Hesperian Health Guides

মশা রোধ করে অসুস্থ্যতা রোধ করুন

এই অধ্যায়ে

মশার কামড় এড়িয়ে এবং বাড়ীর মধ্যেএলাকায় মশার বংশবৃদ্ধি রোধ করে মশাবাহিত অসুস্থ্যতাগুলো রোধ করা যায়।

এগুলো করতে বিভিন্ন ধরনের মশা কোথায় বংশবিস্তার করতে পছন্দ করে, কোথায় এগুলো বিশ্রাম করে, এবং কখন তারা কামড়ায় তা আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, ম্যালেরিয়ার মশা পল্লী এলাকায় সচরাচর দেখা যায়, এবং প্রায়শই জলাভূমি এবং অন্যান্য স্থির জলে বংশবিস্তার করে। পল্লী ও শহর উভয় জায়গাতেই ডেঙ্গু ও পীত জ্বরের মশা ঘরের ভিতরে বা কাছাকাছি যেখানে পরিষ্কার জল জমা হয় বা সংরক্ষণ করা হয় সেখানে থাকে। ঘরের ভিতরে অনেক মশাই ছায়াযুক্ত, অন্ধকার জায়গা, যেমন টেবিল বা বিছানার নীচে, কোণাগুলোতে থাকে। ঘরের বাইরে এগুলো ছায়াযুক্ত এলাকা খুঁজে বের করে।

পাঁচজন পুরুষ ও নারী কথা বলছে
আমরা এই মশা সম্পর্কে কী জানি? এবং কিভাবে আমরা এদের কামড় এড়াতে পারি?
এগুলো বেশীরভাগ সময় ভোরে এবং সূর্য্য ডোবার পর কামড় দেয়।
‌আমরা ছোট শিশুদের এই সময়গুলোতে মশারীর নীচে রাখতে পারি।
এবং আমরা লোকদেরকে সূর্য্যাস্তের পর স্নান না করার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিতে পারি!

মশা কিভাবে রোগ ছড়ায়


 একটি মশার কামড়ের মাধ্যমে রোগের কিভাবে বিস্তার ঘটে তার একটি চিত্র
একটি স্ত্রী মশা রক্তে জিকা, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, পীত জ্বর, বা ম্যালেরিয়া থাকা কোন ব্যক্তিকে কামড়ায়
একই মশা স্বাস্থ্যবান কোন ব্যক্তিকে কামড় দিয়ে তার মধ্যে প্রথম ব্যক্তি থেকে পাওয়া ভাইরাস বা পরজীবিগুলো ছড়িয়ে দেয়
এখন এই ব্যক্তি সংক্রামিত হয়েছে এবং একটি নতুন মশা তাকে কামড় দেয়
সেই মশা আবার অন্যান্য ব্যক্তিদের কামড়ায় আর রোগের বিস্তার করে

মশার কামড় এড়িয়ে চলুন

  • বাহু, পা, ঘাড়, এবং মাথা যতটা সম্ভব ঢাকা যায় এমন কাপড় পড়ুন (লম্বা হাতা ও লম্বা প্যান্ট বা ঘাঘরা, মাথা ঢাকার একটি কাপড় এবং জুতো, বা মোজার সাথে চপ্পল পড়ুন)।
  • জানালা, দরজা, এবং বায়ু চলাচলের ফাঁকা জায়াগায় তারের জাল (পর্দা) ব্যবহার করুন। জানালার চারপাশে ফাঁক থাকলে তা ঢেকে দিন এবং জালের মধ্যে কোন ছিদ্র থাকলে তা মেরামত করুন।
  • জালের পর্দা না থাকলে মশা বের হবার সময় দরজা ও জানালা বন্ধ করুন।
  • একটি বৈদ্যুতিক পাখা থেকে সৃষ্ট বাতাস মশা দুরে রাখতে পারে।
  • রাতের বেলা ও দিনে যদি বিশ্রাম করেন তবে মশারী ব্যবহার করুন।
  • ঘরের বাইরে ঘুমালে নিজেকে মশা থেকে রক্ষা করতে একটি মশারী ব্যবহার করুন।

মশারী মশার কামড় রোধ করতে সাহায্য করে

মশারী দু'ভাবে মশা বাহিত অসুস্থ্যতা রোধ করে। কোন ছিদ্র বা ফাঁকা জায়গা ছাড়া মশারী এর নীচে থাকা কোন ব্যক্তির কাছ পর্যন্ত মশাকে পৌছাতে দেয় না। এবং কীটনাশক মেশানো মশারীর উপর মশা বসলেই এটি মারা যায়। এলাকায় রোগ বয়ে নিয়ে আসা মশার সংখ্যা কমাতে প্রতিটি বিছানার জন্য একটি করে মশারী ব্যবহার করুন। বিভিন্ন কার্যক্রম কীটনাশক-মেশানো মশারী বিনামূলে দিয়ে থাকে কারণ যখন সবাই এগুলো ব্যবহার করে তখন মশার সংখ্যা কমে যায় এবং ম্যালেরিয়াও তখন কম দেখা যায়।

একজন নারী একটি শিশুর সাথে কথা বলছে
ছোট ছোট ছিদ্রগুলোকে সেলাই করলে মশারীটি দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করা যাবে। পরের বার মশারী ছিড়ে গেলে তুমি ও তোমার ভাই সেলাইয়ের কাজটি করতে পারো।

মশার কামড় এড়াতে সবসময়েই আপনার মশারী ঝুলে থাকা অংশগুলো বিছানার নীচে বা তোষকের নীচে গুঁজে দিন যাতে কোন ফাঁকা না থাকে। মশারী শুধুমাত্র তখনই ভাল কাজ করে যখন ছিদ্র বা ছেঁড়া জায়গাগুলোকে দ্রুত সেলাই করে বন্ধ করে দেয়া হয়।

কীটনাশক মেশানো মশারী দীর্ঘ দিন স্থায়ী হবার উদ্দেশ্যে তৈরী করা হয়, তার মানে হলো কীটনাশক এক বছরের জন্য বা এমনকি বেশ কয়েক বছর ভাল কাজ করতে পারে। আপনি যদি একটি মশারী কেনেন বা আপনাকে একটি মশারী দেয়া হয় তবে কতো দীর্ঘ সময়ের জন্য কীটনাশক স্থায়ী হবার কথা এবং মশারীটিকে অতিরিক্ত ধোয়ার ফলে এটির কার্যকারীতা কমে যাবে কিনা তা জানুন।

পুরনো মশারীর ক্ষেত্রে কীটনাশক একসময় শেষ হয়ে যাবে। মশারীটি যদি তখনও ভাল অবস্থায় থাকে তবে আপনি নতুন কীটনাশক মিশ্রণ করে এতে লাগাতে পারেন, কিন্তু বিছানাটিতে যদি ছেঁড়া বা ফুটো থাকে তবে এটির পরিবর্তে একটি নতুন মশারী নেয়াই নিরাপদ। মশারীতে কীটনাশক পুনপ্রয়োগ করার সময় দস্তানা পড়ুন এবং আপনার দেহের উপর বা ভিতরে রাসায়নিক যাওয়া এড়ানোর নির্দেশনার দিকে ভালভাবে মনোযোগ দিন।

কীটনাশক মেশানো যে কোন মশারীর ক্ষেত্রে শিশুদেরকে এটি চুষতে বা চিবাতে দেবেন না এবং এগুলোকে নদীতে বা এমন জলে ধোবেন না যেখানে কীটনাশক মাছ, কীট, পশুপাখী, এবং ভাঁটার দিকে বাস করা মানুষের কোন ক্ষতি হয়।

NWTND mosq Page 20-2.png

ম্যালেরিয়ার মশা বেশীরভাগ সময়েই রাতের বেলা কামড়ায় তাই ম্যালেরিয়া এবং একই মশা দ্বারা সৃষ্ট অসুস্থ্যতা রোধ করার জন্য মশারী তৈরী করা বিশেষভাবে সাহায্যকারী। যে মশা ডেঙ্গু, পীত জ্বর, জিকা, এবং চিকুনগুনিয়া বহন করে সেগুলো দিনের বেলা কামড়ায়। ছোট বাচ্চাদের জন্য বা অন্যান্য যারা দিনের বেলায় ঘুমায় বা বিশ্রাম নিতে চায় তাদের ক্ষেত্রেও মশারী এই অসুস্থ্যতা রোধ করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও যারা ইতোমধ্যেই অসুস্থ্য মশারী তাদেরকে মশার কামড় খাওয়া থেকে রক্ষা করে অন্যান্যদের মধ্যে অসুস্থ্যতা ছড়ানো রোধ করবে।

মশা-তাড়ুয়া এবং কীটনাশক মশার কামড় রোধ করে

মশা-তাড়ুয়া হলো কিছু রাসায়নিক যেগুলো মশা পছন্দ করে না, তাই এরা দুরে থাকে। কীটনাশক হলো কিছু রাসায়নিক যেগুলো মেশানো পৃষ্ঠের উপর মশা বসলে তা মশাকে মেরে ফেলে, যেমন দেয়াল বা মশারী।

  • আপনার ত্বকের জন্য স্বাভাবিক তাড়ুয়া ব্যবহার করুন যেমন সিট্রোনেলা, নিম তেল, বা লেমনগ্রাসের বা ব্যাসিল পাতার নিসৃত রস। বা ডিইইটি, পিকারডিন (কেবিআর ৩০২৩, ইকারিডিন), আইআর৩৫৩৫, বা পিএমডি এবং লেবু ইউক্যালিপটাস যৌগের অন্যান্য তেলের মতো যে কোন একটি রাসায়নিক তাড়ুয়া ব্যবহার করুন। মশা-তাড়ুয়াগুলো শিশুদেরকে রক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উপকারী হতে পারে কিন্তু এর লেবেল পড়ে নিশ্চিত হোন যে এগুলো শিশুদের জন্য নিরাপদ। কতক্ষণ পর পর এগুলো পুনর্ব্যবহার করতে হবে তাও এই লেবেলে লেখা থাকবে, সাধারণতঃ কয়েক ঘণ্টা পর পর।
  • যেখানে জিকা আছে সেখানে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ হয়তো নারীদেরকে মশা-তাড়ুয়া প্রদান করতে পারে কারণ জিকা একটি নারীর গর্ভাবস্থার ক্ষতি করতে পারে
  • পারমেথ্রিন একটি রাসায়নিক দ্রব্য যা ত্বকে প্রয়োগ করা উচিত নয় কিন্তু মশা দুরে রাখতে মশারী, জামা-কাপড় বা জুতার উপর স্প্রে করা যায়। আপনার ত্বকে এই রাসায়নিক দ্রব্য যাতে লাগতে না পারে সেই জন্য জামার উপর এটি স্প্রে করে সেগুলোকে শুকাতে দেয়ার পর জামা গায়ে দিন। লেবেলে লেখা নির্দেশনা পালন করুন।
  • আপনি ভাল কোন মশা-তাড়ুয়া না পাওয়া পর্যন্ত মশার কয়েল ব্যবহার করতে পারেন। মশা তাড়াতে ধোঁয়া সৃষ্টি করতে মশার কয়েল ও অন্যান্য পদ্ধতি থেকে সৃষ্ট ধোঁয়া আপনার নিশ্বাসের ক্ষতি করতে পারে।

মশা মারতে কীটনাশক স্প্রে করা

একটি লোক ভিতরে কীটনাশক স্প্রে করছে

সরকার এবং অন্যান্য সংস্থা বছরের যে সময়টায় সব থেকে বেশী মশা হয় সেসময়টায় ভিতরের দেয়ালগুলোতে কীটনাশক স্প্রে করে মশা নিধন কার্যক্রম হাতে নিতে পারে। এটিকে বলা হয় আইআরএস বা আন্তগৃহ অবশিষ্ট স্প্রে করা। যে কোন ব্যক্তি কীটনাশক প্রয়োগ করতে চাইলে শ্বাসের মাধ্যমে বা মুখ বা ত্বকে স্পর্শের মাধ্যমে দেহের মধ্যে কীটনাশক যাওয়া রোধ করতে তার সুরক্ষার প্রয়োজন। ম্যালেরিয়া রোধ করতে একই এলাকায় সকল ঘরেই স্প্রে করা হলে এই ধরনের স্প্রে করা ভাল কাজ করে। কীটনাশকসহ সকল রাসায়নিক দ্রব্যের ক্ষেত্রে যেমন ঠিক তেমন এই রাসায়নিকগুলোও শিশুদের মুখ ও দেহে যাওয়া এড়িয়ে চলুন।


এই পাতাটি হালনাগাদ করা হয়েছে: ১৯ এপ্রিল ২০২৪