Hesperian Health Guides

ডায়াবেটিস: ঔষধ

ডায়াবেটিস: ঔষধ

ইন্সুলিন


ইন্সুলিন অগ্ন্যাশয়ে তৈরী হওয়া একটি হরমোন যা খাদ্যের মধ্যে থাকা চিনি প্রক্রিয়াজাত করতে আমাদের দেহকে সাহায্য করে। এটি আমাদের জীবনের জন্য প্রয়োজনীয়, এবং আমাদের দেহ যদি এটি উৎপাদন করতে না পারে তবে তার পরিবর্তে ইন্সুলিনকে রাসায়নিক আকারে ব্যবহার করতে হবে। ধরন ১ ডায়াবেটিস আক্রান্ত সকল রোগীকে সারা জীবনের জন্য ইন্সুলিন নিতে হবে। ধরন ২ ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদেরকেও হয়তো ইন্সুলিন ব্যবহার করতে হতে পারে যদি তাদের দেহ এটি তৈরী করা বন্ধ করে দেয়। যদি তা ঘটে তবে মেটফরমিন বা সালফনিলুরিয়ার মতো মুখে খাবার ঔষধ সেবন করাই যথেষ্ট হবে না এবং ইন্সুলিনই হয়তো রক্তে চিনির মাত্রা সামাল দেয়ার একমাত্র উপায় হতে পারে।

ইন্সুলিনকে অবশ্যই ইঞ্জেকশন আকারে দিতে হবে। এটি হয়তো ছোট শিশিতে করে বিক্রয় হতে পারে এবং আপনি যথাযথ মাত্রা প্রস্তুত করতে একটি সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে পারেন। এটি হয়তো কলমসাদৃশ্য একটি যন্ত্রের মধ্যে করে বিক্রয় হতে পারে যেটি সঠিক মাত্রা পরিমাপ করে থাকে এবং ব্যবহার করা সহজ।

তিন ধরনের ইন্সুলিন রয়েছে:

  • দ্রুত-কর্মক্ষম: দ্রুত-কর্মক্ষম যে ইন্সুলিনগুলো সচরাচর দেখা যায় তাকে ‘নিয়মিত’ ইন্সুলিন বলা হয়। লিসপ্রো ও এ্যাসপার্টও দ্রুত-কর্মক্ষম। এই ধরনের ইন্সুলিনগুলোকে খাবার খাওয়ার আগে ব্যবহার করা হয়।
  • ধীর-কর্মক্ষম: এনপিএইচ সচরাচর ব্যবহার করা ধীর-কর্মক্ষম ইন্সুলিন। গ্ল্যারজিন ও ডিটারমিরও ধীর-কর্মক্ষম। এই ধরনের ইন্সুলিন দিনে ১ বা ২ বার ব্যবহার করা হয়।
  • মিশ্রিত মাত্রা বা পুর্ব-মিশ্রিত: দ্রুত-কর্মক্ষম ও ধীর-কর্মক্ষম ইন্সুলিনকে সমন্বয় করে সবচেয়ে সচরাচর যে ইন্সুলিনটি ব্যবহার করা হয় তা হলো এনপিএইচ/নিয়মিত ৭০/৩০ এবং একে দিনে ২ বার ব্যবহার করা হয়। আর একটি সচরাচর ব্যবহৃত মিশ্রিত-মাত্রার ইন্সুলিন হলো এনপিএইচ/নিয়মিত ৫০/৫০.
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াGreen-effects-nwtnd.png

ইন্সুলিনের কারণে রক্তে চিনির মাত্রা খুব দ্রুত অতিরিক্ত নীচে নেমে যেতে পারে (ডায়াবেটিসজনিত জরুরী অবস্থা দেখুন।

ভাল খাবার খাওয়া আর ইন্সুলিন শুরু করার পর সক্রিয় থাকার মাধ্যমে ওজন বেড়ে যাওয়া আংশিকভাবে রোধ করা যায়।

গুরুত্বপূর্ণNBgrnimportant.png

ইন্সুলিন ব্যবহারের ঝুঁকি হলো যে এটি রক্তে চিনির মাত্রাকে অতিরিক্ত নীচে নামিয়ে দিতে পারে যা একটি ডাক্তারী জরুরী অবস্থা হয়ে দাঁড়াতে পারে। যদি কেউ একবার তার খাওয়া বাদ দেয়, প্রচুর পরিমাণ শরীরচর্চা করে, বা ভুলবশত অতিরিক্ত ইন্সুলিন নিয়ে ফেলে।

কিভাবে ইন্সুলিন নিরাপদে ব্যবহার করতে হবে তা বোঝা এবং রক্তে চিনির স্বল্প মাত্রার বিপদ চিহ্নগুলো সনাক্ত করতে পারা ইন্সুলিন ব্যবহারকারী ব্যক্তির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি তা না হয় তবে তার ঘরে পর্যাপ্ত সাহায্য থাকা প্রয়োজন। কম দৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্যও সঠিক মাত্রায় ঔষধ সেবন নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত সাহায্য প্রয়োজন হবে।

একজন ব্যক্তি যদি ধীর-কর্মক্ষম ও দ্রুত-কর্মক্ষম উভয় ঔষধই ব্যবহার করে তবে এ দু’টির মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারা ও এগুলোকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কিভাবে ব্যবহার করতে হয়NBgrninject.png

অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডা থেকে দূরে একটি শীতল জায়গায় ইন্সুলিন রাখা উচিত। এটি হিমায়নযন্ত্রের মধ্যে রাখা যায় তবে কখনওই এটিকে বরফে পরিণত করবেন না।

ডায়াবেটিসের ঔষধ গ্রহণকারী যে কেউই রক্তে চিনির মাত্রা পরিমাপ করতে এক ফোঁটা রক্ত পরীক্ষা করার মাধ্যমে ঔষধটি, বা একটি ঔষধের নির্দিষ্ট মাত্রা কতখানি ভালভাবে কাজ করেছে তা দেখতে পারবে। সাধারণতঃ একজন ব্যক্তি স্বল্প মাত্রায় শুরু করে এবং তারপর সেটিকে একটু একটু করে বাড়ানো হয়। তাই যখন নতুন ঔষধ সেবন শুরু করা হয় তখন কোন মাত্রাটি সবথেকে ভাল কাজ করবে তা বের করতে সাধারণের তুলনায় অনেক বেশী পরীক্ষা করা হয়।

ধরন ১ ডায়াবেটিসের জন্য
ধরন ১ ডায়াবেটিস রোগী স্বাস্থ্যবান থাকার জন্য প্রতিদিন ইন্সুলিন প্রয়োজন হয়। রাতে ও সারা দিন ধরে ব্যক্তিটিকে স্থিতিশীল রাখতে ধীর-কর্মক্ষম ইন্সুলিন প্রয়োজন হয় এবং ব্যক্তিটি খাবার খাওয়ার উপর এবং তারা যখন শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকে তার নির্ভর করে দ্রুত-কর্মক্ষম ইন্সুলিনের মাত্রা সমন্বয় করতে শেখে। অভিজ্ঞতাসম্পন্ন স্বাস্থ্য কর্মীরা ব্যক্তি ও তার পরিবারকে ইন্সুলিনের ধরন ও এর কোন মাত্রা ভাল কাজ করবে তা নির্দিষ্ট করতে সাহায্য করবে।

ধরন ২ ডায়াবেটিসের জন্য
ধরন ২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশীরভাগ সময়ই হয় শুধু বা মেটফরমিন বা ‍সালফনিলুরিয়ার মতো মুখে খাবার ঔষধের সাথে দিনে একবার ধীর-কর্মক্ষম ইন্সুলিন নেয়ার মাধ্যমে ইন্সুলিন ব্যবহার করা শুরু করতে পারে।

ধীর-কর্মক্ষম ইন্সুলিনের প্রথম মাত্রাটি খুবই স্বল্প মাত্রার হতে হবে যেমন ১০ একক। আপনি যদি এনপিএইচ-এর একক ইঞ্জেকশন দিয়ে শুরু করেন তবে তা রাতে দিতে হবে। কিন্তু যেহেতু এনপিএইচ মাত্রা ১২ ঘন্টা কর্মক্ষম থাকে তাই অনেক ব্যক্তিই রক্তে চিনির মাত্রার ওঠানামা রোধে এটিকে দিনে ২ বার গ্রহণ করে।

যতদিন আপনার রক্তে চিনির পরিমাণ না কমে ততদিন আপনার স্বাস্থ্যকর্মী হয়তো ধীর-কর্মক্ষম ইন্সুলিনের পরিমাণ খুব ধীরে ধীরে বেশ সময় নিয়ে বাড়াতে পারে। রক্তে চিনির মাত্রা একটি ভাল মাত্রায় চলে আসলে আপনি ইন্সুলিনের একই মাত্রা প্রতিদিন নেয়া চালিয়ে যেতে পারেন। সঠিক মাত্রাটি পেতে হয়তো অনেক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।

সকাল বেলায় রক্তের চিনি হয়তো একটি ভাল মাত্রায় থাকতে পারে কিন্তু খাবার খাওয়ার পর অনেক বেড়ে যেতে পারে। এটি যদি হয় তবে ব্যক্তিটির হয়তো খাবার খাওয়ার আগে নিয়মিত ইন্সুলিনের মতো একটি দ্রুত-কর্মক্ষম ইন্সুলিন প্রয়োজন হতে পারে। দ্রুত-কর্মক্ষম ইন্সুলিনও বেশ স্বল্প মাত্রায় শুরু করতে হবে, ৪ এককের কাছাকাছি। এটি বেশীরভাগ সময়ই দিনে একবার সবথেকে বেশী পরিমাণ খাবার খাওয়ার আগে নিতে হবে কিন্তু কোন কোন ব্যক্তির জন্য এটি হয়তো প্রতিবার খাবার খাওয়ার আগে নিতে হতে পারে। নিয়মিত ইন্সুলিন খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে নিতে হবে। প্রথমে আপনার রক্তে চিনির পরিমাণ ঘনঘন পরিমাপ করলে তা আপনার প্রয়োজনীয় দ্রুত-কর্মক্ষম ইন্সুলিনের মাত্রা সমন্বয় করতে আপনার স্বাস্থ্যকর্মীকে সাহায্য করবে।

ধীর-কর্মক্ষম ইন্সুলিনের বাইরেও যে সমস্ত লোকের অন্যান্য ঔষধের প্রয়োজন হয় তাদের জন্য মিশ্রিত মাত্রার ইন্সুলিন একটি বিকল্প। উদাহরণস্বরূপ, এনপিএইচ/নিয়মিত ৭০/৩০ দিনে ২ বার দেয়া হয়, সকালের নাস্তার ৩০ মিনিট আগে এবং রাতের খাবারের ৩০ মিনিট আগে।

অতিরিক্ত নেয়ার চিহ্ন

রক্তে চিনির মাত্রা অনেক কমে যাবার বিপদ চিহ্নগুলোর মধ্যে আছে হাঁটার সমস্যা, দুর্বল অনুভব করা, দেখায় সমস্যা, বিভ্রান্তি, চেতনা হারানো বা খিঁচুনি। ব্যক্তিটির যদি চেতনা থাকে তাবে তাদের খুব দ্রুত কিছু মিষ্টি জিনিস খাওয়া প্রয়োজন এবং তারপর যত শীঘ্র সম্ভব একটি পূ্র্ণ আহার। যদি ব্যক্তিটি অচেতন থাকে, তবে তার জিহ্বার নীচে এক চিমটি চিনি বা একটু মধু রাখুন এবং সে সজাগ না হওয়া এবং নিজে আরও বেশী নিতে না পারা পর্যন্ত তাকে অল্প অল্প করে দিতে থাকুন।



এই পাতাটি হালনাগাদ করা হয়েছে: ২৬ এপ্রিল ২০২৪