Hesperian Health Guides
মশা রোধ করে অসুস্থ্যতা রোধ করুন
হেসপেরিয়ান স্বাস্থ্যউইকি > নতুন যেখানে ডাক্তার নেই > মশার বংশবিস্তার রোধ করুন
ভিন্ন ধরনের মশা ভিন্ন ধরনের জলের উপর বংশবিস্তার করে। প্রাপ্তবয়স্ক মশা মারা এদের কামড় খাওয়া ও এদের বংশবৃদ্ধি উভয়ই রোধ করে, কিন্তু জলের মধ্যে পাড়া এদের ডিম বা ফোটা লার্ভা মেরে ফেলা বা মশার ডিম পাড়ার জন্য প্রয়োজনীয় জল অপসারণ করা সবথেকে বেশী কার্যকারী।
যে মশা ডেঙ্গু, পীত জ্বর, জিকা, এবং চিকুনগুনিয়া বহন করে সেগুলো পরিষ্কার স্থির জলে বংশবৃদ্ধি করে। মশা যদি জল পায় তবেই তারা ডিম পাড়ে। দু'দিন পর ডিম ফুটে লার্ভা বের হয় যেগুলো জলপৃষ্ঠের ঠিক নীচেই জীবন ধারণ করে। আরও ৪ দিন পর লার্ভাগুলা পাখাযুক্ত মশায় রূপান্তরিত হয়। এবং আর ২ দিন পর এগুলো উড়ে চলে যেতে পারে। প্রতি সপ্তাহে স্থির হয়ে থাকা জল ফেলে দেয়ার মাধ্যমে মশার বংশবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয় কারণ ডিম ফোটে না।
যে মশা ম্যালেরিয়া ছড়ায় সেগুলোও জলে ডিম পাড়ে—কোন কোন সময় সামান্য একটু পরিষ্কার জলে বা ডেঙ্গু মশার মতো ঘরের কাছাকাছি কোথাও কিন্তু সেঁচন করা যায় না বা ভরাট করা যায় না এমন বড় বড় জলাধারেও এরা ডিম পাড়ে। আপনার ঘরের মধ্যে বা কাছাকাছি কোন ধরনের মশা থাকলে জল জমা হয় বা রাখা হয় এমন জায়গাগুলো সরিয়ে ফেলা বা খালি করে ফেলা বা দৃঢ়ভাবে ঢেকে দেয়া ভাল।
ঘর ও এলাকার চারপাশ থেকে মশার বংশবৃদ্ধির স্থানগুলো সরিয়ে ফেলুন
ঘরের বাইরে: গাড়ীর পুরাতন টায়ার, ফুলের পাত্র, তেলের ড্রাম, ছোট গর্ত, ছোট প্লাষ্টিকের পাত্র বা খেলনা এবং বোতলের ঢাকনা যেগুলোতে জল জমে সেগুলো সরিয়ে ফেলুন। প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে একবার তা করুন। একটি ঢালু ছাদ বা চাল আর ছাদে বা মাটিতে জল জমতে পারে এমন জল ধরার একটি ব্যবস্থা মশার বংশবৃদ্ধি রোধে সাহায্য করে। জল জমতে পারে এমন গাছের গর্ত ভরাট করে দিন এবং বেড়া বিশেষ করে বাঁশের বেড়ার ফাঁপা অংশগুলো ভরাট করে দিন।
একটি এলাকায় মশা ও এদের ডিম আকর্ষণ করা ও মারার ফাঁদ তৈরী করতে বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এক ধরনের ফাঁদ আছে যেটিতে মশা রোধের জন্য সরিয়ে ফেলতেই হবে এমন এক টুকরা পুরাতন টায়ার ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ঘরের ভিতরে: প্রাণীর জন্য ব্যবহৃত জলের পাত্র এবং ফুলদানী প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে একবার পরিবর্তন করুন। পাত্রগুলোকে ঘষে না ধুলে মশার ডিম পাত্রের পাশে লেগে থাকবে যেখানে এগুলো মাসের পর মাস বেঁচে থাকতে পারে যতক্ষণ না এগুলো ফোটার জন্য আবারও জলের সংস্পর্শে আসে।
ঘরের বাইরে ও ভিতরে: সবসময়ই দৃঢ়ভাবে জল সংরক্ষণের পাত্রগুলোকে ঢেকে রাখুন যাতে মশা ভিতরে ঢুকে ডিম পাড়তে না পারে। যদি কোন ডিম পাড়া হয়ে থাকে তবে ঢাকনা থাকার কারণে মশাগুলো উড়ে চলে যেতে পারবে না। যদি কোন গর্ত বা ফাঁকা জায়গা থেকে থাকে তবে ঢাকনায় কোন কাজ হবে না। ঢাকনা ছাড়া কোন পাত্র, পিপা, বা জলের চৌবাচ্চার ক্ষেত্রে কাপড়ের পর্দা বা মশা প্রবেশ করতে না পারার মতো ছোট ছোট ছিদ্রযুক্ত তারের জাল ব্যবহার করুন, বা এমন একটি কাপড় দ্বারা ঢেকে দিয়ে মুখ বেঁধে দিন যার মধ্য দিয়ে জল প্রবেশ করবে। অথবা একটি প্লাষ্টিকের ঢাকনা ব্যবহার করুন যেটা দৃঢ়ভাবে আঁটকে থাকে। নিশ্চিত হোন যে বৃষ্টির জল ঢাকনার উপর জমা হতে না পারে অন্যথায় মশা তার উপর তাদের ডিম পাড়বে!
জলপথ নিয়ন্ত্রণ করুন এবং কূঁয়া ও কলতলার গড়িয়ে যাওয়া জল সরে যাবার জন্য নালার ব্যবস্থা করুন
যেখানে ম্যালেরিয়া আছে সেখানেই সড়কপথ এবং জল জমা হয় এমন যে কোন জায়গায় মশার বংশবৃদ্ধি রোধ করতে মনযোগ দেয়া প্রয়োজন। স্বাভাবিক জলপথ এবং বৃষ্টির জল প্রবাহিত রাখার মাধ্যমে জলের জমা হওয়া রোধ করবে। এমনভাবে স্থলভূমির ব্যবস্থাপনা করুন যাতে জল মাটিতে শুষে যায় বা বিভিন্ন জলধারায় গিয়ে মেশে। ভেঙ্গে পড়া মাটি, পাতা, বা অন্যান্য ভগ্নাবশেষ দ্বারা আটকে যাওয়া জলের ধারা ছাড়িয়ে দিন। কিভাবে জলের ব্যবস্থাপনা করতে হবে এবং বর্জ্য জলের গর্ত সৃষ্টি না করে কিভাবে পায়খানা বাছাই করা যায় সেবিষয়ে হেসপেরিয়ানের পরিবেশ স্বাস্থ্য বিষয়ে জনগোষ্ঠীর জন্য একটি সহায়িকায় আরও তথ্য রয়েছে।
যখনই মানুষ জল সংগ্রহ করে তখনই জল ছলকে পড়ে। যখন জল খানা-খন্দে জমা হয় তখন তা ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য অসুস্থ্যতা বহনকারী মশার বংশবৃদ্ধির স্থান হয়ে ওঠে। তাই কূঁয়া, কল, সংরক্ষণ চৌবাচ্চার নির্গমদ্বার, এবং অন্যান্য জল সংরক্ষণ এলাকায় ছলকে পড়া জল সরে যেতে বা মাটিতে শুষে যেতে ভাল নালার ব্যবস্থা প্রয়োজন।
গড়িয়ে যাওয়া জলের সুযোগ নিতে যেখানে জল গড়িয়ে যায় সেখানে একটি গাছ লাগান বা একটি সব্জির বাগান করুন। আপনি কোন গাছ লাগাতে না পারলে বা বাগান করতে না পারলে মাটিতে একটি গর্ত করে তা পাথর, সুরকি, এবং বালি দিয়ে ভরুন যাতে এখানে জল শুষে যায়। এটাকে বলা হয় শোষণকূপ। এটি মশার বংশবিস্তার রোধ করতে সাহায্য করবে।
আপনার এলাকায় পুকুর এবং হ্রদে মশার লার্ভা খায় এরকম মাছ ব্যবহার করার কার্যক্রম আছে কিনা তা দেখুন। অথবা জানুন যে বিটিআই নামের ব্যাক্টেরিয়া পাওয়া যায় কিনা কারণ বংশবিস্তার করার আগেই তরুণ মশা মারতে এটির সফল ব্যবহার করা যায় এবং এটি পরিবেশের কোন ক্ষতি করে না।