Hesperian Health Guides
হৃৎপিণ্ডের অন্যান্য সমস্যা
হেসপেরিয়ান স্বাস্থ্যউইকি > নতুন যেখানে ডাক্তার নেই > অধ্যায়:হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপ > হৃৎপিণ্ডের অন্যান্য সমস্যা
পরিচ্ছেদসমূহ
অনিয়মিত হৃদস্পন্দন (এ্যারিথমিয়া)
প্রায় সবাই তাদের বুকে খুব দ্রুত হৃদস্পন্দন, 'ধড়ফড়ানি' বা দপদপানি, অনুভব করেছে, বা চমকে উঠে ভেবেছে যে তাদের হৃৎপিণ্ডে একটি স্পন্দন বাদ পড়েছে। হৃদস্পন্দনের এই পরিবর্তনকে বলা হয় অনিয়মিত হৃদস্পন্দন বা এ্যারিথমিয়া)। হৃদস্পন্দনের পরিবর্তন একটি সাধারণ ব্যাপার, বিশেষ করে মানুষের বয়স বাড়তে থাকলে, এবং এগুলো সাধারণতঃ ক্ষতিকারক নয়। কিন্তু কোন কোন এ্যারিথমিয়া প্রায়ই ঘটে, এবং সেগুলো বিপজ্জনক, আর তার জন্য চিকিৎসা প্রয়োজন।
ঘন ঘন আপনার হৃদস্পন্দনের পরিবর্তন ঘটলে তা হয়তো আপনার হৃৎপিণ্ডের যথেষ্ট ক্ষতি করবে যার ফলে আপনি অন্যান্য লক্ষণও দেখতে পাবেন। আপনি যদি প্রায়শই হৃৎপিণ্ডে ধক্ধকানি (বুকে বা ঘাড়ে ধড়ফড়ানি অনুভব করা), হৃদস্পন্দন বাদ পড়া অনুভব করেন, বা যদি এগুলো নীচের যে কোন লক্ষণের সাথে ঘটে থাকে তবে একজন স্বাস্থ্য কর্মীর সাথে যোগাযোগ করুন:
- বা দপদপানো হৃদস্পন্দন
- অবসাদ
- মাথা ঘুড়ানো, উদ্ভ্রান্তি
- অচেতন হওয়া বা প্রায়-অচেতন হওয়া
- ঘন শ্বাস নেয়া
- বুকে ব্যথা
কোন কোন পানীয়, ঔষধ, বা মাদক অনিয়মিন হৃদস্পন্দন হওয়ার কারণ হতে পারে বা এর অবস্থা আরও খারাপ করে তুলতে পারে, এগুলোর মধ্যে আছে:
- ক্যাফেইন, এটি কফি, কোন কোন চা, এবং কোন কোন বোতলজাত বা কৌটাজাত পানীয়তে পাওয়া যায়
- নিকোটিন, এটি সিগারেট এবং অন্যান্য তামাক জাতীয় পন্যে পাওয়া যায়
- এ্যালকোহল
- ঠাণ্ডা ও কাশির ঔষধ
- এ্যারিথমিক রোধক। যদিও বিরল, এ্যারিথমিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত একই ঔষধ কোন কোন সময় এ্যারিথমিয়ার সৃষ্টি করে! তাই স্বাস্থ্যকর্মীদের খুব সতর্কতার সাথে এ্যারিথমিয়া সংক্রান্ত ঔষধ ব্যবহারকারীকে পর্যবেক্ষণ করা উচিত।
- কোকেন, মারিয়ুয়ানা, এবং 'স্পীড' (এমফেটামিন) এর মতো মাদক
অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের জন্য যদি আপনি চিকিৎসারত থাকেন এবং এই পানীয়, উৎপাদিত দ্রব্য, বা এগুলো বিদ্যমান এমন কোন পন্য ব্যবহার করে থাকে তবে আপনার স্বাস্থ্য কর্মীকে তা বলুন। এগুলো হয়তে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, বা এ্যারিথমিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধগুলোকে ভিন্নভাবে কাজ করতে বাধ্য করতে পারে।
বুকে ব্যথা (এ্যানজিনা)
এ্যানজিনা হলো আপনার বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি। আপনি যখন স্বাভাবিকের থেকে বেশী সক্রিয় বা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন, এবং আপনি যখন শান্ত হয়ে বসেন তখন তা চলে যায়। যে শিরাগুলো আপনার হৃৎপিণ্ডে রক্ত বয়ে নিয়ে যায় সেগুলো সরু হয়ে গেলে বা বন্ধ হয়ে যাবার ফলে এই ব্যথা দেখা দেয়।
এ্যানজিনা হলে আপনার বুকে বা কাঁধে, বাহু, ঘাড়, চোয়াল, বা পিঠে চাপ বা পেষণ অনুভব হতে পারে। এ্যানজিনাকে অনেক সময় বদহজমের মতো মনে হতে পারে। আপনার অস্বস্তি আরও বাড়তে পারে বা এবং আপনার হয়তো হাঁটার সময় বিশেষ করে উঁচুতে ওঠার সময় ঘন ঘন শ্বাস নিতে হতে পারে।
সকল বুকের ব্যথাই হৃদরোগের লক্ষণ নয়। এটি হয়তো কম সঙ্কটজনক কোন কিছু, যেমন বুক জ্বালা করা বা বদহজম হতে পারে। একটি এ্যান্টাসিড সেবন করুন, এবং তাতে যদি ব্যথা চলে যায় তবে খুব সম্ভবত ব্যথাটি পেটের সমস্যার কারণে হয়েছে।
বুকের ব্যথার দিকে নজর দিন
বুকের ব্যথা হার্ট এ্যাটাকের একটি চিহ্ন হতে পারে, যদিও সকল হার্ট এ্যাটাকই বুকে ব্যথা সৃষ্টি করে না। বুকের ব্যথা ফুসফুসের সংক্রামণ, ফুসফুসের মধ্যে রক্ত নালীগুলো বন্ধ হয়ে গেলে (পালমোনারী এমবোলিজম), বা প্রধান রক্ত নালী ছিঁড়ে যাওয়াসহ অন্যান্য সঙ্কটজনক অবস্থার লক্ষণ হতে পারে।
যেহেতু বুকের ব্যথা হৃৎপিণ্ডের সমস্যার একটি চিহ্ন হতে পারে, তাই এটি একটি জরুরী অবস্থা কিনা তা জানার জন্য পরীক্ষা করা প্রয়োজন। একটি স্বাস্থ্য ক্লিনিকের দেয়া হৃৎপিণ্ডের সমস্যার পরীক্ষাগুলোর মধ্যে আছে রক্ত পরীক্ষা, বুকের এক্স-রে, অথবা একটি ইকেজি (ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম)। ইকেজি করার সময় আপনার বুকে তার লাগানো হয় যাতে আপনার হৃৎপিণ্ড কতটা ভাল কাজ করছে তা পরিমাপ করা যায়। এই পরীক্ষাগুলোর কোনটাতেই ব্যথা লাগে না। বুকের ব্যথার চিকিৎসার মধ্যে খাওয়ার ধরন পরিবর্তন করা, ঔষধ গ্রহণ, বা অস্ত্রোপচার থাকতে পারে।
আপনার যদি কখনও বুকের ব্যথা অনুভব হয় এবং আপনি ইতোমধ্যেই জানেন যে এটি কোন জরুরী অবস্থা নয়, তবে প্রতি বার আপনি অস্বস্তি অনুভব করলে তা লিখে রাখুন। আপনার স্বাস্থ্য কর্মীকে এই লেখা দেখান। আপনি যদি ইতোমধ্যে হৃৎপিণ্ডের জন্য ঔষধ গ্রহণ করে থাকেন তবে ঔষধ কতো ভাল কাজ করছে তা জানতে এই তথ্য আপনার স্বাস্থ্য কর্মীকে সাহায্য করবে। আপনার লেখার মধ্যে নীচের বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত করুন:
- তারিখ এবং সেই দিন আপনি কতবার বুকে ব্যথা অনুভব করেছেন
- বুকের ব্যথা হবার আগে কী হয়েছিল, যেমন শরীর চর্চা করা হচ্ছিল, প্রচণ্ড আবেগ অনুভূত হয়েছিল, অনেক পরিমাণে খাওয়া হচ্ছিল, ঠাণ্ডার মধ্যে বাইরে যাওয়া হচ্ছিল।
- ব্যথাটি মৃদু, কিছুটা শক্তিশালী, বা তীব্র ছিল কিনা।
- ব্যথাটি কত সময় পর্যন্ত ছিল এবং তা বিশ্রাম নেবার পর চলে গিয়েছিল কিনা।
মানুষের খাবার ও জীবনে যে সব পরিবর্তন হৃদরোগে উপশমে সাহায্য করে সেই একই পরিবর্তন এ্যানজিনার জন্য সাহায্যকারী: ধূমপান ত্যাগ করুন, তেলতেলে ও ভাজা খাবার কম খান, কম করে মদ পান করুন বা একেবারেই পান না করুন, এবং মানসিক চাপ কমান। শরীর চর্চা সাহায্যকারী, কিন্তু শরীর চর্চা করার সময় আপনার যদি বুকের ব্যথা হয় তবে আপনার স্বাস্থ্য কর্মীর সাথে কথা বলে জানুন যে কোন ধরনের এবং কতো সময় ধরে শরীর চর্চা করা নিরাপদ। এ্যানজিনায় ব্যবহৃত ঔষধের মধ্যে আছে ক্যালসিয়াম চ্যানেল রোধক, বেটা রোধক, এ্যাসপিরিন, এবং নাইট্রেইট নামের এক ধরনের ঔষধ।
কন্জেষ্টিভ হার্ট ফেইলিয়ার
কন্জেষ্টিভ হার্ট ফেইলিয়ার বলে একটি অবস্থাকে বুঝানো হয় যেখানে আপনার হৃৎপিণ্ড দুর্বল থাকে এবং ভালভাবে চারিদিকে রক্ত পাঠানোর জন্য অনেক কম বলশক্তি প্রয়োগ করে। যার ফলে ফুসফুস, পা এবং দেহের অন্যান্য অংশে বাড়তি তরল পদার্থ জমা হয়। এরকম হলে আপনি দুর্বল হয়ে যাবেন, এবং চিকিৎসা না করা হলে এটি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। কিন্তু চিকিৎসার মাধ্যমে আপনার হৃৎপিণ্ড কতটা ভালভাবে কাজ করবে তার উৎকর্ষতা বাড়ানো যায়, আপনি ভাল অনুভব করবেন, কত দীর্ঘ আপনি বাঁচবেন তার সময় বৃদ্ধি করা যায়।
লক্ষণ
স্ফীত হয়ে ওঠা পা, যাকে ইডিমা বলা হয়, কন্জেষ্টিভ হার্ট ফেইলিয়ার-এর একটি লক্ষণ হতে পারে। |
- অতিরিক্ত ক্লান্তি এবং দুর্বলতা। যখন আপনার হৃৎপিণ্ড যথেষ্ট বলশক্তি দিকে রক্ত পাঠায় না, তখন আপনার পেশীগুলো যথেষ্ট পরিমাণে অক্সিজেন পায় না। আপনি আরও বেশী ক্লান্ত অনুভব করেন।
- ঘন শ্বাস। আপনার ফুসফুসে তরল পদার্থ জমা থাকলে শ্বাস নেয়া আরও বেশী কঠিন। আপনার হয়তো বিশেষ করে রাতে চিত হয় শোয়ার সময়া শ্বাস নিতে অসুবিধা হতে পারে, এবং আপনার হয়তো অনেক কাশি হতে পারে। আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় শিসের মতো শব্দ হতে পারে।
- স্ফীত হয়ে যাওয়া (ইডিমা)। অনেক বেশী তরল পদার্থের কারণে অঙ্গের স্ফীতি কয়েক দিনের মধ্যে, বা কোন কোন সময় আর ধীরে ধীরে ঘটতে পারে। আপনার পা ও গোড়ালী হয়তো ফুলে যেতে পারে এবং আপনার কাপড় বা জুতো হয়তে আঁটসাঁট মনে হতে পারে। এই ধরনের ফুলে ওঠা শুয়ে থাকার পর চলে যায় না।
- তলপেট ফুলে যাওয়া। আপনার যকৃৎ হয়তো ফুলে যেতে পারে এবং পরীক্ষার সময় আপনার স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে এটিকে বড় বলে মনে হতে পারে। আপনার পেট হয়তো তরল পদার্থ দ্বারা পূর্ণ হতে পারে।
- ঘন ঘন মূত্র ত্যাগ করা।
চিকিৎসা
- কম পরিামণে লবণ খান। অনেক লবণ ব্যবহার করা ছাড়াই রান্না করুন, খাবার রান্না হয়ে গেলে এতে কোন আর লবন দেবেন না, এবং কৌটাজাত খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার, বা চিপস বা কুড়মুড়ের মতো জঞ্জাল খাবার এড়িয়ে চলুন। নোনতা স্বাদ না পাওয়া গেলেও প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলোর মধ্যে প্রায়শই প্রচুর পরিমাণে লবণ (সোডিয়াম) থাকে।
- দেহের মধ্য থেকে বাড়তি জল বের করতে যে ঔষধগুলো সাহায্য করে সেগুলোর মধ্যে আছে 'জলের বড়ি' (ডিউরেটিকস বলা হয়)। কোন কোন ডিউরেটিকসের বের করে নেয়া পটাসিয়ামের অভাব পুরণ করতে এই ঔষধগুলো নেয়া কোন ব্যক্তিকে হয়তো কাঁচাকলা, কলা, কমলালেবু, লেবু, বা আভোকাডো খেতে হতে পারে।
- বেটা ব্লকার, যেমন মেটোপ্রলোল, বিসপ্রলোল, এবং কারভেডিলোলও কন্ডেষ্টেভ হার্ট ফেইলিয়ার-এর চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এগুলোকে খুব স্বল্প মাত্রায় শুরু করতে হবে এবং ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করতে হবে, বিশেষ করে আপনার রক্ত চাপ যদি ইতোমধ্যেই অনেক কম থেকে থাকে। আপনার স্বাস্থ্য কর্মীর সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করুন।
- এসিই রোধক, যেমন ক্যাপ্টোপ্রিল, এনালাপ্রিল, বা লিসিনোপ্রিলও কন্ডেষ্টেভ হার্ট ফেইলিয়ার-এর চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। কোন কোন ব্যক্তির এই ঔষধ ব্যবহারের কাশি হয় এবং তাই তাদের স্বাস্থ্য কর্মীর সাথে কথা বলে অন্য ঔষধ ভাল কাজ করবে কিনা তা দেখা উচিত।
রিউম্যাটিক হৃদরোগ
রিউম্যাটিক হৃদরোগ বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই শিশু এবং তরুণদের বেশী আক্রান্ত করে। এটি সাধারণতঃ চিকিৎসা না করা স্ট্রেপ থ্রোট থেকে রিউম্যাটিক জ্বরে রূপান্তরিত হওয়া থেকে সৃষ্টি হয়। রিউম্যাটিক জ্বর সাধারণতঃ সন্ধিগুলোতে ব্যথা, ঘন শ্বাস বা বুকে ব্যথা, অনিয়ন্ত্রীত বা ঝাঁকুনীপূর্ণ নড়াচড়া দিয়ে শুরু হয়। এগুলোর এ্যন্টিবায়োটিক দ্বারা ততক্ষণাৎ চিকিৎসা করা প্রয়োজন। চিকিৎসা না করা হলে রিউম্যাটিক জ্বর হৃৎপিণ্ডের ভাল্ভ এর মধ্যে সংক্রামণ ও ক্ষতচিহ্নের সৃষ্টি করে। এগুলো ভাল্ভগুলোকে বাঁধাগ্রস্ত করে এবং সেগুলো আর ভাল কাজ করে না, ঠিক যেমন একটি ছোট দরজা যেটাকে খুব বেশী খোলা যায় না। হৃদস্পন্দন দুর্বল হতে থাকে এবং ব্যক্তিটিও মারা যায়। এই স্থায়ী ক্ষতিকে রিউম্যাটিক হৃদরোগ বলা হয়। যদি হৃৎপিণ্ডের ভাল্ভের ক্ষতি থামানো না যায় তবে ব্যক্তিটি মারা যেতে পারে।
লক্ষণসমূহ
এ্যন্টিবায়োটিক দ্বারা স্ট্রেপ থ্রোট-এর চিকিৎসা করুন। একটি শিশুর যদি রিউম্যাটিক জ্বর হয় তাবে হৃৎপিণ্ডের ক্ষতি এড়াতে তার প্রতি মাসে চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন। |
- একজন যুবক ব্যক্তির ১০০ মিটার হাঁটতে পারার আগেই ঘন শ্বাস উঠে যায়।
- একটি শিশুকে বালিশ দিয়ে উঁচু করে শোয়াতে হয় নতুবা সে শ্বাস নিতে পারে না।
- একটি স্টেথোস্কোপ ব্যবহার করে একজন প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্য প্রসারক হৃৎপিণ্ডের অস্বাভাবিক মর্মর (ক্ষতিগ্রস্ত হৃৎপিণ্ডের ভাল্ভের মধ্যে দিয়ে রক্ত চলাচলের শব্দ) শুনতে পায়।
চিকিৎসা
- স্বাস্থ্য কর্মী বেঞ্জাথাইন পেনিসিলিন জি মাসে একবার ইঞ্জেকশ্ন আকারে দেবে যাতে সংক্রামণটি আবারও ফেরত না আছে এবং হৃৎপিণ্ডের আরও বেশী ক্ষতি না করে। শিশুটি কমপক্ষে ১৮ বছর হবার আগে পর্যন্ত এটি করে যান।
- হৃৎপিণ্ডটি যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়, তবে ভালভুলোপ্লাস্টি একটি সাধারণ অস্ত্রোপচার যা হৃৎপিণ্ডের ভাল্ভের দিকে এগিয়ে যাওয়া একটি ধমনীর মধ্যে দিয়ে একটি চিকন নল (ক্যাথেটার) প্রবেশ করানোর মাধ্যমে একটি সরু হয়ে যাওয়া ভাল্ভকে খুলে দেয়। এই বন্ধ হয়ে যাওয়া খুলতে একটি ক্ষুদ্র বেলুনকে এর মধ্য দিয়ে ফুলিয়ে দেয়া হয়। রিউম্যাটিক হৃদরোগ যদি অনেক বেশী অগ্রসর হয়ে যায় তবে আরও একটু জটিল অস্ত্রোপচার এটির মেরামত করতে পারবে।
গর্ভধারণ ও শিশুর জন্মের সময় হৃৎপিণ্ডকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। যদি রিউম্যাটিক জ্বর বা রিউম্যাটিক হৃদরোগ হওয়া একজন নারী গর্ভধারণ করে তবে তার হৃৎপিণ্ডের পরীক্ষা করে গর্ভধারণ তার জন্য বিপজ্জনক হবে কিনা তা একজন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন স্বাস্থ্য কর্মীর যাচাই করা উচিত। নারীটি সেবন করছে এমন যে কোন হৃদরোগের ঔষধ গর্ভধারণের সময় ক্ষতিকারক নয় তাও স্বাস্থ্য কর্মীটির নিশ্চিত করা উচিত। একটি হাসপাতালে জন্ম দেয়া নিরাপদ হবে।
রিউম্যাটিক হৃদরোগ বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই নিরাপদ জল বা পয়ব্যবস্থা, ঔষধ পথ্য, বা স্বাস্থ্য পরিচর্যায় প্রবেশগম্যতা না থাকা দারিদ্র, জনাকীর্ণ অবস্থায় পল্লী এলাকায় বসবাস করা অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের মধ্যে দেখা যায়। যে সমস্ত দেশে এই বিষয়গুলোর প্রতি আংশিকভাবে হলেও নজর দেয়া হয়েছে, সেখানে রিউম্যাটিক হৃদরোগ প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়েছে।
হৃৎপিণ্ডের সমস্যা নিয়ে জন্মানো শিশু
খারাপভাবে গঠিত হৃৎপিণ্ড নিয়ে জন্মগ্রহণ করা শিশুরা জন্মের পর পরই মারা যায়। অন্যান্য সমস্যা যেমন হৃৎপিণ্ডের দু'টি প্রকোষ্ঠের মধ্যে ছিদ্র কখনও কখনও কোন চিকিৎসা ছাড়াই চলে যায়। কোন কোন হৃদরোগ সঙ্কটজনক কিন্তু আস্ত্রোপচার বা ঔষধের মাধ্যমে এর চিকিৎসা করা যায়। কোন কোন দেশে শিশুদের জন্য বিনামূল্যে হৃৎপিণ্ডের অস্ত্রোপচার করা যায়।
শিশুর যে হৃৎপিণ্ডে সমস্যা আছে তার কিছু লক্ষণ
- খুব দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস।
- যে শিশুটি খাবার খায় না।
- হৃদস্পন্দন খুব দ্রুত বা খুব ধীর।
একটি স্টেথোস্কোপ ব্যবহার করে একজন্য স্বাস্থ্য কর্মী শিশুটির হৃৎপিণ্ডের শব্দ শুনতে পারে যে হৃৎপিণ্ডের মধ্যে মর্মর হচ্ছে কিনা বা হৃদস্পন্দন খুব-দ্রুত হচ্ছে কিনা। একটি এক্স-রে ব্যবহার করে হৃৎপিণ্ডের আকৃতি কেমন তা দেখা যেতে পারে। শিশুটির হৃদস্পন্দন কেমন তা পরিমাপ করতে একটি ইকেজি প্রয়োজন হতে পারে।
কোন কোন সময় বয়স্ক শিশু বা তরুণদের মধ্যে দেখা যায়। এর কারণ প্রায়শই হৃৎপিণ্ডে খুঁত বা চিকিৎসা না করা রিউম্যাটিক হৃদরোগ।