Hesperian Health Guides
চোখের জরুরী অবস্থা এবং আঘাত
হেসপেরিয়ান স্বাস্থ্যউইকি > নতুন যেখানে ডাক্তার নেই > চোখে ও দেখায় সমস্যা > চোখের জরুরী অবস্থা এবং আঘাত
কোন কোন চোখের সমস্যা যেমন চোখের আঘাত নিশ্চিতভাবে জরুরী অবস্থা। অন্যান্য চোখের সমস্যাকে কম জরুরী বলে মনে হতে পারে, যেমন অসুস্থ্যতা বা সংক্রামণের চিহ্ন, কিন্তু যদি সেখানে বিপদচিহ্ন দেখা যায়, তবে এগুলোও খুব দ্রুত অন্ধত্বের সৃষ্টি করতে পারে।
চোখ রক্ষা করুন এবং ব্যক্তিটিকে এই বিপদ চিহ্নগুলোর জন্য জরুরী চিকিৎসা সহায়তা গ্রহণ করতে পাঠান:
পরিচ্ছেদসমূহ
বিপদ চিহ্ন
- একটি বা উভয় চোখেই হঠাৎ দৃষ্টিহানি হওয়া
- যে কোন আঘাত যাতে অক্ষিগোলক কেটে যায় বা চোখের পাতা কেটে যায়
- যে কোন আঘাত যাতে চোখের রঙিন অংশটিতে রক্ত জমে যায়
- চোখের পরিষ্কার অংশটিতে (কর্নিয়া) সাদা-ধূসর দাগসহ চোখে তীব্র ব্যথা। সাহায্য গ্রহণ করার পথে জীবাণুনাশক মলম ব্যবহার করে এর চিকিৎসা করুন। এটি কর্নিয়ার উপর একটি আলসার হতে পারে।
- চোখের ভিতরে তীব্র ব্যথা। এটি কনীনিকার প্রদাহ হতে পারে বা এটি এ্যাকিউট গ্লুকোমা হতে পারে।
- চোখের রঙিন অংশে পূঁয
- একটি কোলের শিশু বা বাড়ন্ত শিশুর চোখের মণি ঘোলাটে বা সাদা
- ছোট ছোট দাগ দেখলেই (ফ্লোটারস) এগুলো চোখের জরুরী অবস্থা হবে তা নয়, যদি না এগুলো হঠাৎ করেই আলোর ঝলকানির সাথে সাথে শুরু হয়। যখন চোখের ভিতরের একটি অংশ যার নাম রেটিনা চোখের পিছন দিক থেকে আলগা হয়ে খুলে আসে এটি হতে পারে। তখন দৃষ্টিহীনতা এড়াতে শীঘ্রই অস্ত্রোপচার প্রয়োজন।
- হঠাৎ দ্বৈত দৃষ্টি, বিশেষ করে দু'চোখেই একই সাথে, বেশ কয়েকটি সমস্যার একটি চিহ্ন হতে পারে।
এছাড়াও ৪ দিনের জীবাণুনাশক মলম বা ড্রপ দেয়ার পরও ভাল হয় না এমন সংক্রামণ বা প্রদাহকে জরুরী অবস্থা হিসেবে ধরে নিয়ে তার চিকিৎসা করুন।
চোখে আঘাত
যে কোন ধারালো জিনিস বা কাঁটা, ডালপালা, বা কারখানা বা অন্যান্য কাজে ব্যবহার করতে হয় এমন ধাতব বস্তু যেগুলোর চোখে আঁচর কাটতে পারে সেগুলো চোখে মারাত্মকভাবে ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে। একজন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন স্বাস্থ্য কর্মী দ্বারা চিকিৎসা গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ যাতে ক্ষত থেকে অন্ধত্বর সৃষ্টি না হয়। এমনকি ছোট আঁচড় লাগলে বা কেটে গেলে তা সংক্রামিত হতে পারে এবং সঠিকভাবে তার যত্ন না নিলে তা দৃষ্টির ক্ষতি করতে পারে। অক্ষিগোলকের মধ্যে কোন ক্ষত থাকলে তা বিশেষভাবে মারাত্মক।
যদি কারো ঘুষি, পাথর বা অন্যান্য কঠিন বস্তু দ্বারা জোরে আঘাত লাগে তবে চোখটির জন্য তা বিপদজ্জনক। এবং চোখটি যদি জোরে আঘাত লাগার ১ বা ২দিন পর খুবই বেদনাদায়ক হয় তবে তা এ্যাকিউট গ্লুকোমা হতে পারে।
বিপদ চিহ্ন
- ব্যক্তিটি আঘাতপ্রাপ্ত চোখ দিয়ে ভাল করে দেখতে পায় না।
- চোখের মধ্যে একটি কাঁটা, তীক্ষ্ণ টুকরা, বা অন্য কোন বস্তু চোখের মধ্যে আঁটকে গেলে।
- ক্ষতটি গভীর থাকলে।
- চোখের রঙিন অংশের মধ্যে রক্ত বা পূঁয।
- চোখের মণি উজ্জ্বল আলোতে সাড়া দিয়ে ছোট হয়ে যায় না।
চিকিৎসা
যদি পাওয়া যায় তবে চোখে ব্যবহার করার একটি জীবাণুনাশক তরল কয়েক ফোঁটা প্রয়োগ করুন এবং চোখটিকে একটি কাগজের কাপ বানিয়ে তা দিয়ে ঢেকে দিন, তারপর ধীরে ধীরে বস্তুটির চারপাশে পট্টি লাগিয়ে দিন, বা একটি শক্ত কাগজ দিয়ে একটি চোঙ্গা বানিয়ে ঢেকে দিন। ব্যক্তিটিকে চিকিৎসা সাহায্য নিতে পাঠান।
ব্যক্তিটির যদি এর কোন একটি বিপদ চিহ্ন না থাকে কিন্তু আঘাতপ্রাপ্ত চোখ দিয়ে ভাল করে দেখতে পায় তবে জীবাণুনাশক চক্ষু চিকিৎসা প্রয়োগ করুন, চোখে ব্যবহারের পরিষ্কার ঠুসি দিয়ে হালকা করে চোখ ঢেকে দিন, এবং এক বা দু'দিন অপেক্ষা করুন। কিন্তু চোখের কোন উন্নতি না হলে চিকিৎসা সাহায্য গ্রহণ করুন।
কর্নিয়ার পিছনে রক্তক্ষরণ (হাইফেমা)
চোখের রঙিন অংশে (কনীনিকায়) রক্ত থাকা গুরুতর। রক্ত পরিষ্কার পর্দার (কর্নিয়া) পিছনে আটকে থাকলে তা হয়তো কনীনিকাকেও ঢেকে ফেলতে পারে। ব্যক্তিটি ভালভাবে দেখতে পাবে না এবং হয়তো ব্যথা অনুভব করবে। এই সমস্ত রক্তক্ষরণের কারণ হলো চোখে কোন কিছু দ্বারা জোরে আঘাত করা হয়েছে, যেমন একটি ঘুষি লাগা, বা একটি পাথর দিয়ে আঘাত লাগা। ব্যক্তিটিকে ততক্ষণাৎ একজন চোখ বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠান। যাবার পথে তাকে খারা হয়ে বসতে দিন যাতে রক্তের কারণে তার দৃষ্টি বাধাগ্রস্ত না হয়।
যদি চোখের সাদা অংশে রক্ত জমা হয়, সাধারণতঃ তা বিপজ্জনক নয় এবং তা সাধারণতঃ কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তা চলে যায়।
কর্নিয়ার পিছনে পূঁয (হাইপোপাইয়ন)
চোখের পরিষ্কার আবরণ ও রঙিন অংশের (কনীনিকা) মধ্যে পূঁয জমে যাওয়া চোখের জন্য বিপদের একটি লক্ষণ। পূঁয বলে দেয় যে সেখানে একটি মারাত্মক প্রদাহ রয়েছে। কর্নিয়ার আলসারের কারণে বা চোখের অস্ত্রোপচারের পর এটি হতে পারে। চোখে জীবাণুনাশক চোখের মলমলাগান ব্যক্তিটিকে ততক্ষণাৎ চিকিৎসা সাহায্য গ্রহণের জন্য পাঠান।
রাসায়নিক থেকে চোখের ক্ষত
যখন পরিষ্কারক, কীটনাশক, পেট্রোল বা অন্যান্য জ্বালানী, গাড়ীর ব্যাটারীর এ্যাসিড, সাপের বিষ, চুনের গুঁড়া (চুনা পাথর), বা অন্যান্য রাসায়নিক চোখে যায়, তখন এগুলো চোখে ততক্ষণাৎ ক্ষতের সৃষ্টি করতে পারে।
- চোখে ঢালার জন্য আপনার প্রচুর পরিমাণে পরিষ্কার জল প্রয়োজন হবে।
- ব্যক্তিটিকে শুইয়ে দিন।
- চোখে ঢালতে আপনার প্রচুর পরিমাণে পরিষ্কার জল প্রয়োজন হবে। রাসায়নিক দ্রব্য হয়তো চোখের পাতার নীচে আটকে আছে। আপনি ধীরে ধীরে জল ঢেলে আলতোভাবে চোখ ধোয়ার সময় চোখ ধরে রাখুন বা মেলে ধরুন (আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা অন্য আর একজন ব্যক্তি সাহায্য করতে পারে।
- আপনি রাসায়নিক দ্রব্য ধুয়ে বের করার সময় জলগুলো যেন একচোখ থেকে অন্য চোখে না যায় তার খেয়াল রাখবেন। যদি একটি চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে মাথাটি এমনভাবে কাত করুন যেন জল ঢাললে তা মাথার পাশের দিকে যায়, অন্য চোখটির দিকে না যায়। যদি দু'চোখেই রাসায়নিক গিয়ে থাকে তবে মাথাটা পিছনের দিকে কাত করে নাকের উপর জল ঢালুন যাতে জল একই সময় দু'চোখের দিকেই যায়।
- ধীরে ধীরে চোখের উপর কমপক্ষে ১৫ মিনিট থেকে ৩০ মিনিট জল ঢালতে থাকুন। রাসায়নিক দ্রব্য হয়তো তখনও চোখের ক্ষতি করে যেতে পারে যদিও মনে হতে পারে যে এগুলো ইতোমধ্যেই বের হয়ে গেছে।
- আলতো করে জল ঢালার পর, ক্ষতিগ্রস্ত চোখে জীবাণুনাশক মলম লাগান এবং ব্যক্তিকে চিকিৎসা সহায়তার পাবার জন্য পাঠান।
পুলিশ যখন মরিচের স্প্রে এবং কাদুনে গ্যাসের মতো রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে তখন তা চোখে জ্বালার সৃষ্টি করে বা চোখের ক্ষতি করতে পারে, প্রাথমিক চিকিৎসার সাহায্যের মধ্যে আছে যত দ্রুত সম্ভব সেখান থেকে সরে যাওয়া ও জল দিয়ে চোখে ধোয়া। |
আঘাতপ্রাপ্ত বা সেরে ওঠা চোখকে রক্ষা করা
আঘাত লাগার পর, ব্যক্তিটি যখন জরুরী সাহায্য গ্রহণের জন্য যাচ্ছে তখন একটি কাগজের কাপ বা একটি চোখে বসানোর চোঙ্গা চোখটিকে রক্ষা করতে পারে। চোখের চোঙ্গাটি ব্যক্তিকে ভুলবশত চোখ না ঘষার বিষয়ে স্মরণ করাতে সাহায্য করবে এবং আঘাতটির অবস্থা আরও খারাপ হওয়া থেকে রক্ষা করবে।
একটি চোখের চোঙ্গা তৈরী করুন
১। একটি পরিষ্কার ভারী কাগজ বা পাতলা কার্ডবোর্ড থেকে একটি গোলাকার টুকরা কেটে নিন। | |
২। একটি সরল রেখায় মাঝখান পর্যন্ত এটি কাটুন এবং মাঝখানে একটি ছোট ছিদ্র করুন। | |
৩। একটি চোঙ্গা আকৃতির তৈরী করুন। | |
৪। চোঙ্গাটিকে ভিতর ও বাইরে থেকে টেপ দিয়ে আটকে দিন। | |
৫। আঘাতপ্রাপ্ত বন্ধ চোখটির উপর চোঙ্গাটি রেখে ত্বকের সাথে ভাল করে লেগে থাকে এমন টেপ ব্যবহার করে আটকে দিন। |
আপনি যদি কোন চোঙ্গা বানাতে না পারেন বা চোখের আঘাতটি এতোটা মারাত্মক না হয় তবে একটি চোখের ঠুসি ব্যবহার করুন। একজন ব্যক্তির যদি কোন অস্ত্রোপচার হয়, তবে তাকে তার ঠুসিটি ঘনঘন পরিবর্তন করতে তাকে সাহায্য করুন। সংক্রামণের চিহ্ন যদি থাকে, যেমন লাল হয়ে ওঠা এবং রস বের হওয়া তবে এই চিহ্নই বলে দেয় যে চোখের জরুরী চিকিৎসা প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে চোখ ঢেকে রাখলে অবস্থা আরও খারাপ হয়ে উঠতে পারে।
একটি চোখের পট্টি তৈরী করুন
১। হাত ভাল করে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন। | |
২। হাত দিয়ে চোখ স্পর্শ করবেন না। | |
৩। ব্যক্তিকে উভয় চোখই বন্ধ করতে বলুন আর যে চোখটিতে ঠুসি লাগাতে হবে শুধু সে চোখটিই আপনি ঢেকে দিন। | |
৪। চোখটি সমচতুর্ভুজ (৬ সেন্টিমিটার করে) করে কাটা একটি পরিষ্কার গজ বা খুবই পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ঢেকে দিন। | |
৫। চোখের উপর দিয়ে আরও একটি বা দু'টি স্তর দিয়ে দিন এবং ত্বকের উপর লেগে থাকবে এমন লম্বা আঠাযুক্ত টেপ দিয়ে লাগিয়ে দিন যাতে ঠুসিগুলো জায়গামতো থাকে। |