Hesperian Health Guides

ক্যান্সার

এই অধ্যায়ে

ক্যান্সার কী?

একজন নারী একটি অনুবীক্ষণযন্ত্র দিয়ে দেখছে।
কোষগুলো এতো ছোট যে শুধু অণুবীক্ষণযন্ত্রের সাহায্যেই আপনি এগুলোকে দেখতে পারবেন।

আমাদের দেহ এবং সকল জীবন্ত জিনিসই কোষ দ্বারা তৈরী। কোষগুলো হলো বিভিন্ন প্রকারের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এক একটি সয়ংসম্পূর্ণ একক যেগুলো একত্রে কাজ করে একটি প্রাণযুক্ত জিনিস সৃষ্টি করে। প্রতিটি কোষেরও প্রাণ আছে। এটি নতুন কোষ তৈরী করতে নিজেকে বিভক্ত করে, এবং প্রতিটিই শেষ পর্যন্ত মারা যায়।

কখনও কখনও একটি নতুন কোষ ভুলভাবে তৈরী হয় ও তা স্বাস্থ্যবান হয় না। সাধারণতঃ এর ফলে সামগ্রীকভাবে দেহের কোন ক্ষতি হয় না, কারণ এটি কোটি কোটি কোষের মধ্যে মাত্র একটি ছোট কোষ, এবং খুব শ্রীঘ্রই এটি মারা যায়। কিন্তু মাঝে মাঝেই ক্ষতিগ্রস্ত একটি কোষ নিজেকে বিভক্ত করে এবং আরও বেশী বেশী করে নিজের আদলে কোষ তৈরী করে। এই ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলো বংশবৃদ্ধি করে এবং দেহের মধ্যে একটি অস্বাস্থ্যকর পিণ্ড সৃষ্টি বা অঙ্গবৃদ্ধি করে যাকে টিউমার বলা হয়।

একটি টিউমার অবিপজ্জনক হতে পারে, মানে এটি ছড়ায় না বা ক্ষতির কারণ হয় না। অথবা এটি ক্ষতিকারক হতে পারে, মানে এটি ক্রমশ বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের অন্যান্য অংশকে আক্রমণ করে। এটি হলো ক্যান্সার। কোষগুলোর ধরন ও এগুলো কোথায় বৃদ্ধি পায় তার উপর নির্ভর করে ক্যান্সার ধীর-বৃদ্ধির এবং অক্ষতিকারক হয়, বা মারাত্মক অসুস্থ্যতার সৃষ্টি করতে পারে বা মৃত্যুও ঘটাতে পারে।

ক্যান্সার কোন একটি রোগ নয়। প্রতি ধরনের ক্যান্সারই ভিন্ন। কোন কোনটিকে প্রতিরোধ করা যায়, এবং কোন কোনটি সহজেই চিকিৎসা করা যায় এবং এমনকি নিরাময়ও হয়। অন্যগুলো প্রাণঘাতী।

আপনার ক্যান্সার হয়েছে মনে করে আপনি যদি চিন্তিত হন

একজন নারী একজন পুরুষের সাথে কথা বলছে।
এটি ক্যান্সার হতে পারে — বা এটি একটি সাধারণ সংক্রামণ হতে পারে!

আপনার ক্যান্সার হয়েছে মনে করা খুবই দুশ্চিন্তাজনক হতে পারে। যদি এমন কোন চিহ্ন দেখা যায় যা ক্যান্সারের হতে পারে তবে সাহায্য নিতে দেরী করবেন না, কিন্তু শান্ত থাকুন আর মনে রাখুন যে কোন কোন ক্যান্সারের চিহ্ন অন্যান্য কম গুরুতর সমস্যাতেও দেখা যেতে পারে।

বেশীরভাগ ক্যান্সারের ক্ষেত্রেই আপনার তা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিতভাবে জানার একটি মাত্র উপায় হলো বায়োপ্সি নামের একটি অস্ত্রোপচার পরীক্ষা যা কোন কোন ক্লিনিক ও হাসপাতালে করতে পারা যায়। বায়োপ্সির সময় একজন স্বাস্থ্য কর্মী দেহের যেখানে ক্যান্সার হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে সেখান থেকে কিছু অংশ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কেটে নিয়ে অণূবীক্ষণযন্ত্রের নীচে রেখে অস্বাভাবিক কোন কোষ আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখে।

যদি আপনার ত্বকের নীচে বা দেহের যে কোন যায়গায় নতুন কোন গোটা বৃদ্ধি পেতে থাকে বা ব্যথার সৃষ্টি করে তবে তা পরীক্ষা করে দেখা উচিত। আর এটি যদি শক্ত এবং স্থির থাকে তবে তা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। গোটাটি সংক্রামণ হতে পারে বা একটি অক্ষতিকারক স্ফীতি হতে পারে এবং এটি নিজে নিজেই চলে যাবে, কিন্তু এটি ক্যান্সারেরও একটি চিহ্ন হতে পারে, যেটি প্রাথমিক পর্যায়েই খুঁজে বের করা ও চিকিৎসা করা যায়। নীচের যে কোন ধরনের গোটার বিষয়ে একজন স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে জানতে চান:

ঘাড়ে ও কুঁচকীতে গোটাযুক্ত একজন ব্যক্তি
  • আকারে বৃদ্ধি পাচ্ছে
  • নতুন দেখা দিয়েছে এবং কয়েক সপ্তাহ পর চলে যায় নি
  • ব্যথার সৃষ্টি করে
  • শক্ত অনুভূত হয়


দেহ লসিকা ব্যবস্থার মাধ্যমে দেহের সংক্রামণের বিরুদ্ধে লড়াই করে, কিন্তু লসিকা গ্রন্থিগুলোও এমন জায়গা যেখানে ক্যান্সার হতে পারে। সহজে চলে যায় না এমন ফোলা বা গোটার বিষয়ে একজন স্বাস্থ্যকর্মীর সাথে যোগাযোগ করুন, বিশেষ করে যদি তা:

  • কানের পিছনে হয়
  • কানের পিছনে বা থুতনির নীচে হয়
  • বগলে এবং কুঁচকীতে হয়


কোন ব্যক্তির অনেক যদি বছর ধরে বৃদ্ধিও পায় না বা পরিবর্তীত হয় না এমন একটি গোটা থাকে তবে তা হয়তো ক্যান্সার নয়।

অনেক চিহ্ন আছে যেগুলো অনেক ক্যান্সারের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কিন্তু সকল ক্যান্সারই এই চিহ্নগুলো সৃষ্টি করে না। এবং এই সকল চিহ্নই দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে দেখা দিতে পারে যা ক্যান্সার নয়। এই অধ্যায়ে নীচের ক্যান্সারগুলোর চিহ্ন সম্পর্কে জানতে পারবেন:

অনেক ক্যান্সারেই চিহ্নগুলো দেখা যায়

সাধারণভাবে চিহ্নগুলো দেখা যায় যখন ক্যান্সার অনেকখানি ছড়িয়ে পড়ে, তাই প্রাথমিকভাবেই ক্যান্সার খুঁজে পাওয়ার জন্য নির্ভর করার মতো কোন চিহ্ন এগুলো নয়।

ক্যান্সার পরীক্ষা করা হয় এমন একটি ক্লিনিকের অপেক্ষা কামরায় একজন নারী। সাইন বলছে ‘প্রতি দুপুরে স্তন ক্যান্সার পরীক্ষা করা হয়।’
ক্যান্সারের পরীক্ষা জীবন বাঁচায়। এগুলো সকলের জন্যই সহজলভ্য হওয়া উচিত।
  • ওজন হারানো
  • সব সময়ই ক্লান্ত লাগে (অবসাদ)
  • তীব্র ব্যথা যা কখনওই ভাল হয় না


আপনার যদি মনে হয় যে আপনার ক্যান্সার হয়েছে, তবে একজন স্বাস্থ্য কর্মীর কাছে যান যিনি চিকিৎসা বা পরিচর্যার জন্য কোন কোন বিকল্প আছে এবং কোথায় যেতে হবে তা বুঝতে আপনাকে সাহায্য করবে। সাক্ষাৎকারের দিন অন্য আর একজন ব্যক্তিকে সাথে আনুন যাতে প্রশ্ন করায় এবং তথ্য মনে রাখায় সে আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

পরীক্ষা কার্যক্রম

কোন কোন ক্যান্সার কোন চিহ্ন সৃষ্টি করার আগেই পরীক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে দ্রুতই সনাক্ত করা যায়, যে কার্যক্রমগুলো নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের পরীক্ষা করে। পরীক্ষা কার্যক্রমগুলো জরায়ু মুখ ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সার সনাক্ত করার জন্যই আয়োজন করা হয় কারণ এই ক্যান্সারগুলো কোন ক্ষতি করার আগেই সনাক্ত করা সম্ভব, এবং এই ক্যান্সারগুলো প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্ত করতে পারলে প্রায়ই সফলভাবে চিকিৎসা করা যায়।

যত তাড়াতাড়ি ক্যান্সার সনাক্ত করা যায়, তত বেশী এটির সফল চিকিৎসা করা সম্ভব।

কাদের ক্যান্সার হয়?

কী কারণে ক্যান্সার হয় সেবিষয়ে আমরা অনেক জানি, কিন্তু কী কারণে কোন কোন ব্যক্তি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় আর অন্যান্য নয় তা সবসময় জানতে পারি না। যে কোন ব্যক্তিই ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে এবং আপনি যত বৃদ্ধ হবেন তবে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বাড়বে। মাত্র কয়েকটি ধরনের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে (বিশেষ করে স্তন ক্যান্সার), পরিবারের যে একজনের এই ধরনের ক্যান্সার হলে অন্য সদস্যেরও সে ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা। কিন্তু বেশীরভাগ ক্যান্সারই ‘পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে চালিত’ হয় না। আমরা জানি:

  • যাদু মন্ত্র, অভিশাপ, বা মন্দ চোখের কারণে ক্যান্সার হয় না।
  • জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি ক্যান্সার সৃষ্টি করে না।
  • ক্যান্সার কোন ভুল কাজ করার শাস্তি নয়।
  • ক্যান্সার এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে স্থানান্তরিত হয় না - যার ক্যান্সার হয়েছে তার কাছে থাকলে, তার সাথে সময় অতিবাহিত করলে বা তার পরিচর্যা করলে ক্যান্সার হওয়া অসম্ভব।


সিগারেট পানের মতো কর্মকাণ্ডের কারণে ক্যান্সার হতে পারে। আমাদের কর্মস্থল থেকে বা খাবারের মাধ্যমে, বা আমরা যে উৎপাদ ব্যবহার করি তার মাধ্যমে, এবং বায়ু ও জল দূষণের মাধ্যমে কোন কোন রসায়নিক আমাদের দেহে প্রবেশ করে যা ক্যান্সারের সৃষ্টি করে। ক্যান্সার রোধ করার অনেক উপায় আছে কিন্তু প্রচুর জিনিষ আছে যার কারণে ক্যান্সার হয় যেগুলোর উপর মানুষের খুব সামান্যই নিয়ন্ত্রণ আছে। এমনকি যদি ২জন ব্যক্তি এক সাথে একই ক্ষতিকর বস্তুর সংস্পর্শে আসেও, এর মানে এই না যে তারা দু‘জনেই ক্যান্সার আক্রান্ত হবে।

যেহেতু ক্যান্সার ও এর কারণগুলোকে রহস্যময় মনে হতে পারে, তাই অন্যান্যরা ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তিদের কোন কোন সময় এড়িয়ে যায় বা তাদেরকে ঠিকমত চিকিৎসা করে না। এর ফলে এই অসুস্থ্যতার আরও অবনতি হয়। ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তিদের আমাদের ভালবাসা এবং সহায়তা প্রয়োজন।


এই পাতাটি হালনাগাদ করা হয়েছে: ২৪ এপ্রিল ২০২৪