Hesperian Health Guides
ম্যালেরিয়া
হেসপেরিয়ান স্বাস্থ্যউইকি > নতুন যেখানে ডাক্তার নেই > ম্যালেরিয়া
বেশীরভাগ ক্ষেত্রে রাতে কামড়ায় এরকম মশার (নাম এ্যানোফিলিস) মাধ্যমে মানুষের মধ্যে স্থানান্তরিত হওয়া একটি পরজীবির (প্লাসমোডিয়াম বলা হয়) কারণে ম্যালেরিয়া হয়। সাধারণ ম্যালেরিয়ার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই (জটিলতাহীন ম্যালেরিয়া বলা হয়) জ্বর ও শীত লাগার চক্রগুলো অস্বস্তিকর হয় কিন্তু চিকিৎসা করলে এগুলো কয়েক দিনের মধ্যে চলে যায়। কিন্তু চিকিৎসা না করা হলে ম্যালেরিয়া দ্রুত মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। এটিকে বলা হয় গুরুতর ম্যালেরিয়া। ম্যালেরিয়া হয় এমন অঞ্চলগুলোতে মানুষের ব্যাখ্যাহীন জ্বর হলে রক্ত পরীক্ষার জন্য তাদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাওয়া উচিত। পরীক্ষায় যদি ম্যালেরিয়া পাওয়া যায়, বা যদি পরীক্ষা করার কোন ব্যবস্থা বিদ্যমান না থাকে কিন্তু স্বাস্থ্য কর্মীরা এটিকে ম্যালেরিয়া মনে করে তবে ততক্ষণাৎ ঔষধ দ্বারা এর চিকিৎসা শুরু করুন।
ভিন্ন ভিন্ন পরজীবির কারণে ফ্যালসিপেরাম, ভাইভাক্স, এবং অন্যান্য ম্যালেরিয়ার ধরন দেখা যায়। আপনি যে এলাকায় বাস করছেন সেখানে কোন ধরনের ম্যালেরিয়া বিদ্যমান এবং কোন ঔষধ সবথেকে ভাল কাজ করবে তা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ভাল করে জানে। ঔষধ ছাড়া ম্যালেরিয়া বার বার ফিরে আসবে কারণ পরজীবিগুলো মানুষের যকৃতে থেকে যায়। পরজীবিগুলোকে মেরে ফেলার মাধ্যমে ঔষধ ব্যক্তিকে সুস্থ্য হয়ে উঠতে সাহায্য করে।
ম্যালেরিয়া কোলের শিশু, ৫ বছরের নীচে শিশু, গর্ভবতী নারী, এবং এইচআইভিযুক্ত মানুষদের জন্য বিশেষভাবে বিপজ্জনক। যখন গর্ভধারণ বা এইচআইভি বা অন্য কোন অসুস্থ্যতা মানুষের দেহের পক্ষে সংক্রামণের বিরুদ্ধে লড়াই করা কঠিন করে তোলে, তখন ম্যালেরিয়া হওয়া বা গুরুতর ম্যালেরিয়া শুরু হবার সম্ভাবনা অনেক বেশী।
পরিচ্ছেদসমূহ
জটিলতাহীন ম্যালেরিয়া
ম্যালেরিয়ার সাধারণ উপসর্গ হলো জ্বর, যা আসে ও যায়, এবং প্রতিবারই শীত শীত লাগে। কখনো কখনো জ্বর নেমে যাওয়ার সময় ব্যক্তির ঘাম ঝরে। যদিও, ম্যালেরিয়ার অনেক ক্ষেত্রেই এই রীতি পালিত হয় না। অন্যান্য লক্ষণগুলো সচরাচর দেখা যায় কিন্তু তা সকলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না এবং এগুলো অন্যান্য অসুস্থ্যতার লক্ষণও হতে পারে।
জটিলতাহীন ম্যালেরিয়া
- জ্বরের মাত্রা মৃদু হতে পারে কিন্তু প্রায়শই উঁচু হয়, ৩৯° (১০২°ফা) বা তারও বেশী
- শীত শীত লাগে এবং ঘাম ঝরে
- মাথা ব্যথা এবং দেহে ব্যথা
- গা গুলায়, বমি হয়, ক্ষিদে থাকে না
- রক্ত স্বল্পতা থেকে ফ্যাকাশে হওয়া ও দুর্বলতা
- মৃদু কামলা (হালকা রঙের ব্যক্তির চোখের সাদা অংশে বা ত্বকে হলুদ হওয়া)
- বর্ধিত হওয়া প্লিহা (একজন স্বাস্থ্য কর্মী একজন ব্যক্তির পেট পরীক্ষা করে এটি অনুভব করতে পারে)
একজন ব্যক্তির ম্যালেরিয়া আছে কিনা রক্ত পরীক্ষা তা নিশ্চিত করে। কোন কোন ম্যালেরিয়ার পরীক্ষার জন্য একটি অনুবীক্ষণ যন্ত্রের প্রয়োজন হয় কিন্তু অনেক এলাকা ভিত্তিক স্বাস্থ্য কর্মী দ্রুত পরীক্ষার সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে যেটায় শুধুমাত্র এক ফোঁটা রক্ত ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। যেহেতু চিকিৎসা না করা ম্যালেরিয়া কয়েক বছরের মধ্যে বেশ কয়েকবার জ্বর ও শীত শীত লাগার সৃষ্টি করতে পারে তাই ব্যক্তিটিকে জিজ্ঞাসা করুন যে তার সাম্প্রতিক মাসগুলোতে একই রকমের লক্ষণ দেখা গিয়েছে কিনা।
জটিলতাহীন ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা
]রক্ত পরীক্ষায় নিশ্চিত হলে বা ম্যালেরিয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়ার আপনার ভাল কারণ থাকে এবং পরীক্ষা করার ব্যবস্থা না থাকে তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ম্যালেরিয়ার ঔষধ ব্যবহার করা শুরু করুন। পি ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়াযুক্ত এলাকায় চিকিৎসা ততক্ষণাৎ শুরু করা গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু মশা ম্যালেরিয়া ছড়ায় তাই একজন অসুস্থ্য ব্যক্তিকে চিকিৎসা করলে তা অন্যদেরকে সংক্রামিত হওয়া থেকে রক্ষা করে।
আপনার স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ম্যালেরিয়ার কোন ঔষধটি ব্যবহারের সুপারিশ করে তা জানুন। অনেক অঞ্চলেই ম্যালেরিয়া কোন কোন পুরাতন ঔষধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তুলেছে। তার মানে হলো, যে ঔষধগুলো একসময় ম্যালেরিয়া রোধ করা বা এর চিকিৎসা করায় কাজ করতো সেগুলো এখন আর কাজ করে না। যে ঔষধগুলো একটি অঞ্চলের ম্যালেরিয়া সারিয়ে তোলে সেটি হয়তো অন্য একটি জায়গায় বিদ্যমান ম্যালেরিয়া সারিয়ে তোলায় কাজ নাও করতে পারে।
ম্যালেরিয়াযুক্ত একজন ব্যক্তিকে বিশ্রাম নিতে হবে এবং পরিষ্কার জল, স্যুপ, এবং যদি জ্বর, বমি, বা ডাইরিয়া থাকে তবে জলপূর্ণতার পানীয়ও পান করতে হবে।
যে মহিলা তার সব ঔষধ সেবন করেছে সে ভাল হয়ে উঠেছে। | যে মহিলা তার সব ঔষধ শেষ করেনি সে এখনও অসুস্থ্য হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। | |
গুরুতর ম্যালেরিয়া
যদি জটিলতাহীন ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা করা না হয় বা যথেষ্ট তাড়াতাড়ি এর চিকিৎসা করা না হয় তবে গুরুতর ম্যালেরিয়া দেখা দিতে পারে। গুরুতর ম্যালেরিয়া দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে যদি 'প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম' (পি ফ্যালসিপেরাম) নামের পরজীবির কারণে ম্যালেরিয়া দেখা দেয়। গুরুতর ম্যালেরিয়াযুক্ত ব্যক্তির হাসপাতালে বা ক্লিনিকে উন্নত পরিচর্যার প্রয়োজন হবে। গুরুতর ম্যালেরিয়া ১ বা ২ দিনের মধ্যেই মৃত্যু ঘটাতে পারে, বিশেষ করে যদি তা মস্তিষ্কে ছড়িয়ে যায়, যে অবস্থাকে 'সেরিব্রাল ম্যালেরিয়া' বলা হয়।
গুরুতর ম্যালেরিয়ার বিপদ চিহ্ন
- এতোই দুর্বল যে বসতে ও দাঁড়াতে পারে না, সজাগও থাকতে পারে না।
- মানসিক বিভ্রান্তি, শরীরে প্রবল আক্ষেপ, বা জ্ঞান হারানো
- বারবার বমি হওয়া, জল বা বুকের দুধ পান করতে পারে না
- ঘন শ্বাস ওঠা বা শ্বাস নেয়ায় অসুবিধা
- নীচু রক্তচাপ বা অভিঘাতের অন্যান্য চিহ্ন (প্রাথমিক চিকিৎসা অধ্যায়ের পৃষ্ঠা ১১ দেখুন)।
- গাঢ় মূত্র, এবং যকৃতের কাজ না করা শুরু হওয়ায় কম পরিমাণে মূত্র
স্বাস্থ্যকর্মীরা নীচেরগুলোর জন্য রক্ত ও মূত্র পরীক্ষা করবে:
- রক্ত স্বল্পতা (রক্ত লৌহের পরিমাণ কম থাকা)
- মূত্রে হিমোগ্লোবিন
- রক্ত চিনির (গ্লুকোস) পরিমাণ কম
গুরুতর ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা
গুরুতর ম্যালেরিয়াযুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুদের ২৪ঘন্টা বা তার বেশী সময়ের জন্য শিরায় আর্টেস্যনেট দেয়া বা পেশীতে প্রবিষ্ট করার জন্য অগ্রসর প্রশিক্ষণযুক্ত স্বাস্থ্যকর্মীর প্রয়োজন। এই চিকিৎসা দিতে পারা হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকর্মী যদি কাছাকাছি না থাকে তবে আপনি হাসপাতালে যেতে যেতে আপনাকে সাহায্য করায় একজন স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মীর হয়তো আর্টেস্যনেট বা কুইনাইন প্রবিষ্ট করানোর প্রশিক্ষণ ও ঔষধ উভয়ই থাকতে পারে। যেখানে প্রবিষ্ট করানোর আর্টেস্যনেট পাওয়া না যায় সেখানে ৬ বছরের নীচে শিশুদের জন্য আর্টেস্যনেট ক্যাপসুল গুহ্যদ্বারের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। জরুরী চিকিৎসা ম্যালেরিয়া নিরাময় করে না; আপনার আরও ৩ দিন বা বেশী সময়ের জন্য বারতি ঔষধ নেবার প্রয়োজন হবে।
ম্যালেরিয়া রোধ করা
ম্যালেরিয়া রোধের জন্য কোন টীকা নেই। ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধ কখনও কখনও এটি রোধ করতে ব্যবহার করা হয় বিশেষভাবে মানুষ যখন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ভ্রমণ করে। রোধ করার মাত্রা হয়তো প্রাত্যহিক, সাপ্তাহিক, বা মাসিক হতে পারে। কোন কোন দেশে ম্যালেরিয়া রোধে গর্ভধারণকালীন শেষ ৬ মাসে (সালফাডক্সিন + পাইরিমেথামিন) ঔষধ ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ। যে সমস্ত দেশে শুধুমাত্র বর্ষাকালে ম্যালেরিয়া দেখা যায় সেখানে হয়তো কার্যক্রমগুলো প্রতি বছর মাত্র কয়েক মাস সময়ের জন্য শিশুদেরকে ম্যালেরিয়া রোধের ঔষধ দিতে পারে।
ম্যালেরিয়া রোধ করার সবথেকে ভাল উপায়গুলোর একটি হলো কীটনাশক-মেশানো মশারী ব্যবহার করে ঘুমানো। এই মশারীগুলোতে এক বা একাধিক কীটনাশক প্রয়োগ করা হয় যেগুলো তুলনামূলকভাবে নিরাপদ, বিশেষকরে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হবার সাথে তুলনা করলে। কিভাবে মশারী ম্যালেরিয়া এবং অন্যান্য মশাবাহিত অসুস্থ্যতা রোধ করেসেসম্পর্কে আরও জানুন।
বিনামূল্যে কীটনাশক-মেশানো মশারী বিতরণ করে আর ঘরের মধ্যে কীটনাশক ছিটানোর জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী ব্যবহার করে এমন ধরনের প্রচারণা ম্যালেরিয়া রোধ করতে পারে যদি এলাকার মধ্যে যথেষ্ট সংখ্যক পরিবার এই কর্মসূচীর সাথে নিজেদেরকে জড়িত করে। আপনি ম্যালেরিয়ার মশার বংশবৃদ্ধি হওয়া রোধ করতে পারেন বা এগুলোর ডিম ফোটা রোধ করতে পারেন। মশার কামড় এড়িয়ে চলা সবসময়েই এগুলো যে রোগ ছড়ায় সেগুলো রোধ করায় সাহায্য করবে]।
যেখানে লোকের রক্ত পরীক্ষা করনো ও ঔষধ কেনার সামর্থ নেই সেখানে ম্যালেরিয়া সবথেকে বেশী দেখা যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত একজন ব্যক্তির ম্যালেরিয়া থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত স্থানীয় মশার মাধ্যমে সংক্রামণটি অন্যান্যদের মধ্যে ছড়াতে পারে। ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ প্রচারণা সার্থক হতে হলে এগুলোকে দারিদ্র ও অন্যায্যতার মূল কারণগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে এবং সকলের জন্য চিকিৎসা সহজলভ্য করতে হবে।