Hesperian Health Guides

সচরাচর ব্যবহৃত টীকা

এই অধ্যায়ে

পরিচ্ছেদসমূহ

বেশীরভাগ দেশেই নীচেরগুলোর বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য টীকা পাওয়া যায়:

যেখানে প্রয়োজন সেখানে নীচেরগুলোর বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য টীকা রয়েছে:

NWTND vacc Page 7-2.png

বিসিজি টীকা টিউবারকুলোসিস (টিবি) এর বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়

বিসিজি একটি ইঞ্জেকশান যা ত্বকের ঠিক নীচে দেয়া হয়। এটি জন্মের পরপরই যত শীঘ্র সম্ভব দেয়া হয়।
  • কোন বাড়ীতে কারো যদি টিবি থাকে, এবং শিশুদেরকে কখনোই টীকা দেয়া হয়ে না থাকে তবে যত শীঘ্র সম্ভব তাদেরকে টীকা দিন।
  • গর্ভবতী নারীদেরকে বিসিজি টীকা দেবেন না।
  • এইচআইভিযুক্ত মায়ের গর্ভে জন্ম নেয়া শিশু জন্মের ঠিক পরপরই বিসিজি নিতে পারে। নিশ্চিতভাবে এইচআইভি হয়েছে এমন যে কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিসিজি দেয়ার আগে এন্টিরেট্রোভাইরাল ঔষধ দ্বারা এইচআইভির চিকিৎসা করা শুরু করুন।
টিউবারকুলোসিস (টিবি) একটি বিপজ্জনক সংক্রামণ, সাধারণতঃ ফুসফুসে হয় যেটি ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা ও নিরাময় করা যায়। যদি চিকিৎসা করা না হয় তবে টিবি ধীরে ধীরে ফুসফুসকে ধ্বংস করে ব্যক্তির শ্বাস নেয়া রোধ করে। বিসিজি টীকা সবথেকে বিপজ্জনক ধরনের টিবি রোধ করে এবং অন্যান্য সংক্রামণ রোধ করায়ও দেহকে সাহায্য করে।
একজন লোক কথা বলছে
সমন্বিত টীকা তৈরী করা হয়েছে যাতে কম সংখ্যক ইঞ্জেকশান প্রয়োজন হয়। পেন্টাভ্যালেন্ট হলো এরকম একটি সচরাচর ব্যবহৃত সমন্বিত টীকা যা মাত্র একটি ইঞ্জেকশানের মাধ্যমে ৫টি রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়: ডিপথেরিয়া, পারটুসিস, টিটেনাস, হেপাটাইটিস বি, ম্যানিনজাইটিস। কোন কোন দেশে ৬টি রোগ থেকে সুরক্ষা পেতে হেক্সাভ্যালেন্ট ব্যবহার করা হয়: পেন্টাভ্যালেন্টের একই ৫টি রোগসহ পোলিও।




ডিপিটি (ডিট্যাপ, টিড্যাপ বলা হয়) ডিপথেরিয়া, পারটুসিস, টিটেনাস থেকে সুরক্ষা দেয়

ডিপিটি টীকা ৩টি রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়। পেন্টাভ্যালেন্ট ও হেক্সাভ্যালেন্ট টীকার মধ্যে ডিপিটি অন্তর্ভূক্ত। শিশুদের বয়স ৬মাস হওয়ার মধ্যেই তারা নির্দিষ্ট সময় পরপর ৩টি ইঞ্জেকশান পেয়ে থাকে।
  • বড় শিশুরা সাধারণতঃ ডিপিটি-এর ৩টি শক্তিবৃদ্ধিকারী মাত্রার ইঞ্জেকশান পেয়ে থাকে বা ডিপথেরিয়া এবং টিটেনাস (টিডি, ডিটি) রোধের জন্য সমন্বিত টীকা পেয়ে থাকে।
  • গর্ভধারণের সময় ডিপিটি টীকা শিশুর সুরক্ষায় সাহায্য করে।
  • ডিপিটির ৬টি মাত্রার (সাধারণ ৩টি এবং শক্তিবৃদ্ধিকারী মাত্রার ৩টি) সবগুলো পেয়ে থাকলে টিটেনাসের বিরুদ্ধে যুগ যুগ ধরে সুরক্ষা পাওয়া যায়। ছোট বেলার প্রয়োজনীয় টীকামালা অসম্পূর্ণ থেকে থাকলে বা আপনার যদি গভীর বা অপরিষ্কার ক্ষত থেকে থাকে তবে টিটেনাসের শক্তিবৃদ্ধিকারী মাত্রা (টিটি) নেয়ার প্রয়োজন হবে।

ডিপথেরিয়া বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুদেরকে আক্রান্ত করে এবং গলাকে এতো বেশী ফুলিয়ে তুলতে পারে যে ব্যক্তিটি শ্বাস নিতে পারবে না।

পারটুসিস হুপিং কাশি নামের একটি খারাপ কাশির সৃষ্টি করে, যা শ্বাস নেয়ে কঠিন করে তোলে। এটি শিশুর জন্য বিশেষভাবে বিপজ্জনক।

টিটেনাস খুব দ্রুতই মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। যে কোন ব্যক্তি এটি একটি কাটা বা ক্ষত থেকে পেতে পারে। সদ্যজাতরা টিটেনাস পেতে পারে যদি মায়েদের টীকা দেয়া না থাকে।

হেপবি (এছাড়াও এইচবিভি) হেপাটাইটিস বি এর বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়

বয়স ৬মাস হবার মধ্যেই শিশুরা ক্রমান্বয়ে ৩টি বা ৪টি ইঞ্জেকশান পেয়ে থাকে।
  • প্রথম টীকাটি দেয়া হয় জন্মের ঠিক পরপরই এবং অন্যগুলো তাদের ৬মাস বয়স হবার মধ্যে দেয়া হয়, হয় ডিপিটির টীকাক্রম হিসেবে অথবা পেন্টাভ্যালেন্ট বা হেক্সাভ্যালেন্ট টীকার অংশ হিসেবে।
  • বড় শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের হেপবি ক্রমের ৩টি ইঞ্জেকশানের টীকা দিন যদি তারা এটি শিশু অবস্থায় গ্রহণ করে না থাকে।
হেপাটাইটিস বি সঙ্কটজনক যকৃতের সমস্যা এবং কোন কোন সময় যকৃতের ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। জন্মের সময় এটি মা থেকে শিশুতে অথবা যৌনসঙ্গমের মাধ্যমে বা অপরিষ্কার সূঁই ব্যবহারের ফলে দুই ব্যক্তির মধ্যে বাহিত হতে পরে।

হিব টীকা হেমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি এর বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়

৬ মাস বয়সের মধ্যে শিশুরা ইঞ্জেকশানক্রমের ৩টি পেয়ে থাকে, হয় ডিপিটিক্রমের সাথে বা পেন্টাভ্যালেন্ট বা হেক্সাভ্যালেন্ট টীকার অংশ হিসেবে।
  • ১২ মাস বা ১৫ মাস বয়সের সময় হয়তো শক্তিবৃদ্ধিকারী মাত্রা নেবার প্রয়োজন হতে পারে।
  • প্রপ্তবয়স্ক এবং পাঁচ বছরের বেশী বয়সের শিশুর সাধারণতঃ হিব টীকা নেবার প্রয়োজন হয় না যদি না তাদের সিকেল সেল এনিমিয়া বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় কোন সমস্যা না থাকে।
হেমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি সাধারণভাবে ফ্লু বলা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো নয়। এটি একটি জীবাণূ যা ম্যানিনজাইটিস, নিউমোনিয়া, ত্বক ও অস্থির সংক্রামণ, এবং অন্যান্য সঙ্কটজনক অসুস্থ্যতার সৃষ্টি করে।

পোলিও টীকা (ওপিভি, আইপিভি) পোলিওর বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়

৬ মাস বয়সের মধ্যে শিশুরা ৩ থেকে ৪টি ক্রমের মাত্রা পেয়ে থাকে।
  • প্রথম মাত্রাটি জন্মের ঠিক পরপরই দেয়া হয় এবং অন্যগুলো তাদের ৬মাস বয়স হবার মধ্যে ডিপিটির টীকাক্রমের সাথে দেয়া হয়।
  • ওপিভি (মুখে খাবার পোলিও টীকা) হলো এমন একধরনের টীকা যা ফোঁটা ফোঁটা করে মুখে দেয়া হয় এবং আইপিভি (অসক্রিয় করা পোলিও টীকা) একটি ইঞ্জেকশান হিসেবে দেয়া হয়। দেশের উপর নির্ভর করে পোলিও টীকার ক্রমগুলিতে সাধারণতঃ ওপিভি এবং আইপিভি উভয়ই অন্তর্ভূক্ত থাকে।
পোলিও একটি ভাইরাস যার থেকে পক্ষাঘাত, শ্বাস কষ্ট হতে পারে, এবং মৃত্যুও ঘটতে পারে। যেহেতু এতো বেশী লোক এর বিরুদ্ধে টীকা গ্রহণ করেছে তাই পোলিও প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

রোটাভাইরাসের (আরভি) টীকা রোটাভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়

৬ মাস বয়সের মধ্যে টীকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানভেদে এই টীকাটি শিশুরা ২ থেকে ৩ বার পেয়ে থাকে। এটি মুখে ফোঁটা আকারে দেয়া হয়।
  • ডিপিটি বা পেন্টাভ্যালেন্ট ক্রমের টীকা দেয়ার একই সময় এটি দেয়া হয়।


শিশুকে টীকা দেবার পর ২ সপ্তাহ পর্যন্ত মৃদু অসুস্থ্যতা এড়াতে শিশুর লেংটি পরিবর্তনের সময় অতিরিক্ত সতর্কতার সাথে ভালভাবে হাত ধৌত করুন।

রোটাভাইরাস একটি সাধারণ রোগ যারা ফলে তীব্র ডাইরিয়া, জ্বর, এবং বমির সৃষ্টি হয়। এটি খুব সহজেই ছড়ায় এবং এটি বিশেষভাবে কোলের শিশু ও বড় শিশুদের জন্য বিপজ্জনক।

নিউমোকক্কাল (সংযুক্ত) টীকা নিউমোনিয়া ও অন্যান্য সংক্রামণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়

শিশুরা ক্রমান্বয়ে ৩টি ইঞ্জেকশান পেয়ে থাকে।
  • এ টীকা সাধারণতঃ ডিপিটি বা পেন্টাভ্যালেন্ট ক্রমের টীকা দেয়ার একই সময় দেয়া হয় কিন্তু কোন কোন দেশে প্রথম ২টি ইঞ্জেকশান ৬মাস বয়সের মধ্যে দেয়া হয় এবং ৩য়টি পরে দেয়া হয়।

এই টীকা নিউমোকক্কাস জীবাণূ দ্বারা সৃষ্ট সঙ্কটজনক ফুসফুস, মস্তিষ্ক, এবং রক্তের সংক্রামণ রোধ করে।

সকল শিশুকেই টীকা দেয়া অগ্রাধিকার, কিন্তু এটি নিউমোনিয়ার বিরুদ্ধে বয়স্ক ব্যক্তিদেরকেও সুরক্ষা দিতে সাহায্য করে।

হাম, এমআর, এমএমআর টীকা হামের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়

এই টীকাটি বেশীরভাগ সময়ই সমন্বিত টীকার একটি অংশ হিসেবে দেয়া হয়, হয় এমআর (হাম এবং রুবেলা), বা এমএমআর (হাম, মাম্পস, এবং রুবেলা) হিসেবে। শিশুদের ন্যুনতম ২ মাত্রা নেয়া প্রয়োজন হবে।
  • হামের প্রাদুর্ভাব হলে ৬ মাস বয়সী শিশুদের পর্যন্ত টীকা দেয়া যেতে পারে। পরবর্তীতে তারা তাদের স্বাভাবিক ২টি মাত্রা গ্রহণ করে।
  • এইচআইভিযুক্ত একটি শিশুরও ২টি বা ৩টি ইঞ্জেকশান নেবার প্রয়োজন হয় কিন্তু এইচআইভির কারণ খুবই অসুস্থ্য একটি শিশুর টীকা নেয়ার আগে এইচআইভি এর চিকিৎসা করা এবং স্থিতিশীল স্বাস্থ্য থাকা প্রয়োজন।
হাম সহজেই শিশুদের মধ্যে ছড়ায় এবং ফুসকুড়ি, জ্বর এবং কাশির সৃষ্টি করে। চিকিৎসা করা না হলে এটি ডাইরিয়া, চোখ বা কানের সংক্রামণ, অন্ধত্ব, বা মৃত্যু ঘটাতে পারে।

রুবেলা, এমআর, এমএমআর টীকা রুবেলার (জার্মান হাম) বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়

শিশুদের কমপক্ষে ১টি ইঞ্জেকশান প্রয়োজন। প্রথম হামের টীকার সাথে দিন।
  • অনেক শিশুই ২টি ইঞ্জেকশান পেয়ে থাকে কারণ রুবেলার টীকা ২ সচরাচর ব্যবহৃত সমন্বিত টীকার অংশ, এমআর (হাম এবং রুবেলা) এবং এমএমআর (হাম, মাম্পস, এবং রুবেলা) ২বার দেয়া হয়।
  • যে সমস্ত জায়গায় বেশীরভাগ মানুষকেই কোলের শিশু থাকা কালীন টীকা দেয়া হয়নি, সেখানে রুবেলা টীকার প্রচারণা কিশোরী মেয়েদেরকে প্রাধান্য দিতে পারে।

রুবেলা ফুসকুড়ি ও জ্বর সৃষ্টি করতে পারে এবং তা পরে চলেও যাবে। কিন্তু একজন গর্ভবতী নারী যদি রুবেলা আক্রান্ত হয় তবে তার গর্ভে থাকা শিশুর জন্য এটি খুবই বিপজ্জনক হবে।

সকল শিশুকে টীকা দেয়া হলে রুবেলা হওয়া রোধ করা যায় এবং গর্ভবতী নারীদের এটিতে আক্রান্ত না হওয়ায় ক্ষেত্রে সাহায্য হয়। এছাড়াও যে মেয়েরা টীকা নিয়েছে তারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গর্ভবতী হলে রুবেলায় আক্রান্ত হবে না।

এইচপিভি টীকা হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস থেকে সুরক্ষা দেয়

মেয়েরা তাদের বয়সের উপর নির্ভর করে ২ থেকে ৩টি ইঞ্জেকশান পেয়ে থাকে।
  • প্রথম ইঞ্জেকশানটি ৯ থেকে ১০ বছর বয়েসের সময় দেয়া হয়, এবং পরেরটা ৬মাস পর। যে নারীর বয়স ইতোমধ্যেই ১৫ বা তার বেশী হয়েছে তার জন্য প্রথম ইঞ্জেকশানটি দিন, দ্বিতীয়টির জন্য ৪ সপ্তাহ অপেক্ষা করুন, এবং তৃতীয়টি দেবার জন্য আরও ১২ সপ্তাহ অপেক্ষা করুন।
এই টীকাটি নারীর জরায়ুর ক্যান্সার ও পুরুষদের কোন কোন ক্যান্সার রোধে সাহায্য করে। মেয়েদের জন্য এটি খুবই গরুত্বপূর্ণ, কিন্তু যদি বাজেট ও সরবরাহ অনুমোদন করে তবে কোন কোন দেশ ছেলেদেরকেও এই টীকা নিতে সাহায্য করে।

টীকা শুধুমাত্র কয়েকটি অঞ্চলে ব্যবহৃত হয় এবং অন্যান্য টীকা যেগুলো মাত্র নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির প্রয়োজন হয়

কলেরা

 একদল লোক কলেরা প্রতিরোধের বিষয়ে আলোচনা করতে একত্রিত হয়েছে।

কলেরা একটি ডাইরিয়া জাতীয় রোগ যা জলশূন্যতার মাধ্যমে খুব দ্রুতই মানুষ মেরে ফেলতে পারে, বিশেষ করে কোলের শিশু ও বড় শিশুদের।

কলেরার বিরুদ্ধে টীকা মুখে খাওয়ার মাধ্যমে নেয়া হয় এবং যেখানে প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে বা শুরু হতে পারে বিশেষভাবে বিভিন্ন শিবির বা বসতি এলাকা যেখানে শরণার্থী বা বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিরা থাকে সেখানে এগুলো ব্যবহার করা হয়। টীকা উৎপাদনকারী ভেদে হয় ২ বা ৩ মাত্রা প্রয়োজন হবে। কোন এলাকায় যদি কলেরা আবারও ফিরে আসে তবে লোকেদের আবারও টীকার সম্পূর্ণ ক্রমগুলো নেয়া প্রয়োজন হবে বা শুধুমাত্র একটি শক্তিবৃদ্ধিকারী মাত্রা নিতে হবে।

গর্ভবতী এবং বুকের দুধ পান করানো নারী এবং এইচআইভিযুক্ত ব্যক্তিদেরকে কলেরা টীকার প্রচারণায় অন্তর্ভূক্ত করা উচিত।

ম্যানিনজোকক্কাল সংক্রামণ

এই টীকা উত্তর ও মধ্য আফ্রিকার একটি খুবই সঙ্কটজনক ম্যানিনজাইটিস মস্তিষ্কের সংক্রামণ থেকে রক্ষা করে। টীকাটি শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য। রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে স্বাস্থ্য কর্মীদের এটির প্রয়োজন হবে। গর্ভবতী নারীদের জন্য এটি নিরাপদ। টীকা উৎপাদনকারী ভেদে হয় ১টি বা ২টি মাত্রা প্রয়োজন হবে। ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত ম্যানিনজোকক্কাল জীবাণূর ধরন অনুযায়ী অঞ্চলগুলো এই টীকার ভিন্ন ভিন্ন সংস্করণগুলো ব্যবহার করে।

পীত জ্বর

NWTND vacc Page 11-1.png

পীত জ্বর মশাবাহিত একটি ভাইরাস। পীত জ্বর যখন কোন নতুন এলাকায় আসে তখন এটি খুব দ্রুত ছড়ায় এবং বিশেষভাবে ছোট শিশুদের জন্য খুবই বিপজ্জনক।

যেখানে পীত জ্বর সচরাচর দেখা যায়, সেখানে শিশুদেরকে ৯ থেকে ১২ মাস বয়সের সময় হামের টীকার সাথে সাথে ১ মাত্রার পীত জ্বরের টীকা দিন। একটি নতুন অঞ্চলে পীত জ্বর দেখা দিলে ৬মাসের বেশী বয়সের শিশুদেরসহ সকলকে টীকা দিন।

জাপানী এনসেফালাইটিস

জাপানী এলসেফালাইটিস এশিয়ার বিভিন্ন অংশে মশাবাহিত ও মশার মাধ্যমে ছড়ানো একটি ভাইরাস। টীকা দান কর্মসূচীতে হয়তো প্রথমেই ১৫ বছরের শিশুদেরকে আওতায় আনা হবে। তারপর শুধু নতুন শিশুদেরকে টীকা দেবার প্রয়োজন হবে। টীকা উৎপাদনকারী ভেদে শিশুদের ১ বা ২টি ইঞ্জেকশান নেয়ার প্রয়োজন হবে।

আঁটুলি-বাহিত এনসেফালাইটিস

এই এনসেফালাইটিস আঁটুলিবাহিত, আঁটুলি একধরনের ক্ষুদ্র কীট যা ত্বকের মধ্যে বাসা বাঁধে আর এদেরকে দেখা খুব কঠিন।

শিশুদের সাধারণতঃ ৩টি ইঞ্জেকশান প্রয়োজন হয়, টীকার ধরন ও উৎপাদনকারীর উপর নির্ভর করে প্রথমটি ১ বা ৩ বছর বয়সের সময়, ২য়টি ১ থেকে ৭ মাস পর, এবং ৩য়টি ২য়টির ৯ থেকে ১২ মাস পর নিতে হয়। যেহেতু এই অসুস্থ্যতা বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য বিশেষভাবে বিপজ্জনক, সেহেতু টিকা কর্মসূচী হয়তো পঞ্চাশোর্ধো ব্যক্তিদের উপর প্রাধান্য দিতে পারে।

হেপাটাইটিস এ

দূষিত খাবার বা জলের মাধ্যমে হেপাটাইটিস এ ছড়াতে পারে এবং তা যকৃতের ক্ষতি করতে পারে। এর ফলে প্রচুর ক্লান্তি লাগে, কখনও কখনও মাসের পর মাস। এটি নিজে নিজেই চলে যায় এবং আর কখনওই ফেরত আসে না। যেখানে হেপাটাইটিস এ সচরাচর দেখা যায়, সেখানে টীকার প্রয়োজন নেই, কিন্তু যেখানে বেশীরভাগ লোকেরই কখনও এই অসুস্থ্যতা হয়নি তাদের ক্ষেত্রে এই টীকা এই অসুস্থ্যতা হওয়া রোধ করতে পারে।

উৎপাদনকারী ভেদে হয় ১টি বা ২টি মাত্রার টীকা দেয়া হয়। যখন নিয়মিতভাবে শিশুদের দেয়া হয় তখন প্রথম ইঞ্জেকশানটি শিশুদের ১২মাসের সময় দেয়া হয়, এবং দ্বিতীয়টি ৬ থেকে ১৮ মাস পর।

জলবসন্ত (ভ্যারিসেলা)

এই টীকা জলবসন্ত রোধ করে, এটি এমন একটি রোগ যা প্রথম ১ বা ২ সপ্তাহে জ্বর ফুসকুড়ি, চুলকানি, এবং ক্লান্তির সৃষ্টি করে। উৎপাদনকারী ভেদে প্রতিটি শিশুকে ১টি বা ২টি ইঞ্জেকশান দেয়া হয়, কখনও কখনও বড় শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদেরকেও এটি দেয়া হয়।

ইনফ্লুয়েঞ্জা (ফ্লু)

ইনফ্লুয়েঞ্জা (ফ্লু) হলো একদল ভাইরাসের নাম যেগুলো প্রতি বছর কয়েক মাসের জন্য ছড়ায় আর জ্বর, কাঁপুনি, এবং সাধারণ ঠাণ্ডা লাগার লক্ষণগুলোর মতোই কিন্তু আরও বেশী সঙ্কটজনক অন্যান্য লক্ষণের সৃষ্টি করে। বেশীরভাগ লোকই ফ্লু থেকে নিরাময় হয়, কিন্তু এটি শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, এবং স্বাস্থ্য সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য সঙ্কটজনক হতে পারে। পরিবর্তনশীল এই ফ্লু ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য প্রতি বছর একটি করে নতুন টীকা সৃষ্টি করা হয়। গর্ভবতী নারীদেরকে টীকা দান করা প্রায়শই প্রাধান্য পায় কারণ তাদের মাধ্যমেই গর্ভে বেড়ে ওঠা শিশুটি সুরক্ষা পেয়ে থাকে, যেহেতু তাদের বয়স ৬মাস হওয়া না পর্যন্ত তাদেরকে টীকা দেয়া যাবে না।

সাধারণতঃ প্রতিবছর একটি ইঞ্জেকশান দেয়া হয়। প্রথমবার টীকার দেবার সময় ৬মাস থেকে ৫বছরের শিশুদেরকে ৪মাসের ব্যবধানে ২টি করে ইঞ্জেকশান দেয়া হয়।

টাইফয়েড জ্বর

টাইফয়েড একটি সংক্রামণ যা জ্বর, বমি এবং অন্যান্য লক্ষণের সৃষ্টি করে। এটিকে জীবাণূনাশক দ্বারা চিকিৎসা করা যায়। খাবার বা জলের মাধ্যমে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে টাইফয়েড ছড়ায়। হাত ধোয়া এবং পরিষ্কার জল ও পয়ঃপ্রণালীতে প্রবেশগম্যতার মাধ্যমে এটি ছড়ানো রোধ করা যায়। টাইফয়েডের বিরুদ্ধে সুরক্ষার টীকা ২ আকারে পাওয়া যায়: ইঞ্জেকশান বা বড়ি। এই টীকা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই টাইফয়েডের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে ব্যবহার করা হয় এবং যারা টাইফয়েড সচরাচর হয়ে থাকে এমন জায়গায় যাতায়াত করে তাদের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

জলাতঙ্ক

NWTND vacc Page 12-1.png

জলাতঙ্ক একটি মারাত্মক ভাইরাস যা প্রাণীবাহিত হয়, সাধারণতঃ কুকুর বা বাঁদুরবাহিত। কোন কোন দেশে জলাতঙ্ক রোগ কদাচিত দেখা যায় আর অন্য দেশে প্রায়ই দেখা যায়। সকল কুকুরকে জলতঙ্কের টীকা দিলে তা মানুষদের মধ্যে হবার ঝুঁকি কমায়। যদি জলাতঙ্ক আক্রান্ত কোন প্রাণী মানুষকে কামড়ায় তবে তাকে ততক্ষণাৎ জলাতঙ্ক টীকার ক্রম নেবার প্রয়োজন হবে এবং তাদের হয়তো জলাতঙ্ক ইম্মিউনোগ্লোবালিন আরও একটি ইঞ্জেকশান নেবার প্রয়োজন হবে। কমপক্ষে ১৫ মিনিট সাবান ও জল দিয়ে কামড়ের জায়গাটি ভালভাবে ধোয়া গুরুত্বপূর্ণ।

একটি প্রাণীর কামড়ের পর জলাতঙ্কের টীকা নেয়া: ব্যক্তিটির যখন জলাতঙ্ক ইম্মিউনোগ্লোবালিন এবং জলাতঙ্ক টীকা উভয়ই নেয়া প্রয়োজন হয়। কামড়ের দিন সম্পূর্ণ শিশির টীকা (উৎপাদনকারীর উপর নির্ভর করে হয় ০.৫মিলি বা ১মিলি) ব্যক্তির উপর বাহুর পেশীতে প্রবিষ্ট করুন, এবং তারপর আবার ৩য় এবং ৭ম দিনে একই কাজ করুন। তারপর ৪র্থ ইঞ্জেকশানটি কামড়ের পর ১৪দিন (২ সপ্তাহ) ও ২৮দিনের (৪ সপ্তাহ) মধ্যে দেয়া হয়। দু'ই বছর বা তার থেকে ছোট শিশুর জন্য ইঞ্জেকশানটি উপরের উরুতে দেয়া হয়। জলাতঙ্কের টীকা পেছনে দিবেন না।

জলাতঙ্কের ইম্মিউনোগ্লোবালিন যদি পাওয়া নাও যায় তবে ততক্ষণাৎ কামড়ের জায়গায় ত্বক ভালভাবে ধোয়ার মাধ্যমে এবং জলাতঙ্ক রোগের টীকার ক্রম দেয়ার মাধ্যমে জলাতঙ্ক রোধ করা যায়।

একজন ব্যক্তি কুকুরের কামড় খাওয়ার আগে জলাতঙ্ক রোগের টীকা দিয়ে জলাতঙ্ক হওয়া রোধ করা হয় কিন্তু এটি সাধারণতঃ যারা সরসরি প্রাণীদের নিয়ে কাজ করে যাদের জলাতঙ্ক হবার সম্ভবনা আছে শুধুমাত্র তাদের জন্য প্রয়োজন হয়।



এই পাতাটি হালনাগাদ করা হয়েছে: ২৮ এপ্রিল ২০২৪