Hesperian Health Guides

জল ও স্বাস্থ্য

এই অধ্যায়ে

 woman carrying an infant, a bag, and a water jug

জীবনের জন্য জল অত্যাবশ্যকীয়। আমাদের এটি প্রয়োজন, একইভাবে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য যে প্রাণী বা উদ্ভিদের উপর আমরা নির্ভর করে থাকি তাদেরও এটি প্রয়োজন। যে সমস্ত এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে জলের অভাব রয়েছে সেখানে অনেক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়।

  • জল ছাড়া মানুষ খাওয়ার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে খাবার উৎপাদন করতে পারে না, যার ফলে অপুষ্টি দেখা দেয় এবং তার সাথে আরও অনেক স্বাস্থ্য সমস্যাও।
  • মানুষ যখন স্নান করার জন্য জল ব্যবহার করতে পারে না তখন চোখের ও ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়। মানুষ যখন পরিষ্কার থাকতে পারে না তখন অন্যান্য সমস্যাও খুব দ্রুত ছড়ায়।
  • যারা জল সংগ্রহ করে (সাধারণতঃ নারী ও শিশু) তারা তাদের বেশীরভাগ সময়েই জল আনতে যাওয়া ও জল বহন করে আনার মতো ক্লান্তিকর কাজ করে। এর ফলে বিদ্যালয়, ঘরের অন্যান্য কাজ, বা সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য খুব অল্পই সময় থাকে।

যে জল পান করার জন্য নিরাপদ

পর্যাপ্ত পরিমাণ জল ছাড়াও মানুষের পান করার জন্য নিরাপদ জল প্রয়োজন, যা বিপজ্জনক জীবাণু এবং ক্ষতিকারক রাসায়নিক মুক্ত।

NWTND was Page 17-1.png
  • হেপাটাইটিস এ, টাইফয়েড জ্বর, এবং অন্যান্য মারাত্মক রোগের সৃষ্টি করে।
  • ডাইরিয়া, যা থেকে জলশূন্যতার সৃষ্টি হয় এবং বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে।
  • শিস্টোসোমিয়াসিসের মতো সংক্রামণ ঘটাতে পারে যা রক্তাল্পতা ও অপুষ্টির কারণ ঘটাতে পারে।


নীচে জলকে নিরাপদ করার বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যাখ্যা করা হলো। আপনার জনগোষ্ঠীর জন্য জলের দূষণ করা বা একে দুষ্প্রাপ্য করে তোলা রোধ করাও গুরুত্বপূর্ণ।

যথেষ্ট নিরাপদ জল নিয়ে, শিশুরা স্বাস্থ্যবান হয়ে গড়ে ওঠে এবং তাদের ডাইরিয়া হয় অনেক কম।

জল সংগ্রহ করা

জল সম্ভাব্য সবথেকে পরিষ্কার জায়গা থেকে নিতে হবে। নদী থেকে জল সংগ্রহের সময়:

 একটি কৃষিক্ষেত ও গ্রামের পাশে নদী, যেখানে গরু মলত্যাগ করছে, আবর্জনা ভাসছে, এবং এক ব্যক্তি এর মধ্যে কাপড় ধুচ্ছে
যে কৃষিক্ষেতে রাসায়নিক কীটনাশক বা সার ব্যবহার করা হয় সেখান থেকে উপরের দিক থেকে সংগ্রহ করুন
যেখানে মানুষ বা প্রাণী মলত্যাগ করে সেখান থেকে উপরের দিক থেকে সংগ্রহ করুন
যেখানে মানুষ স্নান করে, বা থালাবাটি বা কাপড় ধোঁয় সেখান থেকে উপরের দিক থেকে সংগ্রহ করুন
ঘরবাড়ি থেকে কোন দূষণ (আবর্জনা, গ্যাস, বা তেল) থেকে উপরের দিক থেকে সংগ্রহ করুন


বৃষ্টির জল সংগ্রহ করা

 চালা থেকে ঝুলে থাকা বাঁশের মাধ্যমে বৃষ্টির জল সংগ্রহ করা

চালা থেকে ঘরের পাশে রাখা কোন পাত্রে বৃষ্টির জল সংগ্রহ করা খুবই সহজ। টিনের বা ঢেউ খেলানো ধাতবের চালা বৃষ্টির জল ধরার জন্য সবথেকে ভাল। জলকে পানের জন্য নিরাপদ করতে হলে একে পরিশোধিত করতে হবে (নীচে দেখুন) কারণ চালার উপর হয়তো ময়লার মধ্যে জীবাণু থাকতে পারে, বা পাখী বা অন্যান্য প্রাণীর বিষ্ঠা থাকতে পারে। যাইহোক, সীসা, এ্যাসবেসটস, বা টারের তৈরী চালা থেকে সংগ্রহ করা জল ব্যবহার করবেন না, কারণ এগুলোর মধ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক আছে যার ফলে এগুলোর উপর থেকে সংগৃহিত জল পানের জন্য নিরাপদ নয়। বৃষ্টির জল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করার সময় পাত্রটি পরিষ্কার কিনা, এবং তা তেল বা কীটনাশক রাখার কাজে কখনোই ব্যবহার করা হয়নি সেবিষয়ে নিশ্চিত হয়ে নিন।

জলকে পানের জন্য নিরাপদ করা

ডাইরিয়া ও অন্যান্য রোগ রোধ করার সবথেকে ভাল উপায়গুলোর একটি হচ্ছে এটিকে পানের জন্য নিরাপদ করা। যে কোন ধরনের উৎস থেকে সংগ্রহ করা জলকে পরিশোধিত করতে হবে যদি তাতে কোন জীবাণু থেকে থাকে তবে তা নির্মূল হবে। এমনকি নলের মাধ্যমে বাহিত, চৌবাচ্চা, বা কূয়ার জলকে পরিষ্কার দেখালেও এটি দূষিত হতে পারে বা এর পরিশোধন প্রয়োজন।

কোন ধরনের জল পরিশোধন পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে সেবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় আপনার কতটুকু জল প্রয়োজন, এটি কী দ্বারা দূষিত হয়েছে, এবং কোন কোন উপকরণ সহজলভ্য হবে সেবিষয়ে ভাবুন। আপনার এলাকায় একটি নির্দিষ্ট সমস্যা বিদ্যমান বলে যদি আপনার জানা থাকে তবে কোন পদ্ধতি ব্যবহার করবেন তার সিদ্ধান্ত গ্রহণে নীচের তালিকাচিত্রটি আপনাকে সাহায্য করবে। যে পদ্ধতি আপনি ব্যবহার করবেন তা পরিবর্তীত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি হয়তো একটি পদ্ধতি ঘরে ব্যবহার করতে পারেন এবং যখন মাঠে কাজ করেন তখন অন্য আর একটি পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারে।

সমস্যা বিশোধনের পদ্ধতি জীবাণুনাশকরণ পদ্ধতি
কাপড়ের ছাঁকনি কয়লার ছাঁকনি ফুটানো ক্লোরিন সূর্যালোক লেবু বা জামির লেবুর রস
ভাইরাস (যেমন হেপাটাইটিস এ এবং টাইফয়েড)
NWTND was Page 19-1.png
NWTND was Page 19-1.png
NWTND was Page 19-1.png
জীবাণু (যেমন সিগেলা এবং ই কোলাই)
NWTND was Page 19-1.png
NWTND was Page 19-1.png
NWTND was Page 19-1.png
NWTND was Page 19-1.png
এ্যামিবা
NWTND was Page 19-1.png
NWTND was Page 19-1.png
গার্ডিয়া
NWTND was Page 19-1.png
NWTND was Page 19-1.png
NWTND was Page 19-1.png
NWTND was Page 19-1.png
ক্রিপ্টোস্পোরিডিয়া
NWTND was Page 19-1.png
NWTND was Page 19-1.png
কলেরা
NWTND was Page 19-1.png
NWTND was Page 19-1.png
NWTND was Page 19-1.png
NWTND was Page 19-1.png
NWTND was Page 19-1.png
NWTND was Page 19-1.png
এই তালিকাচিত্রে কোন কোন জীবাণু বা পরজীবিগুলো কোন কোন ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে নির্মূল করা যায় তা দেখায়। তালিকাচিত্রে জলের ফোঁটার চিহ্ন মানে হলো যে এই পদ্ধতি ঐ জীবাণু নির্মূলের জন্য কার্যকর।


আপনি যেখানে বাস করেন সেখানে যদি একটির বেশী জল-বাহিত রোগের কারণ থাকে (প্রায় সময়ই তাই ঘটে থাকে) তবে দু’টি পদ্ধতি একত্র করাই সবথেকে ভাল সমাধান: বিশোধন এবং জীবাণুনাশকরণ।

জল ছাঁকা

জলকে নিরাপদ করতে ছাঁকার অনেক উপায় আছে। কাপড় এবং কয়লার ছাঁকনির কথা নীচে বলা হলো। অন্যান্য ধরনের ছাঁকনি যেমন ধীর বালু এবং সিরামিক ছাঁকনিরর কথা পরিবেশ স্বা্স্থ্য বিষয়ে জনগোষ্ঠীর জন্য একটি সহায়িকা-এর অধ্যায় ৬এ আলোচনা করা হয়েছে।

আপনার জল যদি পরিষ্কার না থাকে, তবে জলকে প্রথমে কয়েক ঘন্টার জন্য একটি পাত্রে থিতু হতে দিন যাতে ময়লা, কঠিন বস্তু, এবং পরজীবিগুলো পাত্রের নীচে পড়ে। এরপর উপরের পরিষ্কার জল ছাঁকনির মধ্যে ঢালুন। চেষ্টা করুন যাতে পাত্রের নীচে থিতু হওয়া ময়লাগুলোকে বেশী ঘাঁটানো না হয়। তারপর পাত্রটিকে পরিষ্কার করুন।

কাপড়ের ছাঁকনি

বাংলাদেশ ও ভারতে মানুষ পানীয় জল থেকে কলেরার জীবাণু সরাতে খুব সূক্ষ্ম বুননের কাপড়ের তৈরী একটি ছাঁকনি ব্যবহার করে। কলেরার জীবাণু প্রায়ই জলের মধ্যে বাস করা কোন ক্ষুদ্র জীবাণুর সাথে লেগে থাকে, এবং এই জীবাণুগুলোকে সরাতে পারলেই বেশীরভাগ কলেরার জীবাণু অপসারিত হবে। আপনি রুমাল, লিনেন, বা অন্যান্য বস্ত্র যেমন শাড়ি তৈরীর জন্য কাপড় ব্যবহার করে ছাঁকনি তৈরী করতে পারেন। পুরানো কাপড় ভাল কাজ করে কারণ জীর্ণ জমিন বুননের ফাঁকগুলোকে আরও ছোট করে ফেলে এবং ভাল ছাঁকার কাজ করে।

দু’জন নারী একটি কাপড়ের মধ্যে দিয়ে জল ঢেলে একটি ভাণ্ডের মধ্যে রাখছে
  1. জলগুলোকে একটি পাত্রের থিতু হতে দিন যাতে কঠিন পদার্থগুলো তলায় গিয়ে জমা হয়।
  2. কাপড়টিকে ৪বার ভাজ করুন এবং সেটিকে অন্য আর একটি পাত্র বা কলশির মুখে টেনে ধরুন বা বেঁধে দিন।
  3. প্রথম পাত্র থেকে কাপড়ের মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে দ্বিতীয় পাত্রে জল ঢালুন। সবসময় কাপড়ের একই পাশ ব্যবহার করুন, নতুবা জীবাণুগুলো হয়তো জলে মিশে যেতে পারে।
  4. কাপড়টি ব্যবহার করার পর এটিকে ধুয়ে রোদে শুকান। এর ফলে কাপড়ে থাকে যে কোন জীবাণু মরে যাবে। বর্ষার সময় ব্লিচ ব্যবহার করে কাপড়টিকে জীবাণুমূক্ত করুন।

কয়লার ছাঁকনি

কয়লার ছাঁকনি তৈরী করতে আপনার দু’টি পরিষ্কার ধাতব বা প্লাষ্টিকের বালতি, এবং একটি হাতুড়ি, ১ বা ২টি বড় পেরেক, এক বালতি অমসৃণ বালি, এবং এক বালতির একচতুর্থাংশ কাঠ কয়লার প্রয়োজন হবে।

  1. যে কোন একটি বালতির তলায় ফুটা করুন। বালতিটি ধুয়ে নিন। এটিই হবে ছাঁকনি বালতি।
  2. বালি জলে ধুয়ে পরিষ্কার করুন যতক্ষণ পর্যন্ত না ফেলে দেয়া জল পরিষ্কার দেখায়।
  3. ছাঁকনি বালতিতে ৫সেমি গভীর করে ধোয়া বালি ভরুন, এবং এর উপর জল ঢালুন। ছিদ্রগুলোর মধ্য দিয়ে জল বের হয়ে আসার কথা। যদি কোন জল বের হয়ে না আসে তবে ছিদ্রগুলোকে আরও বড় করুন। যদি বালি বের হয়ে আসে তবে ছিদ্রগুলো বেশী বড় হয়ে গেছে। যদি তাই হয় তবে বালি সরিয়ে বালতির তলায় একটি পাতলা কাপড় বসিয়ে তারপর বালিগুলো আবার বালতিতে ভরুন।
  4. কয়লাগুলোকে ছোট করে ভাঙ্গুন। সক্রিয় করা কয়লা সবথেকে ভাল কাজ করে, কিন্তু সাধারণ কাঠ কয়লাও কাজ করবে। কখনোই কয়লার গুঁড়োর গুলি ব্যবহার করবেন না, কারণ এগুলো বিষ!
  5. ভাঙ্গা কয়লাগুলোকে বালতিতে থাকা বালির উপর ৮ সেমি পর্যন্ত ভরুন। তারপর বালতিতে আরও বেশী ধোয়া বালি ভরুন যাতে এটি বালতির উপর থেকে ১০সেমি নীচ পর্যন্ত পূর্ণ হয়।
  6. দ্বিতীয় বালতির উপর ২টি কাঠি বসান এবং ছাঁকনি বালতিটিকে এই কাঠি দু’টির উপর বসান। ছাঁকনি বালতির মধ্য দিয়ে জল ঢালুন। যখন সংগ্রহ বালতিতে পরিষ্কার জল আসবে তখন বুঝবেন যে ছাঁকনিটি ব্যবহার করার জন্য প্রস্তুত।
  7. ছাঁকনির মধ্যে দিয়ে জল ঢালার আগে জলগুলোকে থিতু হতে দিন।


কয়লার ছাঁকনির মধ্যে দিয়ে জল ঢালা হচ্ছে
ছাঁকনি বালতি
ফাঁকা ১০ সেমি
বালি
৮ সেমি কয়লা
৫ সেমি বালি
বালতি রাখার জন্য লাঠি
পরিষ্কার সংগ্রহ বালতি

যেহেতু এই ছাঁকনির মধ্যে আঁটকে থাকা জীবাণুগুলো কয়লার মধ্যে বৃদ্ধি পাবে, তাই ছাঁকনিটি যদি প্রতি দিন ব্যবহার করা হয় তবে কয়েক সপ্তাহ পর পর কয়লাগুলোকে বের করে ধোয়া ব ছাঁকনিটি যদি কয়েক দিনের জন্য ব্যবহার করা না হয় তবে যে কোন সময় ধোয়া গুরুত্বপূর্ণ। কয়লা পরিষ্কার করতে এটিকে ছাঁকনি থেকে বের করে এর উপরে জল ঢালুন যতক্ষণ না জলগুলো খুব দ্রুত নেমে যায়। এটিকে শুকাতে দিন, যদি সম্ভব হয় তবে কড়া সূর্য্যে শুকান। তারপর কয়লাগুলোকে আবারও বিশোধকের মধ্যে ভরুন।

ছাঁকার পরও জলকে ফুটিয়ে, ক্লোরিন যুক্ত করে, বা সূর্যালোক-এ রেখে জীবাণুমূক্ত করা ভাল।

সূর্যালোক

NWTND was Page 23-1.png
জলকে ১ মিনিটের জন্য ফুটালে এতে থাকা সকল জীবাণু মরে যায় এবং জলকে পানের জন্য নিরাপদ করে।

জল ফুটানো

জলকে দ্রুত ফুটান। চুলা থেকে পাত্রটি নামানোর আগে পুরো এক মিনিটের জন্য জল ফুটান। উঁচু পাহাড় এলাকায় জলকে অবশ্যই কমপক্ষে ৩ মিনিট ফুটাতে হবে।

ফুটানোর পর হয়তো জলের স্বাদের পরিবর্তন হবে, বিশেষ করে যদি এটিকে কাঠের আগুনে ফুটানো হয়। আপনার যদি স্বাদটি পছন্দ না হয় তবে, ঠাণ্ডা করা জলগুলোকে একটি বোতলে ভরুন এবং সেটিকে ঝাঁকান। বোতল ঝাঁকালে জলের সাথে বাতাস যুক্ত হবে এবং স্বাদের উন্নতি হবে।

খাবার রান্না করার পর কিন্তু আগুন নিভে যাওয়ার আগে জল ফুটানো কম জ্বালানী ব্যবহার করার একটি উপায় হতে পারে।

ক্লোরিন

জল জীবাণুমূক্ত করতে কতটুকু ক্লোরিন লাগবে তা নির্ভর করে জল কতটুকু দূষিত হয়েছে তার উপরে। জলের মধ্যে যত বেশী জীবাণু থাকবে তত বেশী ক্লোরিন প্রয়োজন হবে ওগুলোকে মেরে ফেলতে। যখন সঠিক পরিমাণ ব্যবহার করা হবে তখনও জল থেকে সামান্য ক্লোরিনের গন্ধ আসবে এবং এতে সামান্য ক্লোরিনের স্বাদ থাকবে। এই গন্ধ ও স্বাদ আপনাকে বলে দেয় যে জলগুলো পান করার জন্য নিরাপদ। এতে যদি অতিরিক্ত ক্লোরিন থাকে তবে এর গন্ধ ও স্বাদ উভয়ই খুব কটু ও অপ্রীতিকর হবে।

ক্লোরিন বিভিন্ন পরিমাণে পাওয়া যায়। নীচে দেয়া তালিকায় ৫% ক্লোরিনযুক্ত (সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট) গৃহস্থালীর ব্লিচ ব্যবহার করে কিভাবে জল নির্বীজকরণ করা যায় তা দেখানো হলো। আপনার ব্লিচের মধ্যে কত শতাংশ ক্লোরিন আছে তা মোড়কের গায়ের লেখা থেকে দেখে নিন। ব্লিচটি যদি ৩% ক্লোরিন হয় তবে আপনাকে আরও বেশী ব্যবহার করতে হবে। আপনার ব্লিচের লেবেলে যদি জল নির্বীজকরণের নির্দেশনা থাকে তবে সে নির্দেশনা পালন করুন। যে ব্লিচের মধ্যে সাবান বা সুগন্ধি মিশানো থাকে সেগুলো ব্যবহার করবেন না।

জল যদি ঘোলা থাকে বা এতে প্রচুর পরিমাণে নিরেট বস্তু থাকে তবে ক্লোরিন ব্যবহার করার আগে ভাল করে ছাঁকুন।

জল ব্লিচ যুক্ত করুন (৫%)
১ লিটার বা ১ কোয়ার্টের জন্য
NWTND was Page 23-2.png
NWTND was Page 23-3.png ২ ফোটা
১ গ্যালন বা ৪ লিটারের জন্য
NWTND was Page 23-4.png
NWTND was Page 23-5.png ৮ ফোটা
৫ গ্যালন বা ২০ লিটারের জন্য
NWTND was Page 23-6.png
NWTND was Page 23-7.png আধা চাচামচ
একটি ২০০ লিটার ব্যারেলের জন্য
NWTND was Page 23-8.png
NWTND was Page 23-9.png ৫ চাচামচ

সঠিক পরিমাণে ক্লোরিন যুক্ত করার পর ভাল করে ঘাঁটান এবং পান করার আগে কমপক্ষে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তালিকায় দেয়া পরিমাণ অনুযায়ী ক্লোরিনযুক্ত করার পর জল থেকে যদি সামান্য ক্লোরিনের গন্ধ না আসে বা স্বাদ না পাওয়া যায় তবে একই পরিমাণ আবারও জলের সাথে মিশান। ভাল করে ঘাঁটান এবং পান করার আগে অপেক্ষা করুন।

NWTND was Page 24-1.png

সূর্যালোক

সূর্যালোক (সৌর নির্বীজন) ভাল কাজ করে বিষুবরেখার কাছে অবস্থিত দেশগুলোতে, কারণ ঐসব জায়গায় সূর্য্য জোরালোভাবে আলো দেয়। আপনি যত উত্তরে বা দক্ষিণে যাবেন ততই সূর্য্যের আলোর কাজ করতে বেশী সময় প্রয়োজন হবে।

জলকে প্রথমে ছেঁকে পরিষ্কার করে নিলে একে দ্রুত নির্বীজিত করা যাবে। একটি প্লাস্টিকের গ্লাস বা বোতল, বা একটি প্লস্টিকের থলি পরিষ্কার করুন। পরিষ্কার সোডার বোতল ব্যবহার করা সবথেকে ভাল। বোতল অর্ধেক ভর্তি করুন, তারপর এটিকে ২০ সেকেন্ড ধরে ঝাঁকান। এর ফলে জলে বাতাসের বুদবুদ যুক্ত হয় যার ফলে জলকে দ্রুত নির্বীজকরণ করায় সাহায্য করবে। তারপর বোতলকে পুরো ভর্তি করুন। বোতলটিকে এমন জায়গায় রাখুন যেখানে কোন ছায়া নেই এবং মানুষ এবং প্রাণী এটিকে ঘাঁটাবে না, যেমন কোন ঘরের ছাদ। বোতলটিকে কমপক্ষে ৬ঘন্টা সূর্য্যের মধ্যে রেখে দিন, বা আবহাওয়া মেঘযুক্ত থাকলে ২ দিনের জন্য রেখে দিন।

 অর্ধেক করা একটি রসালো লেবুর দু’টি টুকরা এবং এক লিটার বোতল
প্রতি লিটার জলে ১টি জামির বা লেবু ব্যবহার করুন

লেবু বা জামিরের রস

একটি লেবু বা জামিরের রস এক লিটার পানীয় জলের মধ্যে মিশান এবং একে ৩০মিনিটের জন্য থিতু হতে দিন। রসে থাকা অম্ল বেশীরভাগ কলেরা এবং অন্যান্য জীবাণুকে মেরে ফেলবে। এই পদ্ধতি খুব বেশী ভাল নয় কারণ অনেক জীবাণুই জলে থেকে যাবে, কিন্তু এটি কোন রকম প্রক্রিয়াজাত না করা থেকে অনেক ভাল, বিশেষ করে যে সমস্ত এলাকায় কলেরা আছে।

নিরাপদে জল সংরক্ষণ করা

জলকে ছাঁকা বা নির্বীজিত করার পর অবশ্যই একে নিরাপদে সংরক্ষণ করতে হবে। অন্যথায় এটি সহজেই আবারও দূষিত হয়ে যেতে পারে। ফাঁটা দেয়ালযুক্ত চৌবাচ্চায় রাখা জল নিরাপদ নাও হতে পারে। একইভাবে ঢিলা, ভালভাবে তৈরী না করা, বা ঢাকনা না থাকা পাত্রে জল রাখলে তা আবারও জীবাণু দ্বারা দূষিত হয়ে যেতে পারে।

ঢাকনাযুক্ত চৌবাচ্চা এবং জলাধারগুলো জল সংরক্ষণের জন্য খোলা চৌবাচ্চা থেকে অনেক বেশী নিরাপদ কারণ মশা ও শামুক বন্ধ পাত্রের মধ্যে বাস করতে পারে না। যেখানে জল ব্যবহার করা হবে তার কাছাকাছি জল সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করুন।

যদি নোংরা কাপ, নোংরা হাত দ্বারা স্পর্শ করা হয়, বা যখন নোংরা পাত্রে জল ঢালা হয়, বা যখন ময়লা বা ধুলা জলের মধ্যে মেশে তখন সংরক্ষিত জল অনিরাপদ হয়ে যেতে পারে।

সংরক্ষণের সময় জলের দূষণ রোধ করতে:

একটি লম্বা-হাতলযুক্ত চামচসহ একটি জলের পাত্র
  • পাত্রের মুখ স্পর্শ না করে জল ঢালুন, অথবা পাত্র থেকে জল উঠানোর জন্য একটি পরিষ্কার লম্বা-হাতলযুক্ত চামচ ব্যবহার করুন। খেয়াল রাখুন যেন চামচটি অন্য কোন কিছু স্পর্শ না করে, নতুবা এটি যদি আবার ব্যবহার করা হয় তবে জল দূষিত হয়ে যাবে।
  • পাত্রটিকে প্রতি ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পর পর খালি করে গরম জল দিয়ে এটিকে পরিষ্কার করুন।
  • পাত্রটিকে সবসময় ঢেকে রাখুন।
  • জল পান করার কাপগুলোকে পরিষ্কার রাখুন।
  • কীটনাশক বা বিষাক্ত রাসায়নিক রাখা হয়েছে এমন পাত্রে কখনোই জল রাখবেন না।
  • সম্ভব হলে স্বল্প সময়ে ব্যবহারের জন্য আপনার প্রয়োজনের অতিরিক্ত জল পরিশোধন করবেন না। পান করা ও খাবার প্রস্তুত করার জন্য সাধারণতঃ প্রতি জনের জন্য প্রায় ৫ লিটার জল প্রয়োজন হয়।
NWTND was Page 25-2.png সরু গলার পাত্র আরও বেশী পরিমাণ জীবাণু দূরে রাখে, তাই জল সংরক্ষণ করার জন্য সবথেকে নিরাপদ।

সকলের জন্য জল

যথেষ্ট পরিমাণ ভাল জল থাকার উপর ভাল স্বাস্থ্য নির্ভর করে। এর মানে হলে জলে আমাদের অধিকারের উপর আমাদের স্বাস্থ্যের অধিকার নির্ভর করে। একদিকে, আমরা আমাদের জলের উৎসকে রক্ষা করার জন্য কাজ করতে পারি, আর একে নিরাপদ করার জন্য পরিশোধন করতে পারি, কিন্তু অন্যদিকে খনিখনন, সেঁচের জলের সাথে ভেসে আসা সার ও কীটনাশক, বা কারখানাগুলো যদি আমাদের জলকে দূষিত করতে থাকে তবে আমাদের স্বাস্থ্য তখনও হুমকির মুখে থাকবে।

সরকার ও জনগোষ্ঠীগুলোকে আমাদের জল ব্যবস্থা রক্ষা, উন্নত, এবং বিস্তৃত করার জন্য একত্রে কাজ করতে হবে যাতে এগুলো মানুষকে যথেষ্ট পরিমাণে নিরাপদ জলের যোগান দেয়। ব্যক্তি মালিকানার কোম্পানীগুলো বলে যে আমরা যদি তাদেরকে আমাদের জলের নিয়ন্ত্রণ নিতে দেই, তবে তারা সরকারের থেকে ভাল পরিষেবা দিতে পারবে এবং তারপরও মুনাফা অর্জন করতে পারবে। এটিকে বলা হয় জল বেসরকারীকরণ। কিন্তু প্রায়শই যা হয় তা হলো জলের মূল্য বেড়ে যায় এবং মানুষ তাদের নিজেদের জলেই তাদের প্রবেশগম্যতা হারায়। এর ফলে মানুষ যখন তাদের চাহিদার তুলনায় কম জল ব্যবহার করে বা তারা যেখান থেকে সম্ভব, এমনকি জলগুলো যদি জীবাণু বা বিষাক্ত রাসায়নিক দ্বারা দূষিত হলেও বিনামূল্যে জল সংগ্রহ করে তখন মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা যায়।

মানুষ ও পরিবেশকে স্বাস্থ্যবান রাখতে আমাদের গণ জল ব্যবস্থার প্রয়োজন যা সকলের জন্য পান করা নিরাপদ এমন জল সরবরাহ করবে। জনগণ নিয়ন্ত্রিত জল ব্যবস্থা এমনভাবে চালানো যায় যাতে অর্থ উপার্জন করা নয় কিন্তু মানুষের স্বাস্থ্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হয়।


এই পাতাটি হালনাগাদ করা হয়েছে: ১৯ এপ্রিল ২০২৪