Hesperian Health Guides
ডায়াবেটিসে জরুরী অবস্থা
একজন ব্যক্তি যদি নাও জানে যে তার ডায়াবেটিস রয়েছে, তারপরও সাধারণতঃ তার মধ্যে সতর্কতামূলক চিহ্ন দেখা দেবার পরই রক্তে উচ্চ মাত্রায় চিনি থেকে সৃষ্ট জরুরী অবস্থা (হাইপারগ্লাইসেমিয়া) দেখা দিতে পারে।
আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে, তবে একটি ডাক্তারী বাজুবন্ধ পরুন বা দেখানোর জন্য ‘আমার ডায়াবেটিস আছে’ লেখা একটি কাগজ বহন করুন। আপনি যে ঔষধই গ্রহণ করুন না কেন তার নাম ঐ কাগজটিতে বা বাজুবন্ধে লিখুন। এর ফলে আপনি যদি আপনাকে সাহায্য করতে নাও পারেন তবে অন্যান্যরা আপনাকে সাহায্য করতে পারবে। পরিবারের সদস্যদের ও অন্যান্যদেরকেও বিপদচিহ্নগুলো ও কী কী করতে হবে তা শিখান।
যদি কারও ডায়াবেটিসের কারণে সমস্যা হয় এবং সমস্যটি রক্তে স্বল্প মাত্রায় চিনি নাকি উচ্চ মাত্রায় চিনি থেকে সৃষ্ট হয়েছে তা যদি আপনি বুঝতে না পারেন তবে ডাক্তারী সাহায্য নিতে যাবার সময় এটিকে রক্তে চিনির মাত্রা কমেছে (অল্প পরিমাণে চিনি দিন) বিবেচনা করুন।
পরিচ্ছেদসমূহ
রক্তে চিনির মাত্রা কম (হাইপোগ্লাইসেমিয়া)
এই অবস্থা শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির হতে পারে যে তার ডায়াবেটিসকে ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করে। একজন ব্যক্তির রক্তে চিনির মাত্রা অনেক বেশী কমে যেতে পারে যদি সে অতিরিক্ত ইন্সুলিন বা অন্য আর একটি ডায়াবেটিসের ঔষধ গ্রহণ করে, যথেষ্ট পরিমাণে খাবার খায় না, একবারে প্রচুর পরিমাণে শারীরিক পরিশ্রম করে, একবার খাওয়ার সময় থেকে দ্বিতীয়বার খাওয়া পর্যন্ত দীর্ঘ সময় অপেক্ষো করে, এবং এ্যালকোহ্ল পান করে। যদি একজন ব্যক্তির রক্তে চিনির মাত্রা কমে যাওয়ার সমস্যা থেকে থাকে তবে তাকে আরও ভালভাবে তার ঔষধ নেওয়ার ব্যপারে একটি উপায় পেতে সাহায্য করুন। বেশী বার খাওয়া বা বেশী স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এই জরুরী অবস্থাগুলোকে রোধ করতে পারে।
রক্তে চিনির মাত্রা কম থাকা কেউ প্রথমে হয়তো বিচলিত, ঘর্মাক্ত, বা দ্বিধাগ্রস্ত অনুভব করতে পারে, তারপর হঠাৎই হয়তো আনাড়ি, বিভ্রান্ত, বিচলিত, বা খিটখিটে হয়ে যেতে পারে। এই প্রাথমিক চিহ্নগুলো দেখা দেয়ার সাথে সাথে তার খেতে হবে। সে যদি তা না করে তবে তার অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। এই বিপদ চিহ্নগুলোর খোঁজ করুন:
বিপদ চিহ্নসমূহ
- হাঁটায় সমস্যা
- দুর্বল অনুভব করা
- ভালভাবে দেখায় সমস্যা
- বিভ্রান্ত বা অদ্ভুত আচরণ করছে (আপনি হয়তো তাকে ভূল করে মাতাল ভাবতে পারেন)
- চেতনা হারানো
- খিঁচুনি
চিকিৎসা
তার যদি চেতনা থাকে তবে তাকে দ্রুত চিনি দিন: ফলের রস, লেবেনচুষ, বা এক গ্লাস জলের মধ্যে কয়েক চামচ চিনি এর সবগুলোই কাজ করবে। এর পরপরই তাকে পেট ভরে খেতে হবে। আপনার নেয়া ব্যবস্থায় কাজ হয়েছে কিনা তা গ্লুকোমিটার দ্বারা রক্ত পরিমাপ করলেই আপনি বুঝতে পারবেন। আপনি চিনি দেবার পর সে যদি তখনও বিভ্রান্ত থাকে বা ১৫ মিনিটের মধ্যে ভাল অনুভব করতে শুরু না করে তবে সাহায্য গ্রহণ করুন।
সে যদি অচেতন থাকে তবে তার জ্বিহ্বার নীচে এক চিমটি চিনি বা মধু রাখুন। তাকে অল্প পরিমাণে দিতে থাকুন। দেহের চিনি গ্রহণ করতে সময় লাগে। যখন সে সজাগ হবে তখন তাকে আরও বেশী দিন। বিপদচিহ্নগুলো যেন আর দেখা না যায় তা নিশ্চিত হতে ৩ থেকে ৪ ঘন্টার জন্য তার কাছে কাউকে থাকতে দিন।
রক্তে উচ্চ মাত্রার চিনি (হাইপারগ্লাইসেমিয়া)
ডায়াবেটিসযুক্ত একজন ব্যক্তির রক্তে অতিরিক্ত পরিমাণে চিনি থাকতে পারে যদি সে প্রচুর পরিমাণে খাবার খায়, স্বাভাবিকের চেয়ে কম সক্রিয়, এবং মারাত্মত অসুস্থ্যতা বা সংক্রামণ থাকে, ডায়াবেটিসের ঔষধ গ্রহণ না করে, বা জলশূন্যতায় ভোগে। এমনকি একজন্য ব্যক্তি যদি নাও জানে যে তার ডায়াবেটিস আছে তারও এটি ঘটতে পারে। রক্তে উচ্চ মাত্রায় চিনির কারণে জরুরী অবস্থা সৃষ্টি হবার আগে এই চিহ্নগুলোর মানে হতে পারে যে ব্যক্তিটির ডায়াবেটিস আছে বা তাদের ডায়াবেটিসের ভিন্ন চিকিৎসার প্রয়োজন:
চিহ্ন
- তৃষ্ণার্ত অনুভব করা ও প্রচুর জল পান করা
- বার বার মূত্রত্যাগ করা
- দৃষ্টি ঘোলা হয়ে আসা
- ওজন হারানো
আপনি যদি রক্তে উচ্চ মাত্রায় চিনির চিকিৎসা না করেন, তবে তা খুবই বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে এবং তা কোমা বা এমনকি মৃত্যুর দিকে ধাবিত হতে পারে। এই সমস্ত অতি বিপজ্জনক চিহ্নগুলোর জন্য সাহায্য গ্রহণ করে আপনি একজন ব্যক্তির জীবন বাঁচাতে পারেন:
বিপদ চিহ্ন
- দ্রুত হৃদস্পন্দন
- নিঃশ্বাসে ফলের গন্ধ
- শুষ্ক ত্বক
- পেটের ব্যথা, গা গুলোনো, বমি হওয়া
- নিম্নরক্ত চাপ
- বিভ্রান্তি
- দ্রুত, ঘন শ্বাস
- চেতনা হারানো
চিকিৎসা
এই চিহ্নগুলোসহ একজন ব্যক্তিকে ততক্ষণাৎ একটি চিকিৎসা কেন্দ্রে নিন। সে যদি চেতন থাকে তবে তাকে একটু একটু করে প্রচুর পরিমাণে জল পান করতে দিন।
আপনি যদি নিশ্চিত থাকেন যে তার রক্তে উচ্চ মাত্রায় চিনি রয়েছে কারণ সে ইতোমধ্যেই গ্লুকোমিটার দ্বারা রক্তে চিনির পরিমাণ পরিমাপ করেছে, এবং আপনি তার ইন্সুলিনের মাত্রা জানেন, তবে সাহায্য আসতে আসতে তাকে অল্প পরিমাণে ইন্সুলিন দিন। কিন্তু আপনি যদি নিশ্চিত না হন যে সমস্যাটি উচ্চ রক্তচাপের কারণে হয়েছে তবে ইন্সুলিন দেবেন না। যখন কারও রক্তে চিনির মাত্রা অনেক কম থাকে তখন তাদেরকে ইন্সুলিন দিলে তা তাদেরকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যেতে পারে।