Hesperian Health Guides
অপুষ্টি
পরিচ্ছেদসমূহ
চিহ্ন
- ধীর বৃদ্ধি ও ছোট আকৃতি
- ক্ষীণতা
- পেশীর ‘ক্ষয়’: দেহ শক্তি যোগান দেয়ার জন্য পেশী থেকে তন্তু ব্যবহার করে
- চিন্তাভাবনা ধীর হয় ও উদ্যামহীনতা দেখা দেয়, কারণ মস্তিষ্ক এর প্রয়োজনীয় শক্তি গ্রহণ করতে পারে না
- আরও বেশী রোগ এবং সংক্রামণ
- প্রায়ই ডাইরিয়া হয়, পুষ্টিহীনতার আরও বেশী অবনতি করে
পুষ্টিহীনতা প্রায়ই দেখা যায় এবং এটি প্রায় সময়ই দীর্ঘস্থায়ী। এর মানে হলো অনেক লোকই দীর্ঘ সময়ের জন্য ক্ষুধার্ত থাকে, তাই তারা যত লম্বা হবার কথা তত লম্বা কখনওই হয় না, তাদের যতবার অসুস্থ্য হওয়া উচিত তার থেকে বেশীবার অসুস্থ্য হয়, এবং তাদের ডাইরিয়া, রক্তসল্পতা, এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসমস্যা ঘন ঘন দেখা দেয়।
চিকিৎসা
আপনার যদি বেশী টাকা-পয়সা নাও থাকে আপনি আরও বেশী ও ভাল খাবার দেয়ার মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী অপুষ্টিহীনতা রোধ করতে পারবেন।
সদ্যজাত থেকে শুরু করে ৬ মাসের শিশুদের জন্য প্রচুর পরিমাণে বুকের দুধ দিন অন্য কোন কিছু না। অন্যান্য যে কোন খাবার সমস্যাকে আর গুরুতর করে তোলে। শিশুটি বেড়ে উঠতে থাকলে বুকের দুধ চালিয়ে যান এবং অন্যন্য খাবার দিতে থাকুন।
অপুষ্টির চিহ্নযুক্ত সকলের জন্য: উচ্চ-বলশক্তিযুক্ত জাউ দিন। আপনার প্রধান শ্বেতসার জাতীয় খাবার দিয়ে জাউ তৈরী করুন এবং তাতে নীচের জিনিসগুলো মিশান:
- প্রোটিন: মাঠকালাইয়ের আটা, চীনাবাদামের মাখন বা অন্য কোন বাদাম বা শিমের বীচির আটা বা কাই। বা রান্না করা শিমের বীচি, ডিম, বা মাছ। বা দুধ, দধি, বা পনির। ব্যয়সাধ্য ও সহজলভ্য যেকোন প্রোটিনযুক্ত খাবার খান।
- বলশক্তি: এক চামন তেল ও এক চামচ চিনি, মধু বা অন্য যে কোন মিষ্টিকারণ জিনিস মিশান। বা ফল মিশান।
- ভিটামিট এবং আঁকরিক: রান্না করা সবজি বা ফল থেকে।
এমনও অনেক সময় আসবে যখন একটি শিশুকে প্রোটিন ও সবজিযুক্ত একটি স্বাস্থ্যকর খাবার দেয়ার মত যথেষ্ট খাবার আপনার নাও থাকতে পারে। তারপরও অন্য কোন খাবার না মিশিয়ে শ্বেতসার জাতীয় খাবার দেয়া এড়িয়ে চলুন। শুধুমাত্র শ্বেতসার জাতীয় খাবার খেয়ে শিশুটির হয়তো পেট ভরেছে মনে হবে কিন্তু সে দুর্বল ও অসুস্থ্য হয়ে বৃদ্ধি পাবে। এক চামচ তেল মিশান। এক চামচ তেল প্রোটিন এবং সবজির ঘাটতি পূরণ করতে পারে না। কিন্তু স্বল্প সময়ের জন্য এটি শিশুটিকে বলশক্তির যোগান দিতে পারে যা শিশুটি শুধু শ্বেতসার জাতীয় খাবার থেকে পায় না।
তার বলশক্তির চাহিদা পূরণের জন্য একটি শিশুকে এই পরিমাণ ভাত খেতে হবে। | 'কিন্তু যখন তেল মিশানো হয় তখন তার মাত্র এইটুকু খেতে হয়। |
অপুষ্টি আছে কিনা তা জানতে সকল শিশুর পরীক্ষা করুন
শিশুদের দীর্ঘস্থায়ী অপুষ্টি প্রায়শই অলক্ষ্যে থেকে যায়। অপুষ্টির পরিক্ষা করতে, শিশুদের নিয়মিত ওজন নিন এবং তাদের বৃদ্ধি স্বাস্থ্য তালিকাচিত্রের পথ-এর মতো একটি তালিকাচিত্রে লিপিবদ্ধ করুন। আপনার যদি কোন ওজনমাপক যন্ত্র না থাকে তবে অপুষ্টি পরিমাপ করার অন্য আর একটি উপায় হলো শিশু উপরবাহু পরিমাপ করা। প্রায় সময়ই শিশুদের বৃদ্ধি পরিমাপ করার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম বা ক্লিনিক থাকে। এই কার্যক্রমগুলো অপুষ্টি মারাত্মক হয়ে ওঠার আগেই ক্ষুধার্ত শিশুকে প্রাথমিক পর্যায়ে সাহায্য করা নিশ্চিত করার একটি ভাল উপায় হতে পারে।
বাহু পরিমাপ করার জন্য প্রায় ২৫ সেন্টিমিটার সমপরিমাণ এক ফালি কাগজ, প্লাষ্টিক, বা কাপড় কাটুন।
আপনার শিশুটি যখন অতিরিক্ত রোগাপাতালা ছিলো, বা প্রচুর পরিমাণে চর্বি ও পেশী আছে সে জায়গাগুলোতে চিহ্ন দিন। ০ সেন্টিমিটারে ‘এখান থেকে পরিমাপ শুরু’ লিখুন, ১১.৫ সেন্টিমিটারে লিখুন ‘অতিরিক্ত রোগা’ এবং ১২.৫ সেন্টিমিটারে লিখুন ‘ভালভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে’। অথবা অন্য যে কোন চিহ্ন যা ব্যবহার করা আপনার কাছে যুক্তিসংগত লাগে।
যথেষ্ট ওজন বৃদ্ধি হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করতে ১ থেকে ৫ বছরের বাচ্চাদের উপরবাহু পরিমাপ করার জন্য আপনার তৈরী করা ফালিটি ব্যবহার করুন। (বাহুর এই পরিমাপ কার্যকর হবে না যদি শিশুরা কাশিয়ারকর নামক একধরনের পুষ্টিহীনতায় ভোগে যার ফলে বাহু ও অন্য জায়গা ফুলে যায়।
যখন একটি শিশু বাহুর পরিমাপ ১১.৫ সেন্টিমিটারের কম হয় (‘অতিরিক্ত রোগা’ দাগের নীচে), বা সে যদি ‘স্বাস্থ্য তালিকাচিত্রে যাবার পথে পিছনে থাকে, বা তার যদি পরবর্তী পৃষ্ঠায় বর্ণিত তীব্র অপুষ্টির সমস্ত লক্ষণ দেখা দেয় তবে সে এতটাই পুষ্টিহীনতায় ভুগছে যে পুষ্টিহীনতা নিজেই একটি অসুস্থ্যতায় পরিণত হয়েছে। তার জরুরী চিকিৎসার প্রয়োজন এবং তাকে উচ্চ-বলশক্তিপূর্ণ খাবার যোগান দেয়ার মাধ্যমে আপনি শিশুটির জীবন বাঁচাতে সাহায্য করতে পারেন
লক্ষ্যনীয়: এই ছবিটি হয়তো বিভিন্ন আকারে ছাপা হতে পারে, তাই একটি রুলার ব্যবহার করে আপনার পরিমাপগুলো সঠিক কিনা তা নিশ্চিত করুন। | "অতিরিক্ত সরু’রেখা | হলুদ (বিদপচিহ্ন) একটি শিশুর বাহুর পরিমাপ এখানে হয় তবে সে পুষ্টিহীনতায় ভোগার ঝুঁকিতে আছে। তাকে অতিরিক্ত খাবার দিন, তার বৃদ্ধি পরিবীক্ষণ করুন, এবং তার প্রতি নিবীড় দৃষ্টি দিন যাতে সে পুষ্টিহীনতায় না ভোগে। |
মারাত্মক তীব্র পুষ্টিহীনতা
মারাত্মক তীব্র পুষ্টিহীনতা যুদ্ধ, খরা, বা দূর্যোগের সময়ে দেখা যায় কারণ খাবার যোগান বাধাগ্রস্ত হয়। বা যে ব্যক্তি বেশীরভাগ সময়ই ভাল গুণাগুণসম্পন্ন খাবার খেতে পায়নি কিন্তু কোনকিছু তাদের প্রয়োজনীয় খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দেয় বা তাদের প্রয়োজনীয় বলশক্তির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় তার হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যখন ইতোমধ্যেই ক্ষুধার্ত একটি শিশু ‘বৃদ্ধি দৌড়’ শুরু হয়েছে এবং তাদের আরও বলশক্তি প্রয়োজন। বা যখন ভালভাল খাবার খেতে না পাওয়া ব্যক্তিদের এইচআইভি, ম্যালেরিয়া, লেইশম্যানিয়সিস, হাম, বা অন্য কোন অসুস্থ্যতা দেখা দেয় এবং সংক্রামণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বলশক্তির জন্য তাদের আরও খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হয়। তাই হঠাৎ করেই ‘কোন মতে যথেষ্ট’ পরিমাণে খাবার খেয়ে যে তারা জীবনধারণ করছিল তা এখন আর যথেষ্ট নয়।
এখানে পুষ্টিহীনতার উপর তথ্যগুলো বিশেষভাবে শিশুদের কেন্দ্র করেই লেখা হয়েছে কারণ তারাই এর কারণে সবথেকে বেশী ভোগে। তারা খুব দ্রুতই ওজন হারায়, এবং তারপর তাদের ক্ষুধামন্দা হয়, এবং তাদেরকে নিরাময় হওয়া ও বেঁচে থাকার জন্য যথা সম্ভব সাহায্য করতে হবে। সাহায্য ছাড়া পুষ্টিহীনতার কারণে সৃষ্ট ক্ষতি তাদেরকে সারা জীবনের জন্য ক্ষতি করতে পারে। বয়স্কদেরও তীব্র পুষ্টিহীনতা হয়, এবং বয়স্কদের জন্য এর চিকিৎসা শিশুদের জন্য চিকিৎসার মতোই এক। একটি তীব্র পুষ্টিহীনতায় ভোগা শিশু এরকম দেখতে হতে পারে:
চুল সহজেই পড়ে যায়
শুষ্ক, পাতলা ত্বক— দেখে মনে হয় ত্বক ঝুলে আছে
এই ধরনের পুষ্টিহীনতাকে ম্যারাসমাস (শীর্ণতা) বলা হয়।
দুর্বল পেশী, সাথে হাতে ও পায়ের ক্ষয়
খুবই রোগা ও খাটো
|
অথবা একটি তীব্র পুষ্টিহীনতায় ভোগ শিশুকে দেখতে এরকম দেখায় :
শুষ্ক, পাতলা হয়ে যাওয়া চুল তার রং হারায় এবং লালচে, হলদে, বা সাদা হয়ে যায়
শুষ্ক ত্বক ছিলে, ও ফেটে যায়
ফুলে যাওয়া পেট
ত্বকের উপর ক্ষত বা গাঢ় ছোপ ছোপ দাগ
এই ধরনের পুষ্টিহীনতাকে বলা হয় কাশিয়ারকর।
চোখের চারদিকে বা পায়ে বা গোড়ালীতে ফোলা
শিশুর ওজন হয়তো স্বাভাবিক থাকবে — তাকে রোগা দেখায় না
অতি ক্লান্ত বা নড়তে চড়তে অনিচ্ছা |
কোন কোন সময় শিশুদের মধ্যে এই দুই ধরনের পুষ্টিহীনতার চিহ্ন দেখা যায়।
এইচআইভি, যক্ষ্মা, কৃমি, বা অন্যান্য দীর্ঘ-মেয়াদী অসুস্থ্যতাযুক্ত ব্যক্তিরা নিয়মিত খাওয়া দাওয়া করলেও অসুস্থ্য হতে পারে। একটি শিশু বা প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রচুর পরিমাণে খাবার খায় কিন্তু তাকে পুষ্টিহীন দেখায় তবে তার হয়তো দীর্ঘ-স্থায়ী অসুস্থ্যতা থাকতে পারে। যে কোন দীর্ঘ মেয়াদী অসুস্থ্যতা নিয়েও স্বাস্থ্যবান থাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো বেশী করে খাবার খাওয়া। কিন্তু সমস্যাটির কারণও খোঁজার চেষ্টা করুন।
আশিকা মারাত্মক পুষ্টিহীনতায় ভুগছিল যখন সে প্রথম ক্লিনিকে আসে। | কয়েক সপ্তাহ পর, ভাল খাবার তাকে সুস্থ্য করে তোলে। |
এই দুই ছবি একই ২ বছর বয়েসী মেয়ে আশিকাকে দেখাচ্ছে। সে নেপালের কাঠমুণ্ডুতে নিউট্রিশনাল রিহ্যাবিলিটেশন হোম (এনআরএইচ)-এ আসে তীব্র পুষ্টিহীনতা নিয়ে। সমৃদ্ধ করা দুধের ফরমুলা এবং স্থানীয় খাদ্য উপকরণের সমন্বয়ে তৈরী মিশ্র খাবারের চিকিৎসার ২৬ দিন পর সে তার বয়স অনুযায়ী যথেষ্ট স্বাস্থ্য অর্জন করে এবং তার মায়ের সাথে বাড়ী ফিরে যায়। এনআরএইচ কোন হাসপাতাল নয়, এটি শুধুমাত্র অনেকগুলো বিছানা, একটি সবজি বাগান, এবং কিছু সংখ্যক যত্নশীল কর্মীসহ একটি বড় ঘর। দারিদ্র, অন্যান্য অসুস্থ্যতা, পুষ্টি সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব, সেই সাথে সাথে যুদ্ধ ও খরা কারণে তীব্র অপুষ্টিতে ভোগা প্রায় ২০টি শিশুকে তারা প্রতিমাসে সাহায্য করে। মায়েরাও তাদের শিশুদের চিকিৎসায় অংশগ্রহণ করে থাকে। তারা পুষ্টি সম্পর্কে শেখে যাতে তারা যখন বাড়ী ফিরে যায় তখন যেন অন্যান্যদের সাহায্য করতে পারে। এরকম খাবার বিতরণ কেন্দ্রগুলো এখানে নিয়ে আসা বেশীরভাগ শিশুরই জীবন বাঁচিয়ে থাকে।
তীব্র পুষ্টিহীনতার চিকিৎসা
একটি তীব্র পুষ্টিহীন শিশুর এক্ষুনি চিকিৎসা সাহায্য প্রয়োজন। আপনার এলাকাতে যদি কোন খাবার বিতরণ কেন্দ্র থাকে তবে শিশুটিকে সেখানে নিয়ে যান, বা আপনাকে নিজেকেই হয়তো এই সেবাটি দিতে হবে। নীচের উপদানগুলোর যোগান দিন:
- খাবার।
- পানীয় (জলপূর্ণতা)।
- উষ্ণতা, বিশেষ করে রাতে।
- ঔষধ।
খাদ্য
দ্রুত বলশক্তি ও পুষ্টি উপাদানের যোগান দিতে অতি মাত্রায় ঘনীভূত খাবার দিন। সাধারণ শ্বেতসার জাতীয় জাউ যথেষ্ট নায়।
আপনি আপনার ঘরে বসেই উচ্চ-বলশক্তিযুক্ত খাবার তৈরী করতে পারবেন। এই ঘরে তৈরী উচ্চ-শক্তির খাবার ‘রোগনিরাময় সংক্রান্ত’ খাবার যেমন প্লাম্পি’নাট-এর মতো উপকারী এবং হয়তো কোন কোন দিক থেকে ভালও। এগুলো যে কোন শিশু বা কিশোরের জন্যও ভাল খাবার, কারণ বেড়ে ওঠা ও ভাল থাকার জন্য সকল শিশুদেরই ঘনীভূত বলশক্তি ও পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন।
আপনি যেখানে বাস করেন সেখানকার স্থানীয় খাদ্য উপকরণ ব্যবহার করে চার ধরনের খাবার একত্র করুন: জাউ, প্রোটিন, চর্বি বা তেল, এবং সবজি।
- শ্বেতসার জাতীয় বলশক্তি জাতীয় খাবার দিয়ে ১ কাপ জাউ তৈরী করুন।
নীচের যে কোন একটি চয়ন করুন:
সাধারণতঃ যে শ্বেতসার জাতীয় খাবার আপনি আপনার পরিবারে জন্য তৈরী করেন সেটি ব্যবহার করে ঘন থকথকে করে রান্না করুন (পাতলা ঝোল নয়)।- বাজরা
- ভুট্টা
- চাল
- গম
- কাসাভা
- রাঙ্গা আলু বা আলু
- একটি উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার এতে মিশান।
নীচের উপাদানগুলোর যে কোনটি চয়ন করুন:
- ২ টেবিলচামচ গুড়ো দুধ
- ১টি ডিম
- আধা কাপ রোস্ট করা, থেঁতলানো বা গুড়ো করা বীচি বা বাদাম
- আধা কাপ রান্না, ভর্তা করা শিমের বীচি, ডাল, বা মটরশুঁটি
- আধা কাপ রান্না করা শিমের বীচি বা মটরের আটা
- আধা কাপ শুকনো থেতলানো মাছ
- আধা কাপ রান্না করা, ছোট ছোট করে কাটা মাংস বা বিভিন্ন অঙ্গের মাংস - ২ টেবিলচামচ চর্বি বা তেল।
এগুলোর যে কোনটি চয়ন করুন:- যে কোন সবজি বা বাদাম তেল, ঘি, বা অন্য চর্বি জাতীয় জিনিস - আধা কাপ রান্না করা সবজি।
এগুলোর যে কোনটি চয়ন করুন:
- টমেটো
- সবুজ পাতাযুক্ত সবজি
- স্কোয়াশ
- কুমড়া
- সবুজ শিমের বীচি
- সতেজ মটর
- ঢেঁড়স
- বা অন্যান্য সবজি
এই উচ্চ বলশক্তিযুক্ত পায়েস দিনে ৪ বা ৫ বার করে দিন।
একটি পুষ্টিহীন শিশু হয়তো খেতে নাও চাইতে পারে বা হয়তো যেটুকু বলশক্তি আছে তাতে খুব ধীরে খাবার খেতে পারে। প্রতি ঘন্টায় বা দু’ঘন্টায় একবার করে অল্প অল্প খাবার দিন। ধৈর্য্য ধরুন এবং পরিমাণ ঠিক রাখুন। এই উচ্চ-বলশক্তির খাবার শিশুটিকে খাওয়াতে থাকুন যতক্ষণ না পর্যন্ত শিশুটির ওজন বৃদ্ধি না হয় এবং তার বলশক্তি এবং উদ্দীপনা ফিরে পায়।
রান্না করা বা খাবার পরিবেশন করার আগে আপনার হাত ধুয়ে নিন, পরিষ্কার পাত্র ব্যবহার করুন, এবং যতটুকু খাবার রান্না করবেন তার পুরোটাই একদিন বা দেড় দিনের মধ্যে খাইয়ে দেবেন। যে কোন খাবারের মতোই উচ্চ-বলশক্তির খাবারও দ্রুত নষ্ট হয়ে যাবে যদি আপনি যেখানে বাস করে সেখানে প্রচুর গরম থাকে।
শিশুটি যদি এখনও বুকের দুধ খায়, তবে প্রথমে তাকে বুকের দুধ খাওয়ান এবং পরে তাকে এই উচ্চ-বলশক্তিপূর্ণ খাবার দিন। ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়ান — কারণ অপুষ্টিতে ভোগা শিশু হয়তো প্রতিবার খাওয়ানোর সময় যথেষ্ট পরিমাণ খেতে পারার মতো যথেষ্ট সবল নাও হতে পারে।
তাছাড়াও প্রতিদিন তাকে ফল খাওয়ান। যে কোন ফল তাকে ভিটামিনের যোগান দেবে। কিন্তু যদি আপনি পারেন তবে এক একদিন এক এক ধরনের ফল খাওয়ান — যাতে শিশুটি বিভিন্ন রকমের ভিটামিন পেতে পারে।
পানের জন্য পানীয় (জলপূর্ণতা)
বেশীরভাগ পুষ্টিহীন শিশুই ডাইরিয়ার কারণে জলশূন্যতায় ভোগে। তাই একজন মা যদি বুকের দুধ খাওয়ায় তবে যত ঘন ঘন সে পারে তার তা চালিয়ে যাওয়া উচিত।
বুকের দুধের সাথে জলপূর্ণতার পানীয় পান করান। তীব্র অপুষ্টিতে ভোগা একটি শিশুর সাধারণ জলপূর্ণতার পানীয়তে ব্যবহার করা পরিমাণের থেকে একটু কম লবন এবং একটু বেশী চিনি প্রয়োজন। তাই:
এক লিটার পরিষ্কার জলে | |||
১/৪ চা চামচ লবন মিশান | |||
দ্রবণটি চেখে দেখুন। এটি চোখের জলের থেকে কম নোনতা হওয়া উচিত। | |||
তারপর তাতে ৯ চা চামচ চিনি মিশান | |||
প্রতি কয়েক মিনিট পর পর এক চামচ করে এই দ্রবণটি দিতে থাকুন। একজন পুষ্টিহীন শিশুর হয়তো পান করার মতো যথেষ্ট শক্তি নাও থাকতে পারে। তাই আপনি যখন তার মুখে চামচ দিয়ে এই পানীয়টি তুলে দেবেন তখন তার মাথা তুলে ধরুন। |
উষ্ণতা
তীব্র অপুষ্টি থাকলে দেহ নিজেকে যথেষ্ট উষ্ণ করার জন্য যে বলশক্তি প্রয়োজন তা পায় না। নিয়মিত ব্যক্তিটির গায়ের তাপমাত্রা পরিমাপ করুন। তার গায়ের তাপমাত্রা ফিরে আসা পর্যন্ত বেশ কয়েকদিন তাকে কম্বল দিয়ে ঢেকে রাখুন। রাতের বেলাতেই মানুষের বেশী ঠাণ্ডা লাগে, তাই সেসময় তার অতিরিক্ত কম্বল প্রয়োজন হবে।
ঔষ
তীব্র পুষ্টিহীনতা একটি অসুস্থ্যতা এবং এর জন্য ঔষধের প্রয়োজন। তীব্র অপুষ্টিতে ভোগা একটি শিশুর বিভিন্ন সংক্রামণ হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক। কিন্তু তার দেহ এতোই দুর্বল যে সে কোন চিহ্ন দেখাতে পারে না, যেসব চিহ্ন সাধারণতঃ আমাদেরকে বলে দেয় যে কেউ একজন অসুস্থ্য হয়েছে। এই কারণে এমনকি তার যদি কোন জ্বর নাও থাকে বা দৃশ্যত কোন সংক্রামণ দেখা নাও যায় সংক্রামণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে তাকে ঔষধ দিন। তীব্র পুষ্টিহীন শিশুকে:
- এ্যামক্সিসিলিন বা অন্য এন্টিবায়োটিক, দিনে ৩ বার, সাত দিনের জন্য
- হামের টিকা দিন (যদি আপনি নিশ্চিত না হন যে হামের বিরুদ্ধে শিশুটির টিকা দেয়া আছে),টিকা দেখুন।
- ভিটামিন এ সম্পুরক খাদ্য
- দস্তা সম্পুরক খাদ্য
- মেবেন্ডাজল (আপনি যেখানে থাকেন সেখানে যদি সচরাচর কৃমির সংক্রামণ দেখা যায়)
শিশুটির দিকে ভাল করে নজর দিন
একটি পুষ্টিহীন শিশুর অবস্থা খুব দ্রুত মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে, এবং তার যত্নশীল মনোযোগ প্রয়োজন।
আপনি যখন পানীয় এবং খাবার দেয়া শুরু করবেন, তখন তার হৃদস্পদন ও নিশ্বাস-প্রশ্বাসের হার পরীক্ষা করে দেখুন (একজন অসুস্থ্য ব্যক্তিকে পরীক্ষা করা - সংকলিত হচ্ছে দেখুন)। আপনি জলপূর্ণতার পানীয় দিতে থাকার সময় যদি এগুলো বেড়ে যায় তবে তা দেওয়া বন্ধ করুন এবং চিকিৎসা সহায়তা গ্রহণ করুন। তার হৃদপিণ্ডের হয়তো এই পানীয় মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে। শিশুটি কি ভাল হচ্ছে? কয়েক দিন পর যদি সে ভাল না হয়, তবে তার কোন সংক্রামণ বা অসুস্থ্যতা আছে যা তার জন্য আরও সমস্যার সৃষ্টি করছে। আপনার হয়তো কোন হাসপাতালে যেতে হবে। এছাড়াও শিশু যদি কোন সময় অচেতন হয়ে যায় (অজ্ঞান হয়ে যায়), তার খিঁচুনী ওঠে, বা তার জ্বর হয়, ৩৮ºসে (১০০.৪ºফা) বা তার বেশী তবে অতিরিক্ত সাহায্য গ্রহণ করুন।
বেঁচে থাকা ও ভাল হয়ে ওঠার জন্য শিশুটি কী প্রয়োজন তা শিশুটির প্রাথমিক পরিচর্যাকারীকে বুঝতে সাহায্য করুন। জলপূর্ণতা, খাবার, এবং যে কোন প্রয়োজনীয় ঔষধ ও সেই সাথে সাথে ভবিষ্যতে শিশুকে আরও বেশী করে খেতে কিভাবে সাহায্য করতে হবে সে সম্পর্কে ভালভাবে ব্যাখ্যা করুন। শিশুটিকে খাওয়ানোর সময় পরিচর্যাকারীকে ধৈর্য্য ধরতে ও পরিমাণ অব্যহত রাখার বিষয়ে মনে করিয়ে দিন। শিশুটির খাদ্য ও পরিচর্যার বিষয়ে নজর না দিলে সে দ্রুতই আবার পুষ্টিহীনতার অবস্থায় চলে যাবে। পরিচর্যাকারীকে করণীয় বিষয়গুলো আপনার কাছে বলতে বলুন যাতে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে সে এগুলো বুঝতে পেরেছে। এবং সাহায্য করতে যা প্রয়োজন আপনি তাই করুন। সাধারণতঃ একটি পুষ্টিহীন শিশুর পরিচর্যার ভার ন্যাস্ত হয় একজন মায়ের কাছে যে ইতোমধ্যেই তার অন্যান্য সন্তানদের দেখাশুনা করছে এবং গৃহস্থালীর কাজ করছে, এবং যে নিজেই যথেষ্ট পরিমাণ খাবার খেতে পারছে না। সেই মাকে সাহায্য করলে শিশুটিকেও সাহায্য করা হবে।
যত ভালভাবেই সে নিরাময় হোক না কে, যে শিশুর তীব্র পুষ্টিহীনতা হয়েছে তার মন ও দেহ বৃদ্ধি পাচ্ছে ও শক্তিশালী হচ্ছে তা নিশ্চিত করার জন্য তাকে নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করতে হবে।
ততক্ষণাৎ খাওয়া-যোগ্য চিকিৎসামূলক খাবার
মানুষ যখন ক্ষুধায় কষ্ট পায় তখন আপনি হয়তো মোড়কজাত, ‘ততক্ষণাৎ খাওয়া-যোগ্য চিকিৎসামূলক খাবার’ (আরইউটিএফ) পেতে পারেন। বিশেষ করে শরণার্থী কেন্দ্রগুলোতে যদি আপনার আর অন্য কিছু না থাকে তবে এই উচ্চ বলশক্তির খাবার জীবনরক্ষাকারী হতে পারে । কিন্তু এগুলোরও সমস্যা আছে। তানজানিয়ার একজন শিশু চিকিৎসক ডা মাসিমো সারভেনতি বহুল পরিচিত আরইউটিএফ প্লাম্পি’নাট সম্পর্কে তার উদ্বেগের বিষয় আমাদের কাছে লিখেছেন:
(সীমানাবিহীন চিকিৎসক (এমএসএফ) দ্বারা চ্যালেঞ্জপ্রাপ্তা হবার পর যে কোম্পনী প্লাম্পি’নাট উৎপাদন করে তারা স্থানীয় কোম্পানীগুলোকে তাদের উৎপাদগুলোকে প্লাম্পি’নাট-এর প্রস্তুতপ্রনালী ব্যবহার করে উৎপাদন করার অনুমতি দিতে সম্মত হয়েছে।)