝারি মাত্রায় শুরু করা হয় এবং কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকলে মাত্রা কমানো হয়। এগুলো কোন কোন রক্ত চাপের ঔষধের থেকে ভিন্ন কারণ সেগুলো কম মাত্রায় শুরু করা হয় এবং ধীরে ধীরে সেগুলো বাড়ানো হয়।
স্ট্যাটিন ঘুমাতে যাবার আগে নিলে ভাল কাজ করে।
সিমভাস্ট্যাটিন
সিমভাস্ট্যাটিন ৫মিগ্রা, ১০মিগ্রা, ২০মিগ্রা এবং ৪০মিগ্রার বড়ি আকারে পাওয়া যায়।
হার্ট এ্যাটাকের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে এমন ব্যক্তিদের কোলেষ্টেরল কমাতে ব্যবহার করা হয়।
প্রাপ্ত বয়স্ক: স্বাভাবিক শুরুর মাত্রা ২০ মিগ্রা, প্রতিবার একটি করে।বেশীরভাগ লোকই ১০মিগ্রা থেকে ৪০ মিগ্রা মাত্রা ব্যবহার করতে পারে। অন্যান্য নির্দিষ্ট কিছু ঔষধের সথে সংমিশ্রণ করলে সিমভাস্ট্যাটিনের মাত্রা কম হবে। সিমভাস্ট্যাটিন নেয়া শুরু করার আগে ব্যক্তিটি ব্যবহার করছে এমন সকল ঔষধের বিষয়ে জানা গুরুত্বপূর্ণ।
দিনে ৪০মিগ্রা থেকে বেশী নেবেন না।