Hesperian Health Guides

বৈচিত্রময় খাবার খাওয়া

এই অধ্যায়ে

খাওয়ার সময়ই একটি প্রধান স্বল্পমূল্যের খাবার খেয়ে থাকে। প্রধান খাবারটি সারা দিন চলার মতো শক্তি প্রদান করে। কিন্তু শুধুমাত্র প্রধান খাবারটিই একজন ব্যক্তিকে স্বাস্থ্যবান রাখতে যথেষ্ট নয়। বড় হতে, শক্তি ও বল পেতে, এবং সংক্রামণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আমাদেরকে অবশ্যই অন্যান্য খাবার খেতে হবে।

এক বাটি শুধু জাউ নিয়ে একটি বালক
alt=এক বাটি শুধু জাউ নিয়ে একটি বালক  সবজি ও শিমের বীচি মিশানো এক বাটি জাউ নিয়ে একটি খুবই খুশী, ও উদ্দীপ্ত বালক
শুধু জাউ খাওয়া যথেষ্ট নয়। এর সাথে শিমের বীচি, মাংস, দুগ্ধজাত সামগ্রী, ডিম, সবজি, বা ফল মিশান।



স্বাস্থ্যের জন্য আমাদের প্রয়োজন:

স্বাস্থ্যের জন্য শ্বেতসারবহুল খাবারের সাথে আমাদের প্রয়োজন প্রোটিন জাতীয় খাবার, ভিটামিন-সমৃদ্ধ সবজি ও ফল

বলশক্তির জন্য প্রচুর পরিমাণে শস্যদানা বা শ্বেতসারবহুল সবজি বা ফল
শক্তি-যোগানো প্রোটিন খাবার, যেমন বিভিন্ন ধরনের শুঁটি, ডিম, মাছ বা মাংস
রক্ষাকারী, ভিটামিন-সমৃদ্ধ সবজি ও ফল

প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার মাধ্যমে আমরা অনেক ধরনের মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা রোধ করতে পারি।

শ্বেতসারবহুল খাবার যেমন আলু, কলা, রুটি এবং ভাত

শ্বেতসারযুক্ত খাবার আমাদেরকে বল দেয়

আমাদের প্রধান পূরক শ্বেতসারযুক্ত খাবার আমাদের কাজ করা, ও আমাদের নিজেদের ও আমাদের পরিবারের যত্ন নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বলশক্তির যোগান দেয়। আপনি কোথায় বসবাস করেন তার উপর নির্ভর করে কী ধরনের প্রধান খাবার হতে পারে:

  • ভাত
  • ভূট্টা
  • গম
  • কাসাভা
  • রুটিফল
  • কাঁচকলা
  • আলু
  • রাঙ্গা আলু
  • জোয়ার
  • বা অন্যান্য শস্যদানা, শিকড় জাতীয় সবজি, বা শ্বেতসারবহুল ফল
তিনজন ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের শ্বেতসার জাতীয় খাবার ধরে আছে


এই শ্বেতসার জাতীয় খাবারগুলো জাউয়ের মধ্যে রান্না করা যায়, হাত রুটি ও পাউরুটির মধ্যে রেখে সেঁকা (বেক করা) যায়, বেটে বা গুড়ো করে ভর্তা তৈরী করা যায়, বা সম্পূর্ণটাই রান্না করা যায়।

মাঠে নারীরা শস্য সংগ্রহ করছে

স্থানীয় শস্য ব্যবহার করুন

কোন শ্বেতসারযুক্ত খাবার আপনি খাবেন তা আপনার যদি বাছাই করার সুযোগ থাকে, তবে কোন ব্যয়বহুল রাসায়নিক সার ব্যবহার করা ছাড়াই স্থানীয় শস্যগুলো খুব সহজেই উৎপাদন করা যায়, আর এগুলোই সবথেকে পুষ্টিকর বিকল্প। ভূট্টা, গম, এবং ভাত ভালই পুষ্টিকর। কিন্তু স্থানীয় শস্যদানা যেমন জোয়ার, এবং জোয়ার আরও ভাল কারণ এদের মধ্যে বেশী করে প্রোটিন, ভিটামিন, এবং খনিজদ্রব্য আছে।

ভাত ও আটা

আপনি যদি বেশীরভাগ সময়ই ভাত ও আটা খান তবে অঙ্কুর ও তুষের স্তর লেগে থাকা অবস্থায় এগুলো প্রস্তুত করা সবথেকে স্বাস্থ্যকর। পূর্ণদানার গম এবং বাদামী চাল পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ থাকে কিন্তু খুব মিহি করে ভাঙ্গানো সাদা আটা ও সাদা চাল শুধুমাত্র শক্তি যোগায়।

পাতাসহ একটি কাসাভার শিকড়

কাসাভা (ম্যানিওক, ইয়ুকা)

কাসাভার শিকড় প্রধান খাবার হিসেবে খাওয়া হয় যাতে প্রচুর পরিমাণে বলশক্তি পাওয়া যায় কিন্তু অন্যান্য পুষ্টি উপাদান পরিমাণ খুবই কম। কেউ যদি প্রধানত কাসাভা খেয়ে থাকেন তবে এর সাথে অন্যান্য খাবার যেমন শুটকী মাছ, সবজি, ‍বা মটরশুটি ইত্যাদি যোগ করা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কাসাভার পাতা ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ ও রান্না করলে খাওয়া যায়। কোন কোন ধরনের কাসাভা তেতো কারণ এগুলোর মধ্যে উচ্চ মাত্রায় সায়ানাইড (বিষ) থাকে। মানুষ তেতো কাসাভাগুলোকে খাওয়ার জন্য থেতলে, গুড়ো করে, ভিজিয়ে বা গেঁজিয়ে বিষ ‘বের’ করার একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এগুলোকে নিরাপদ করে।

ভূট্টা

ভূট্টা যদি আপনার প্রধান শ্বেতসার জাতীয় খাবার হয় তবে এর ভিটামিনগুলোকে বের করে আনতে প্রথমেই এটিকে চুনের ক্যালসিয়াম দ্বারা প্রক্রিয়াজাত করুন।

একজন নারী মোড়কজাত সাদা পাউরুটি ও বিস্কুটকে না বলছে

কারখানায় উৎপাদিত পাউরুটি ও নুডুল্‌স ততটা ভাল নয়

ঘরে তৈরী করা প্রধান খাবারে (যেমন: পায়েস ও অন্যান্য শস্যদানা) থাকা পুষ্টি উপাদানগুলো মোড়কজাত সাদা রুটি, বিস্কুট, এবং নুডুল্স-এ থাকে না। এবং এগুলোতে প্রায়শই অতিরিক্ত চর্বি, লবন, ও চিনি থাকে।

প্রোটিন জাতীয় খাদ্য আমাদেরকে শক্তিশালী করে

প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন মাছ, বাদাম, ও দুধ

প্রত্যেকেরই বলশক্তি, বৃদ্ধি পাওয়া, এবং অসুস্থ্যতা ও আঘাত থেকে সেরে উঠার জন্য প্রোটিনের প্রয়োজন। প্রোটিনযুক্ত খাবারের মধ্যে আছে:

  • ডাল, মটরশুঁটি, শিমের বীচি, বা অন্যান্য ডাল।
  • মূল জাতীয় বাদাম, গাছ ধরা বাদাম, এবং বিভিন্ন বীজ।
  • ডিম।
  • আপনার বসবাসের এলাকায় পাওয়া যায় এমন যে কোন ধরনের মাংস: বড় বা ছোট প্রাণী, পাখী, খোলসযুক্ত মাছ, বা পোকা।
  • দুধ, পনির, এবং দই।

তুষ বা অঙ্কুর না সরানো পুর্ণ শস্যদানা যেমন বাদামী চাল বা পূর্ণ গমের আটায়ও প্রোটিন থাকে। ভোগ্য অনেক মাশরুমেও তা থাকে।

একটি শিশু একটি ডিম ধরে আছে আর তার দৃঢ় বাহু পেশী দেখাচ্ছে

আপনি মাংস খেয়ে যে পরিমাণে স্বাস্থ্যবান হবেন ঠিক সেই একই পরিমাণে স্বাস্থ্যবান আপনি হতে পারেন শিমের বীচি, বাদাম, ও উদ্ভিদ থেকে পাওয়া অন্যান্য প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়ার মাধ্যমে। এবং উদ্ভিজ্য প্রোটিন উৎপাদন করা বা ক্রয় করা বেশীরভাগ সময়ই মাংস জাতীয় প্রোটিনের থেকে অনেক বেশী সস্তা।

আমাদের নিয়মিতভাবেই প্রোটিন খাওয়া উচিত। গর্ভবতী নারী, শিশু, বয়ষ্ক মানুষ, এবং যারা অসুস্থ্যতা থেকে আরোগ্য লাভ করছে তাদের প্রতিদিন প্রোটিন জাতীয় খাবারের প্রয়োজন। যাদের সব থেকে বেশী প্রয়োজন সেই সমস্ত ব্যক্তিদের এই সব শক্তি-প্রদানকারী খাবার দেওয়া নিশ্চিত করুন।

সবজি ও ফল আমাদের দেহ রক্ষা করে

ফল ও সবজি যেমন আনারস, আভোকাডো ও গাজর

প্রতিদিন ফল ও সবজি খেতে চেষ্টা করুন। এগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও আকরিক আছে যেগুলো:

  • আমাদের দেহের ভিতরের অঙ্গগুলোকে রক্ষা করে।
  • আমাদের চোখ, ত্বক, দাঁত, এবং চুলকে মজবুত রাখে।
  • আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে সচল রাখে এবং আমাদের স্বাভাবিক মল তৈরীতে সাহায্য করে।
  • আমাদের সংক্রামণ ও রোগ জীবাণু থেকে রক্ষা করে।

আপনি যেখানে বাস করেন সেখানে উৎপাদিত ফল ও সবজিগুলো আমদানি করা গুলোর সমপরিমাণেই স্বাস্থ্যকর। এবং এগুলো সাধারণতঃ কম দামে বা বিনা দামে কেনা যায়।

একদল শিশু একটি লম্বা লাটি দিয়ে একটি ফলগাছ থেকে ফল পাড়ছে

রকমারী ফল ও সবজি খান। নীচেরগুলোসহ যে কোন সবজি বা ফল স্বাস্থ্যকর:

  • স্কোয়াশ।
  • তরমুজ।
  • গোল মরিচ, ও অন্যান্য মরিচ।
  • টাটকা মটরশুঁটি ও শিমের বীচি।
  • যে কোন জাম জাতীয় ফল।
  • আম, পেপে, পেয়ারা, কমলা, ও অন্যান্য ফল যেগুলো গাছে ধরে।
  • সবুজ শাক — চাষ করা বা ভোজ্য বন্য সবুজ শাক উভয়ই ভাল এবং মূলজাতীয় সবজির পাতাগুলোও ভাল, যার মধ্যে আছে মিষ্টি আলু, শালগম, এবং কচু।

বিভিন্ন রঙের সবজি বা ফলের মিশ্রণ ভিটামিন ও আকরিকের একটি ভাল বৈচিত্র পেতে সাহায্য করে।

খাদ্যের বৈচিত্রের অভাবে সৃষ্টি সমস্যাসমূহ

আমরা যখন বিভিন্ন ধরনের রকমারী খাবার না খাই, তখন আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন ও আকরিক পাই না। এগুলো অসুস্থ্যতার সৃষ্টি করতে পারে।

রক্তস্বল্পতা ও লৌহ পদার্থ

ক্লান্তি, দুর্বলতা, এবং দ্রুতশ্বাস সাধারণতঃ রক্তস্বল্পতার — রক্তে লৌহ পদার্থের অভাব — কারণে ঘটে থাকে ।

রক্তস্বল্পতা বিশেষ করে নারীদের মধ্যে সচরাচর দেখা যায়, যারা তাদের মাসিক রক্তক্ষরণের সময় লৌহ পদার্থ বের হয়ে যায়। রক্তস্বল্পতার কারণে জন্মানো শিশুর আকার অনেক ছোট হতে পারে এবং জন্মদানের সময় রক্তক্ষরণ বেশ মারাত্মক হয়ে হয়ে উঠতে পারে।

হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ জানতে রক্ত পরীক্ষা রক্তে লৌহ পদার্থের পরিমাণ পরীক্ষা করে দেখে।

একজন নারী তার ফ্যাকাশে মাঢ়ী ও চোখের পাতার ভিতরের অংশ দেখাচ্ছে
রক্তস্বল্পতার চিহ্ন
  • ফ্যাকাশে মাঢ়ী ও চোখের পাতার ভিতরের অংশ
  • দুর্বলতা
  • ক্লান্তি
  • মাথা ঘুরানো
  • শ্বাস নেয়ায় সমস্যা
পদার্থ-সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ, গুড় এবং সবুজ সবজি
চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

লৌহ পদার্থ-সমৃদ্ধ খাবার খান:

  • শিমের বীচি, মটরশুঁটি, এবং ডাল
  • সবুজ পাতা ও সমুদ্র-শৈবাল
  • শুকানো ফল
  • বীচি ও বাদাম
  • হাঁস-মুরগী, মাছ, খোলোসযুক্ত মাছ, বা ছোট ছোট প্রাণীসহ যে কোন ধরনের মাংস


NWTND Nut Page 8-3.png
লোহার পাত্রে রান্না করলে খাবারে লৌহ পদার্থ যুক্ত হয়।

বিভিন্ন অঙ্গের মাংস যেমন যকৃত এবং হৃদপিণ্ড, ও রক্ত দিয়ে তৈরী করা খাবার স্বল্পমূল্যের ও বিশেষভাবে লৌহ পদার্থ সমৃদ্ধ।

খুব ফ্যাকাশে, ক্লান্ত, বা দুর্বল কোন ব্যক্তি, বা যে ব্যক্তির প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ হয়েছে তার মারাত্মক রক্তস্বল্পতা থাকতে পারে এবং তার লৌহ-পদার্থের বড়ি খাওয়া উচিত

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার আমাদের দেহকে আমাদের খাওয়া খাবার থেকে আরও বেশী পরিমাণে লৌহ পদার্থ পেতে সাহায্য করে। তাই খাবার সময় লৌহ পদার্থ-সমৃদ্ধ খাবারের সাথে সাথে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারও খান।

Fruits and green leafy vegetables
সবুজ সবজি ও টমেটো, কমলা, পেপে, আম, তরমুজ, ও জাম জাতীয় ফলসহ বেশীরভাগ ফলেই ভিটামিন সি পাওয়া যায়।

রাতকানা রোগ ও ভিটামিন এ

একটি শিশু রাতের বেলায় একটি পাথরে হোচোট খেয়ে পড়ছে

ভিটামিন এ-এর অভাবে শুধুমাত্র অল্প আলোতে কোন কিছু দেখতে না পাওয়ার (রাতকানা) কারণই ঘটায় না বরং তা সম্পূর্ণ অন্ধত্বের কারণ হতে পারে। ভিটামিন এ স্বাস্থ্যবান ত্বক ও হাড়ের জন্য ও সংক্রামণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যও প্রয়োজন হয়। শিশু ও নারীরা বিশেষ করে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন এ-এর অভাবে ভোগে।

আপনি যদি ভিটামিন এ যুক্ত যথেষ্ট পরিমাণে খাবার না খান তবে:

ভিটামিন এ যুক্ত যথেষ্ট পরিমাণে খাবার না খাওয়ার কারণে সৃষ্ট চিত্রে দেয়া এই তিন ধরনের অন্ধত্বের বিষয়ে নীচে আলোচনা করা হয়েছে
প্রথমে অল্প আলোতে দেখায় আরও বেশী অসুবিধা।
পরে, চোখ শুষ্ক হয়ে যায়। চোখের সাদা অংশ এর ঔজ্যলতা হারায় এবং কুঁচকাতে শুরু করে। ছোপ ছোপ ছোট ছোট ধূসর ফোঁসকা (বিটট-এর দাগ) দেখা দিতে পারে।



রোগটি আর খারাপের দিকে গেলে কর্ণিয়াটি হয়তো ঘোলা ও ছোট ছোট গর্তযুক্ত হতে পারে।
তারপর কর্ণিয়াটি হয়তো তাড়াতাড়ি নরম হতে, ফুলে যেতে বা এমনকি ফেঁটে যেতেও পারে। সাধারণতঃ এখানে কোন ব্যথা থাকে না, কিন্তু অন্ধত্ব ঘটতে পারে।

আপনার এলাকাতে পাওয়া যায় এমন সমস্ত ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার খেয়ে আপনার চোখ রক্ষা করুন।

NWTND Nut Page 9-3.png
  • বেশীরভাগ কমলা ফল ও সবজি — যেমন কুমড়া, গাজর, মরিচ, কমলা তরমুজ, পেপে, আম, বা কমলা মিষ্টি আলু
  • বেশীরভাগ সবুজ সবজি — যেমন সবুজ শাক, মটরশুঁটি, এবং অন্যান্য বুনো ভোজ্য শাক
  • যকৃত
  • ডিম


এই ভিটামিনের অভাব থেকে যদি চোখের ক্ষতির কোন চিহ্ন দেখা যায় তবে ভিটামিন এ (সাধারণতঃ ফোঁটা হিসেবে) সম্পূরক প্রয়োগ করা উচিত। হামের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে শিশুদের অন্ধত্ব রোধ করতে তাদেরকেও ভিটামিন এ সম্পূরক দেয়া যেতে পারে।

গলগণ্ড ও আয়োডিন

খাবারে আয়োডিনের অভাবে গলা ফুলে যাওয়াকে বলে গলগণ্ড। একজন গর্ভবতী নারীর খাবারে আয়োডিনের অভাবে বধিরত্ব ও শিশুটির ক্ষেত্রে অন্যান্য শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধিতা সৃষ্টি করতে পারে। মায়ের যদি গলগণ্ড নাও থাকে তবুও শিশুটির ক্ষেত্রে এগুলো ঘটতে পারে।

গলগণ্ড ও আয়োডিনের অভাব রোধ করার সবথেকে সহজ উপায় হচ্ছে আয়োডিনযুক্ত লবন (প্রক্রিয়াজাত করার সময় আয়োডিন যুক্ত করা লবন) ব্যবহার করা। এর ফলে বেশীরভাগ গলগণ্ডই রোধ হয় এবং গলগণ্ড দূর হয়ে যায়। (পুরাতন, শক্ত গলগণ্ড শুধুমাত্র শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে সরানো যায়, কিন্তু সাধারণতঃ তার প্রয়োজন হয় না।) আপনি আয়োডিন আছে এমন খাবারও খেতে পারেন যেমন মাছ, খোলসযুক্ত মাছ, সামুদ্রিক শৈবাল, এবং সমুদ্র থেকে সংগ্রহ করা অন্যান্য খাবার। কিন্তু কিছু কিছু পাহাড়ী এলাকায় খাবার থেকে যথেষ্ট পরিমাণে আয়োডিন পাওয়া সম্ভব নয়।

একজন গলগণ্ডযুক্ত নারী একটি সাধারণ লবনের ঠোঙা ধরে আছে, এবং গলগণ্ড না থাকা একজন নারী একটি আয়োডিনযুক্ত লবনের ঠোঙা ধরে আছে
আয়োডিনযুক্ত লবনের দাম অন্যান্য লবন থেকে মাত্র সামান্য বেশী
কিন্তু আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভাল।

আপনি যদি লবনকে আয়োডিনযুক্ত করতে না পারেন তবে আপনার হয়তো আয়োডিন সম্পুরক খাবার খেতে হবে

অন্যান্য ভিটামিন ও আকরিকসমূহ

আমাদের অন্যান্য ভিটামিন ও আকরিকসমূহও প্রয়োজন, এগুলোর সবই আমরা বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়ার মাধ্যমে পেতে পারি। খাবার থেকে নিয়মিতভাবে ভিটামিন সংগ্রহ করাই (বড়ি বা বলবর্ধক ঔষধ থেকে নয়) হলো আমাদের দেহের এগুলোকে ব্যবহার করতে পারার সবথেকে ভাল উপায়। নীচে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ভিটামিন ও আকরিকের তালিকা দেয়া হলো।

ভিটামিন ও আকরিকের নাম কোন খাদ্যে এই পুষ্টি উপাদানটি আছে এটি আমাদের দেহের জন্য কী করে যথেষ্ট না পাবার ফলে কী সমস্যা হয়
দস্তা
মাংস, খোলসযুক্ত মাছ, বিভিন্ন শিমের বীচি, দুধ জাতীয় সামগ্রী, পূর্ণ দানা (যেমন: জাতি, বাদামী চাল, বা পূর্ণ গম)।
দস্তাযুক্ত খাবার যেমন মাছ, দুধ এবং শিমের বীচি
বৃদ্ধি, শক্তি, সংক্রামণের সাথে লড়াই করা, এবং দেহের অন্যান্য অনেক কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজন হয়। প্রায়শই সংক্রামণ দেখা যায়। শিশুদের প্রায়ই ডাইরিয়া হয়, এবং তাদের ডাইরিয়া থেকে সেরে উঠতে অনেক বেশী সময় লাগে।
ভিটামিন বি
মাংস, মাছ, যকৃত, ডিম,
পূর্ণ দানা শস্য, সবজি, এবং গেঁজানো ও ঈষ্টযুক্ত করা খাবার যেমন (যেমন পাউরুটি)।
ভিটামিন বি-যুক্ত খাবার যেমন পাউরুটি, কলা এবং আলু
আমাদের কোষ, স্নায়ু, পেশী, এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে কাজ করায় সাহায্য করে। তীব্র ক্ষুধার সময় যখন মানুষের খাওয়ার জন্য মাত্র এক ধরনের খাবার থাকে তখন তাদের পেলাগ্রা নামক মারাত্মক ভিটামিন বি স্বল্পতা দেখা দিতে পারে — এই রোগের ফলে ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যায়, ডাইরিয়া হয়, মানসিক বিভ্রান্তি দেখা যায়।



ফোলিক এ্যাসিড
সবুজ সবজি, শিমের বীচি, মটরশুঁটি, ফল, আভোকাডো, মাশরুম, যকৃত।
ফোলিক এ্যাসিডযুক্ত খাবার যেমন সবুজ শাক এবং শিমের বীচি
বিশেষ করে নারীদের জন্য গর্ভপূর্ববর্তী ও গর্ভকালীন সময়ে গর্ভের শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন।




যথেষ্ট পরিমাণে ফোলিক এ্যাসিড পায় না এমন মায়ের গর্ভে জন্মানো শিশুরা প্রায়শই আকারে ছোট হয় বা জন্ম ত্রুটি নিয়ে জন্মায়,
ক্যালশিয়াম দুগ্ধ সামগ্রী, সামুদ্রিক শৈবাল, গাঢ় সবুজ সবজি, বাদাম ও অন্যান্য বীচি জাতীয় খাবার। কাঁটাসহ ছোট মাছ বেশ ভাল উৎস কারণ মাছের কাটা বেশীরভাগই প্রায় বিশুদ্ধ ক্যালসিয়াম। পরিশেষে গুড়ো করা ডিমের খোঁসা হলো আর একটি উৎস।
ক্যালশিয়ামযুক্ত খাবার যেমন দুধ, পনির এবং মাছ
হাড় ও দাঁত মজবুত রাখে। পেশী ও স্নায়ুগুলোকে সাহায্য করে।
দুর্বল হাড় সহজেই ভেঙে যায়।
আঁশ
শিমের বীচি, পূর্ণ দানার শস্য,
সবজি এবং ফল, বাদাম
এবং বীচি জাতীয় খাবার।
আঁশযুক্ত খাবার যেমন বীচি জাতীয় খাবার ও সবজি
এটি কোন ভিটামিন বা আকরিক নয়,কিন্তু আঁশ পরিপাকে ও স্বাভাবিক পায়খানা হওয়ায় সাহায্য করে। কোষ্ঠোকাঠিন্য এবং পেটের ব্যথা। অনেক বছর ধরে আঁশের অভাব হলে অন্ত্রের ক্যান্সার ও অন্যান্য রোগ আরও বেশী করে দেখা যায়।



ভিটামিনের বড়ি ও ইঞ্জেকশনগুলো কেমন?

একটি সিরিঞ্জের উপর আড়াআড়ি একটি কাটা চিহ্ন এবং না লেখা একটি শব্দ
না!]

কোন কোন মানুষ মনে করে ভিটামিনের বড়ি, সিরাপ, বা ইঞ্জেকশন দুর্বলতা থেকে শুরু করে যৌনসঙ্গম বিষয়ক সমস্যা নিরাময় করতে পারবে। যখন লাইসেন্সপ্রাপ্ত ডাক্তার এবং তথাকথিত ‘ইঞ্জেকশন দেয়ার ডাক্তার’ ভিটামিনকে সর্বরোগ-নিরাময়ক হিসেবে প্রসার করে তখন তা অবস্থার অবনতিই করে মাত্র — এবং আপনার পকেট খালি করে!

যে কেউ সবজি ও ফলসহ বেশ ভাল রকমারী খাবার খায় সে সেখান থেকে তার প্রয়োজনীয় সকল ভিটামিন পায়। সতেজ খাবার কেনার জন্য আপনার অর্থ সঞ্চয় করুন &mdash' দামী ভিটামিন সম্পূরকের জন্য নয়।

ভিটামিন সম্পূরকগুলো এক প্রকারের ঔষধ। ঔষধের মতো এগুলোকে শুধুমাত্র যখন আসলেই প্রয়োজন তখন ব্যবহার করতে হবে। মারাত্মক অপুষ্টির ক্ষেত্রে, বা গর্ভাবস্থায় যখন নারীর দেহের উপর চাহিদা বেড়ে যায় তখন ভিটামিনের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া এগুলো কোন প্রয়োজন নেই এবং এগুলো স্বাস্থ্যের উন্নতি করবে না বা শিশুদের বিকাশ ঘটাবে না।

ভিটামিনের ইঞ্জেকশন এড়িয়ে চলুন। এগুলো শুধুমাত্র বিরল কোন কোন মারাত্মক ঘাটতির ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়। এবং পুনব্যবহৃত সূই ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন কারণ এগুলো জীবাণূ ছড়ায় যার থেকে ফোঁড়া, হেপাটাইটিস, এবং এইচআইভি ছড়াতে পারে।


এই পাতাটি হালনাগাদ করা হয়েছে: ২০ এপ্রিল ২০২৪