Hesperian Health Guides

সাধারণ ক্যান্সার

এই অধ্যায়ে

প্রতি ধরনের ক্যান্সার ভিন্ন, যেগুলোর কারণ, লক্ষণ, এবং চিকিৎসার ধরনও ভিন্ন। কোন কোন ক্যান্সার সহজেই রোধ ও চিকিৎসা করা যায়, এবং কোন কোনটি মারাত্মক। এমনকি যে সমস্ত জায়গায় মানুষ দারিদ্রে বসবাস করে সে সব জায়গাতেও অনেক ধরনের ক্যান্সারে চিকিৎসা করা যায় এবং করা উচিত।

একটি লোক কাশি দিচ্ছে।

ফুসফুসের ক্যান্সার

চিহ্ন
  • কাশি
  • কাশিতে রক্ত
  • বুকের ব্যথা, সাধারণতঃ এক পাশে
  • যথেষ্ট শ্বাস নিতে পারায় অসুবিধা


একজনের মধ্যে এই চিহ্নগুলো দেখা যাওয়ার মানে হলো ফুসফুসের ক্যান্সার খুবই অগ্রসর পর্যায়ে চলে গেছে।

ফুসফুসের ক্যান্সারই সবথেকে বেশী দেখতে পাওয়া যাওয়া ক্যান্সার, এবং এটি সবথেকে বেশী প্রতিরোধযোগ্য একটি ক্যান্সার। এর কারণ সাধারণতঃ ধূমপান, আপনি যত দীর্ঘ সময় ধূমপান করেন না কেন যে কোন সময়েই ধূমপান ছেড়ে দেয়া আপনার ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। সিগারেট পান করা অন্যান্য ক্যান্সারও সৃষ্টি করে। একজন ব্যক্তি যদি একজন ধূমপায়ীর সাথে একই ঘরে বাস করে বা যেখানে মানুষ ধুমপান করে সেখানে থেকে কাজ করে তবে সেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এমনকি সে যদি নিজে ধূমপান নাও করে।

smoke comes out of big truck

অন্যান্য ধরনের ধোঁয়াও ফুসফুসের ক্যান্সার ঘটাতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ট্রাক থেকে বের হওয়া ডিজেলের ধোঁয়া, কারখানার ধোঁয়া, এবং রান্নার আগুনের ধোঁয়া। আপনি যদি ধূমপান করেন এবং আপনার কাজের জায়গা বা ঘরেও ধোঁয়ার সংস্পর্শে আসেন তবে আপনার ফুসফুসের ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা অনেক বেশী।

ফুসফুসের ক্যান্সার সাধারণতঃ মারাত্মক। ফুসফুসের ক্যান্সার রোধ করার সবথেকে ভাল উপায় হচ্ছে ধূমপান ছেড়ে দেয়া। সাহায্যের জন্য দেখুন মাদক, এ্যালকোহল, ও তামাক (সংকলিত হচ্ছে)

মলাশয় ও মলনালীর ক্যান্সার

= ‘মলাশয়’, ‘মলনালী’ এবং ‘মলদ্বার’ চিহ্নিত করে একজন ব্যক্তির পিছনের দিক।
মলাশয়
মলনালী
মলদ্বার

অন্ত্র নামে ডাকা পরিপাকতন্ত্রের এই নীচু অংশের এই ২টি ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা আপনার বেশী যদি আপনার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে কারো তা হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, অন্ত্রের মধ্যে ঘা (মলাশয়-প্রদাহ) সহ যে সব ব্যক্তির ইতোমধ্যেই অন্ত্রের অন্যান্য রোগ হয়েছে তাদের মধ্যেই এগুলো বেশী দেখা যায়। কোন কোন ক্লিনিক ব্যক্তির মলের একটি নমুনা সংগ্রহ করে এবং তাতে রক্তের সন্ধান করে (ফিকাল অকাল্ট রক্ত পরীক্ষা বা ফিকাল ইম্ম্যিউনোক্যামিকাল পরীক্ষ --এফআইটি এর মাধ্যমে) এই ক্যান্সারগুলোর পরীক্ষা করে থাকে।

এই ক্যান্সারগুলো যে সমস্ত নারী ও পুরুষরা প্রতিদিন সবজি, টাটকা ফল, পূর্ণ দানা, এবং আঁশযুক্ত খাবার খায় তাদের মধ্যে কম দেখা দেয়। কম পরিমাণে এ্যালকোহল পান করা ও ধূমপান না করাও এই ক্যান্সারগুলো প্রতিরোধ করে।

চিহ্ন
  • কালো বা রক্তযুক্ত মল
  • পেটের (তলপেটের) ব্যথা
  • আপনি সাধারণতঃ যেভাবে মলত্যাগ করেন তাতে পরিবর্তন: মলত্যাগের সংখ্যা কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া, বা আরও বেশী ডাইরিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া


রক্তস্বল্পতাও এর একটি লক্ষণ হতে পারে । ক্যান্সার যদি খুব অগ্রসর পর্যায়ে চলে যায় তবে এর লক্ষণগুলো হবে দুর্বলতা, এবং ওজন কমে যাওয়া অনুভব করা।

চিকিৎসা

যদি শুরুতেই সনাক্ত হয় তবে এই ক্যান্সারগুলো কেমোথেরাপী দ্বারা বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসরণ করা যায়। অন্ত্রের কোথায় বা কতখানি অপসরণ করা হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে অস্ত্রোপচারের সময় একটি অস্থায়ী বা স্থায়ী বিকল্প মলাশয় স্থাপন করা হয় (কোলস্টমি)। একটি কোলস্টমিতে একজন সার্জন সুস্থ্য অংশের একটি ফাঁকা জায়গাকে তলপেটের একটি ফাঁকা জায়গার সাথে সেলাই করে দেয় যাতে মল চলার সময় যেখান থেকে ক্যান্সার অপসরণ করা হয়েছে সে জায়গাটি এড়িয়ে যেতে পারে এবং সরাসরি একটি পাত্রে - সাধারণতঃ দেহের বাইরে থাকা একটি থলি - গিয়ে জমা হতে পারে। মলাশয় এবং মলনালীর চিকিৎসা এবং অস্ত্রোপচার যতই উন্নত হচ্ছে ততই কোলস্টমি করার প্রয়োজন কমে যাচ্ছে।

জরায়ু মুখ ক্যান্সার

ক্যান্সার যখন গর্ভাশয়ের (জরায়ু) মূল অংশের ক্ষতি করে তখন তাকে জরায়ুর ক্যান্সার বলে। ক্যান্সার যখন জরায়ুর খোলা অংশটির ক্ষতি করে থাকে তখন তাকে জরায়ু মুখ ক্যান্সার বলে। জরায়ু মুখ ক্যান্সার খুবই সাধারণ, ধীর-বৃদ্ধি পাওয়া একটি ক্যান্সার যাকে শুরুতেই সনাক্ত করতে পারলে খুব ভালভাবেই চিকিৎসা করা যায়। এবং ভাল স্বাস্থ্য পরিচর্যা কার্যক্রমের মাধ্যমে এটিকে পুরোপুরিভাবেই প্রতিরোধ করা যায়।

যৌন সংস্পর্শের (জননেন্দ্রীয়ের সমস্যা ও সংক্রামণ দেখুন) মাধ্যমে ছড়ানো এইচপিভি নামের একটি সাধারণ ভাইরাস জরায়ু মুখ ক্যান্সারের মূল কারণ। এইচপিভি এতোই সাধারণ যে বেশীরভাগ পুরুষ আর নারীরাই শেষ পর্যন্ত এগুলো দ্বারা আক্রান্ত হয়। শুধুমাত্র কয়েকটি ধরনের এইচপিভি ক্যান্সারের সৃষ্টি করে।

প্রজনন অঙ্গ এবং একটি তীর চিহ্নের মাধ্যমে ‘জরায়ু গ্রীবা’ দেখানো একজন নারীর ধর।
জরায়ু গ্রীবা

এইচপিভির বিরুদ্ধে একটি টিকা এই ভাইরাসের ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ধরনটিকে (এগুলোর অনেক ধরন আছে) প্রতিরোধ করতে পারে। এলাকায় সকল মেয়ে ও সকল ছেলেদের টীকা দান করার মাধ্যমে জরায়ু মুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া নারীদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমানো যায়, তবে তা সামগ্রীকভাবে এই ক্যান্সারে মূল উৎপাটন করবে না। শুরুতেই সনাক্ত এবং চিকিৎসা করতে পারার জন্য পরীক্ষা করা গরুত্বপূর্ণ। জরায়ু মুখ ক্যান্সারের পরীক্ষা ও চিকিৎসা করা উভয়ই সহজ এবং খুবই সফল।

এইচআইভি আছে এমন নারীদের মধ্যে জরায়ু মুখের ক্যান্সার প্রায়ই দেখা যায় কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভালভাবে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে না। তাই এইচআইভি আছে এমন নারীদের নিয়মিতভাবে - যদি সম্ভব হয়, বছরে একবার - জরায়ু মুখ ক্যান্সার সনাক্তের জন্য পরীক্ষা করা উচিত।

চিহ্ন

শুরুতেই জরায়ু মুখ ক্যান্সারের কোন লক্ষণীয় চিহ্ন দেখা যায় না। পরে, যৌনসঙ্গমের সময়, বা মাসিকের সময়ের বাইরেও হয়তো যৌনঙ্গ থেকে রক্ত ঝরতে পারে। ক্যান্সারের যদি চিকিৎসা করা না হয় তবে তা ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে — প্রথমে পিঠের নিম্নাংশে বা শ্রোণীচক্রে এবং পরে পায়ের পিছন দিকে।

পরীক্ষা

জরায়ু মুখের ক্যান্সার যদি প্রাথমিক পর্যায়েই সনাক্ত করা যায় তবে খুব কম ক্ষেত্রেই মারাত্মক। সকল নারীদেরকে নিয়মিত পরীক্ষা করা যায় এমন সনাক্তকরণ কার্যক্রম সহজেই স্থাপন করা যায়, এমনকি খুব ছোট একটি কম্যুনিটি ক্লিনিকেও তা করা যায়। তিনটি ভিন্ন পরীক্ষার প্রতিটিরই এর নিজস্ব সুবিধা আছে:

একজন ডাক্তার একজন নারীর শ্রোণীচক্রের পরীক্ষা করছে।
জরায়ু মুখ ক্যান্সারের পরীক্ষা হয়তে একটু অস্বস্তিকর হতে পারে কিন্তু বেদনাদায়ক নয়।
  • চাক্ষুষ নিরীক্ষা বা ভিনিগার পরীক্ষা, (শ্রোণীচক্রে ভিনিগার বা লুগলের আয়োডিন মাখিয়ে শ্রোণীচক্রটিকে দেখা। এটি খুবই কম খরচের, গবেষণাগারের প্রয়োজন হয় না, এবং তা কিভাবে করা যায় তা শেখা খুবই সহজ। কখনও কখনও স্বাস্থ্যবান কোষগুলোকেও অস্বাভাবিক দেখায়, তাই তা যদি ঘটে থাকে তবে অন্যান্য পরীক্ষা করার মাধ্যমে ফলাফল নিশ্চিত করা হয়। কিভাবে চাক্ষুষ নিরীক্ষা করা যায় সেবিষয়ে আরও জানতে ধাত্রীদের জন্য একটি পুস্তক দেখুন যা হেসপেরিয়ান থেকে পাওয়া যাচ্ছে।
  • প্যাপ্যানিকোলাউ পরীক্ষা, বা প্যাপ লেপন। প্যাপ পরীক্ষা খুবই নির্ভরযোগ্য কিন্তু হয়তো প্রতিটি ক্ষেত্রেই সনাক্ত সফল নাও হতে পারে। সেইজন্য এগুলোকে প্রতি তিন বছর পর পর বা কাছাকাছি সময় অন্তর অন্তর পুনরাবৃত্তি করতে হবে।
  • এইচপিভি পরীক্ষা। জরায়ু মুখ ক্যান্সার সৃষ্টি করে সেই এইচপিভি সনাক্ত করার পরীক্ষা। এটি হয়তো এককভাবেই করা যেতে পারে বা প্যাপ পরীক্ষার সাথে সাথে করা যেতে পারে বা প্যাপ পরীক্ষায় ক্যান্সার হয়েছে বলে মনে হলে তারপর ব্যবহার করা যেতে পারে।
চিকিৎসা

জরায়ু মুখ ক্যান্সার শুরুতেই সনাক্ত করা গেলে সফলভাবে চিকিৎসার করা ক্যান্সারগুলোর অন্যতম। কোন কোন চিকিৎসা এতোই সহজ এবং সস্তা যে এগুলো ক্যান্সার সনাক্ত করার পরীক্ষা শেষ করার পরপরই একজন প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্য কর্মী দ্বারা একটি ক্লিনিকেই করা যায়।

  • ক্রিওথেরাপী কার্বন-ডাই-অক্সাইড বা নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাস দ্বারা শ্রোণীচক্রের একটি অংশকে জমিয়ে ফেলে। জমিয়ে ফেলার মাধ্যমে অস্বাভাবিক কোষগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং এগুলোকে ক্যান্সারে রূপান্তরিত হওয়া থেকে প্রতিরোধ করে। ক্রিওথেরাপী বেদনাদায়ক নয় এবং খুবই নিরাপদ। ক্রিওথেরাপী সস্তা এবং কিভাবে করতে হয় তা শেখা স্বাস্থ্যকর্মী এবং ধাত্রীদের জন্য খুব সহজ। হেসপেরিয়ান থেকে পাওয়া যাওয়া ধাত্রীদের জন্য একটি পুস্তক দেখুন।
  • লুপ ইলেকট্রাসার্জিক্যল এক্সসেশন পদ্ধতি (এলইইপি) একটি ধাতব ফাঁসের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করে শ্রোণীচক্রের যে অংশে অস্বাভাবিক কোষ আছে সেই অংশগুলোকে অপসারণ করে। শ্রোণীচক্রের মধ্যে যদি অস্বাভাবিক কোষের অবস্থানের এলাকা অনেক বড় হয়, বা এগুলো শ্রোণীচক্রের মুখের ভিতরের দিকে প্রসারিত হয় তবে এলইইপি-এর প্রয়োজন হয়।
  • কোল্ড নাইফ কোনিজেশন একটি অস্ত্রোপচারের ছুরি ব্যবহার করে জরায়ু থেকে একটি বড় অংশ কেটে নেয় যদি ক্যান্সার-পূর্ব জায়গা অনেক বড় হয়। একজন বিশেষজ্ঞ এই কাজটি করেন। কোল্ড নাইফ কোনিজেশন করার পর কোন নারী গর্ভবতী হলে তার গর্ভপাত হতে পরে বা অন্যান্য গর্ভকালীন জটিলতা দেখা যেতে পারে।


ক্যান্সার যদি অগ্রসর পর্যায়ে থাকে, তবে হয়তো অস্ত্রোপচারের (হিস্টেরেক্টমি) মাধ্যমে পুরো জরায়ু অপসরণ করার প্রয়োজন হতে পারে। এর ফলে গর্ভধারণ করা অসম্ভব, কিন্তু ক্যান্সার থেকে রক্ষা পাওয়াও সম্ভাবনা খুব বেশী।

মুত্রথলির ক্যান্সার

মুত্রথলির ক্যান্সার হবার মূল তিনটি কারণ হলো:

  • ধূমপান।
  • বিষাক্ত রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসা, বিশেষ করে শিল্পজাত কাজ (কারখানায় ও খনিতে) করার সময়। উদাহরণস্বরূপ, যারা লোহা, রং, রাবার, চমড়া, বস্ত্র, কার্পেট, সিমেন্ট, এবং প্লাস্টিক তৈরী করে বা এগুলো নিয়ে কাজ করে তারাই মূত্রথলির ক্যান্সারে সবথেকে বেশী আক্রান্ত হয়। এটি খনি শ্রমিক, বিদ্যুত কর্মী, এবং যারা রাসায়নিক ও সেগুলোর ধোঁয়া নিয়ে কাজ করে তাদের মধ্যেও বেশী দেখা যায়।
  • সিস্টোসোমিয়াসিস (অন্যান্য মারাত্মক অসুস্থ্যতা, সংকলিত হচ্ছে)। যে সমস্ত জায়গায় এই রোগটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে সেখানে এটিই সবথেকে সাধারণ কারণ।
চিহ্ন
  • মূত্রের সাথে রক্ত
  • খুব জরুরীভাবে বা কিছুক্ষণ পরপর মূত্রত্যাগ করতে হয়।
  • পিঠের নীচের দিকে এক পাশে শ্রোণীর হাড়ের মাঝ বরাবর ঠিক উপরে, বা পেরীনিয়ামে (পায়ুদ্বার এবং যোনীপথ বা অণ্ডকোষের মাঝখানে) ব্যথা।
  • মূত্রত্যাগ করা কঠিন হতে পারে, তবে মূত্রথলির ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তিদের মূত্রত্যাগ করার সময় কোন ব্যথা থাকে না।


এগুলোর সবগুলোই অন্যান্য মূত্রথলির সমস্যারও সাধারণ লক্ষণ। মূত্রত্যাগে জটিলতা (সংকলিত হচ্ছে) দেখুন।

চিকিৎসা

মূত্রথলির ক্যান্সার সাধারণতঃ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টিউমার বা মূত্রথলির যে অংশটিতে ক্যান্সার আছে সে অংশটি অপসারণ করে চিকিৎসা করা হয়। অস্ত্রোপচারের আগে টিউমারটির আকার ছোট করতে বা অস্ত্রোপচারের পর ক্যান্সার যাতে আবার ফেরত না আসে তার জন্য কেমোথেরাপীও ব্যবহার করা হতে পারে। টিউমারটি যদি খুবই বড় হয় তবে হয়তো পুরো মূত্রথলিই অপসরণ করতে হতে পারে।

মূত্রথলির ক্যান্সার আবার ফিরে আসে। তাই ক্যান্সার আবারও ফিরে আসেনি তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত ফলো-আপ পরীক্ষা করার প্রয়োজন আছে।

যকৃতের ক্যান্সার

যকৃতের ক্যান্সার বিশেষভাবে মারাত্মক এবং এর চিকিৎসা করা কঠিন। এটি পুরুষের মধ্যে সবথেকে বেশী দেখা যায়।

যকৃতসহ একটি লোক।
যকৃত
চিহ্ন

সাধারণতঃ কোন লক্ষণ দেখা যায় না। যদিও, যকৃতের ক্যান্সারযুক্ত প্রায় সকলেই হেপাটাইটিস দ্বারা বা সিরোসিস (মদ্যাসক্তি বা রোগের ফলে যকৃতের সৃষ্ট হওয়া ক্ষতচিহ্ন) আক্রান্ত হয়েছে, তাই যকৃতের ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তিদের যকৃতের রোগের চিহ্নগুলো দেখা দিতে পারে:

  • ন্যাবা (ত্বক ও চোখের রং হলুদ হওয়া)
  • পেটের ডান দিকে উপরের অংশে ব্যথা
  • পেট ফুলে ওঠা
  • সব সময় ক্লান্ত অনুভব করা (অবসাদ)
রোধ

ক্যান্সারটি চিকিৎসা করা কঠিন, কিন্তু হেপাটইটিস বি টীকা অনেক ক্ষেত্রেই এটি রোধে সাহায্য করে। হেপাটাইটিস সম্পর্কে তথ্য দেখুন।

এ্যালকোহলের কারণে সৃষ্ট সিরোসিস রোধ করতে দিনে এক বা দু’ই গ্লাসের বেশী পান করা থেকে বিরত থাকুন। আপনার যদি ইতোমধ্যেই হেপাটাইটিসের মতো যকৃতের রোগ থাকে তবে চিরদিনের জন্য মদ্যপান করা থেকে বিরত থেকে যকৃতের ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কমিয়ে আনতে পারেন।

স্তন ক্যান্সার

নারীদের মধ্যে সবথেকে বেশী দেখা যাওয়া ক্যান্সারের মধ্যে একটি হলো স্তন ক্যান্সার যদিও পুরুষদেরও এই ক্যান্সারটি হতে পারে। যদি প্রাথমিক পর্যায়েই সনাক্ত করা যায় তবে খুব কার্যকরভাবেই স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা করা যায়। চিকিৎসার মধ্যে অস্ত্রোপচার, বিকিরণ, কেমোথেরাপী, হরমোন থেরাপী বা এগুলোর কোন কোন কোনটি যৌথভাবে ব্যবহার করা থাকতে পারে।

যে কোন ব্যক্তি কোন গোটা বা অস্বাভাবিক চিহ্ন খুঁজতে পরীক্ষা করা শিখতে পারে। ক্যান্সারযুক্ত গোটাগুলো সাধারণতঃ শক্ত, ব্যথামুক্ত, অসমতল, ত্বকের নীচে অবিচল থাকে। প্রতিটি স্তন আলাদা আলাদা করে পরীক্ষা করুন। গোটাটি পরবর্তীতে ক্যান্সার হবে কিনা এক্স-রে (ম্যামোগ্রাফী বলা হয়) বা আল্ট্রাসাউণ্ডের মাধ্যমে পরবর্তী পরীক্ষা তা নির্ধারণ করাতে পারে, কিন্তু আপনার নিশ্চিত হবার জন্য বায়োপ্সি করার প্রয়োজন হবে।

একজন নারী নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করছে।
একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ স্তন পরীক্ষা মাত্র কয়েক মিনিট সময় নেয়। একজন নারী বা তার স্বাস্থ্যকর্মী ধারাক্রমে ও দৃঢ়ভাবে প্রতিটি অংশে মালিশ করে পরের অংশে মালিশ করতে হবে। কোন গোটা, শক্ত হয়ে যাওয়া, বা রং পরিবর্তনের মতো কোন অস্বাভাবিক জিনিষ অনুভব করেন কিনা দেখুন।


স্তন ক্যান্সার রোধে তেমন কিছু করার নেই, যদিও ভাল খাওয়া, ধূমপান ও এ্যালকোহল এড়ানো, এবং নিয়মিতভাবে অনুশীলন করায় যথেষ্ট সাহায্য হয়। বুকের দুধ পান করানোর মাধ্যমে কিছুটা সুরক্ষা পাওয়া যায়।

পেটের ক্যান্সার

woman touching the shoulder of man with stomach pain.
লক্ষণ
  • পেটে ব্যথা
  • ওজন হ্রাস
  • গেলায় সমস্যা
  • পেটের মধ্যে দলা অনুভব করা
  • মলের রং কালো (টারের মতো দেখতে)


বেশীরভাগ আলসার সৃষ্টিকারী এইচ পাইলোরি নামের ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রামণের কারণে সাধারণত পেটের ক্যান্সার হয়ে থাকে। এইচ পাইলোরি যেমন পেটের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়, তেমন অন্যান্য বিষয় যেমন সিগারেট পান, প্রচুর পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত মাংস, লাল মাংস, ভাজা খাবার, লবন মাখিয়ে সংরক্ষণ করা খাবার খাওয়া ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।

বেশীরভাগ পেটের ক্যান্সার সফলভাবে চিকিৎসা করা কঠিন। তাই এই ক্যান্সারটিকে রোধ করাই সবথেকে ভাল। প্রতিদিন ফল, কাঁচা সবজি, এবং পূর্ণ শস্যদানা খাওয়ার মাধ্যমে কিছুটা সুরক্ষা পাওয়া যায়।

অগ্রগ্রন্থির ক্যান্সার

পুরুষদের মূত্রথলির ঠিক নীচে অগ্রগ্রন্থি থাকে যা তাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাড়ে। অগ্রগ্রন্থির ক্যান্সার সাধারণতঃ ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং সমস্যা সৃষ্টি করার মতো যথেষ্ট বৃদ্ধি পেতে অনেক বছর সময় নেয়। অন্যান্য ক্যান্সারের ক্ষেত্রে যেমন অগ্রগ্রন্থির ক্যান্সারও ঠিক তেমনি শুরুতেই সনাক্ত করতে পারলে এর চিকিৎসায় সবথেকে ভাল ফল দেয়। এমনকি ছড়িয়ে যাওয়া অগ্রগ্রন্থির ক্যান্সারও সফলভাবে চিকিৎসা করা যায়। ৬৫ বছর বয়সের চেয়ে বেশী বয়সের পুরুষদের মধ্যে অগ্রগ্রন্থির ক্যান্সার বেশী দেখা যায়, এবং অগ্রগ্রন্থির ক্যান্সার আক্রান্ত অনেক বয়স্ক লোক সাধারণতঃ অন্যান্য কারণে মারা যাওয়া আগে পর্যন্ত এই ক্যান্সার নিয়েই বেঁচে থাকে।

চিহ্ন

প্রাথমিক পর্যায়ে অগ্রগ্রন্থির ক্যান্সারের কোন লক্ষণ নাও দেখা যেতে পারে। বেশীরভাগ লোকই ডাক্তারী পরীক্ষায় সনাক্ত হবার আগে পর্যন্ত জানতেই পারে না যে তাদের এটি আছে।

সবথেকে বেশী দেখা যাওয়া লক্ষণ হলো মূত্রত্যাগ করায় সমস্যা, কিন্তু এটি ক্যান্সার-নয় এমন বড় হয়ে যাওয়া অগ্রগ্রন্থির কারণেও ঘটতে পারে, যা বয়স্ক লোকদের ক্ষেত্রে বেশী দেখা যায়।

একজন স্বাস্থ্যকর্মীর সাথে দেখা করার কারণগুলো হতে পারে:

  • প্রস্রাবের প্রবাহ শুরু করা বা বন্ধ করায় জটিলতা
  • বিশেষ করে রাতে বার বার মূত্রত্যাগের প্রয়োজনীয়তা
  • মূত্র ত্যাগ করার সময় ব্যথা বা জ্বালা করে
  • আপনার প্রস্রাবে বা বীর্যে রক্ত
  • আপনার পিঠের নীচের দিকে, পেটে, নিতম্ব, বা শ্রোণীতে তীব্র এবং ঘন ঘন ব্যথা


অগ্রগ্রন্থি-নির্দিষ্ট এ্যন্টিজেন (পিএসএ) নামের একটি রক্ত পরীক্ষা অগ্রগ্রন্থির ক্যান্সার সনাক্ত করতে সাহায্য করতে পারে। উচ্চমাত্রার পিএসএ মানে হলো অগ্রগ্রন্থির ক্যান্সার, কিন্তু এর মানে এটাও হতে পারে যে আপনার অগ্রগ্রন্থিটি আকারে বড় হয়ে গেছে বা সংক্রামিত হয়েছে (মূত্রত্যাগের জটিলতা, সংকলিত হচ্ছে দেখুন)।

চিকিৎসা

কিভাবে অগ্রগ্রন্থির ক্যান্সারের চিকিৎসা (অস্ত্রোপচার, বিকিরণ, কেমোথেরাপী, হরমোন থেরাপী, বা যৌথভাবে এগুলোর ব্যবহার) করা হবে তা নির্ভর করবে ক্যান্সার কোষের ধরন, এগুলো ছড়িয়েছে কিনা, আপনার বয়স এবং সাধারণ স্বাস্থ্য, এবং আপনার পছন্দের উপর। অগ্রগ্রন্থির কোন কোন ক্যান্সার খুব ধীরে বৃদ্ধি পায় যে এর একমাত্র চিকিৎসা হলো নিয়মিত পরীক্ষা করা।

ত্বকের ক্যান্সার

ত্বকের ক্যান্সার হালকা-ত্বকের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সচারচর দেখা যায়, এবং গাঢ়-ত্বকের ব্যক্তিদের মধ্যে বিরল, কিন্তু যে কোন ব্যক্তি ক্ষেত্রেই হতে পারে। শিশু বেলায় তীব্র রোদ্রদগ্ধ হয়েছে এমন প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে বেশী দেখা যায়।

এটির দু’টো মূল ধরন আছে। সচরাচর দেখা যাওয়া মেলানোমা-নয় এমন ত্বকের ক্যান্সার সহজেই চিকিৎসা করা যায় কারণ এটি খুব বৃদ্ধি পায় এবং একজন স্বাস্থ্য কর্মী তা কেটে বের করতে পারে। অন্য ধরনটিকে মেলানোমা বলা হয় যা সবথেকে বিপজ্জনক ধরনের ত্বকের ক্যান্সার।

গালে ও নাকে ঘা নিয়ে একটি লোক।

একটি মেলানোমা-নয় এমন ক্যান্সার প্রায়শই মুখে বা ত্বকের অন্যান্য যে কোন স্থানে একটি ধীরে বৃদ্ধি পাওয়া লাল বা গোলাপী গোটা, ঘা বা খোশ-পাঁচড়ার মতো দেখতে হতে পারে। এগুলো যদি বৃদ্ধি পাওয়া অব্যহত থাকে তবে এগুলোকে সাধারণতঃ কেটে বের করে ফেলতে হয় কারণ এগুলো দেহের ভিতরে ক্যান্সার ছড়াতে পারে।

মেলানোমা একটি ত্বকের ক্যান্সার যা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় ও মারাত্মক এবং ততক্ষণাৎ এর চিকিৎসা করতে হবে। প্রথমে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা কেটে ফেলা হয়। ক্যান্সার যদি দেহের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে যায় তবে অন্যান্য চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

মেলানোমা ত্বকের ক্যান্সারের চিহ্ন

একটি মেলানোমা নীচের এক বা একধিকভাবে একটি তিল থেকে আলাদা দেখায়:

NWTND Can Page 18-2.png এটি অসমান এবং আকারে অস্বাভাবিক যা গোলাকারও নয় ডিম্বাকৃতিও নয়
NWTND Can Page 18-3.png এটি খাঁজযুক্ত প্রান্ত বা এর প্রান্তগুলো অসম
NWTND Can Page 18-4.png একই তিলের মধ্যে বিভিন্ন রং দেখা যায়
NWTND Can Page 18-5.png আকার, রং বা আকৃতির পরিবর্তন হয়
একটি লোক একটি ছোট বালকের মাথায় একটি টুপি পড়িয়ে দিচ্ছে।
প্রতিরোধ

বিশেষভাবে হালকা-ত্বকের শিশুদেরকে টুপি, বাহু ও পা ঢাকা যায় এমন পোষাক, এবং সূর্যতাপ থেকে রক্ষা পাবার মালিশ ব্যবহার করে রক্ষা করুন। আপনি যদি বাইরে কাজ করেন, তবে আপনার ত্বক ঢাকুন এবং একটি টুপি ব্যবহার করুন।

ক্যাপোসীর সারকোমা

একটি ত্বকের ক্যান্সার যা এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে, ক্যাপোসীর সারকোমা হলে মুখের ভিতরে বা দেহের যে কোন জায়গায় লাল, বাদামী, বা বেগুনী রংয়ের ছোপ দেখা যায়।

চিহ্ন

মুখের চারপাশে বা ভিতরে, বা দেহের অন্যান্য যে কোন জায়গায় ব্যথামুক্ত ছোপ ছোপ দাগ যাকে ফুলে যাওয়া কালশিটে দাগের মতো দেখায়। এই ছোপগুলো প্রায় সংক্রামিত বা ব্যথাযুক্ত হয় না বললেই চলে, যদি না এগুলো ফেটে যায়।

চিকিৎসা

এইচআইভি বিষয়ে অভিজ্ঞতা আছে এমন একজন স্বাস্থ্য কর্মী বা ডাক্তার দেখান। এ্যন্টিরেট্রোভাইরাল ঔষধ (এআরভি) এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে থাকা এই ক্যান্সারকে রোধ করে, এবং এআরভি চিকিৎসা শুরু করা এই ক্যান্সারের আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠা রোধ করতে পারে। কোন কোন সময় ক্যাপোসীর সারকোমা কেমোথেরাপী বা অন্যান্য ঔষধের সাহায্যে চিকিৎসা করা হয়।


এই পাতাটি হালনাগাদ করা হয়েছে: ১৮ এপ্রিল ২০২৪